সিমরান ছবিতে কঙ্গনা রনৌতবলিউডের ‘কুইন’ এলেন ‘সিমরান’ হয়ে। পরনে সাদা স্লিভলেস ফ্রক। মাথায় জুঁই ফুলের মালা জড়িয়ে চারদিক সুবাসিত করে এলেন বলিউডের অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত। ১৫ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ছবি সিমরান। শর্ত ছিল শুধু হবে সিমরান-এর কথা। কিন্তু এই আলাপচারিতায় উঠে এল কঙ্গনার ১২ বছরের ক্যারিয়ারের কিছু কথা কিছু ব্যথা। একদিন এই ক্যারিয়ারের জন্যই মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১ হাজার ৫০০ টাকা হাতে নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন তিনি। আজ নিজের আত্মসম্মানের জন্য সেই ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতেও ভয় পান না কঙ্গনা। সুন্দরী, আত্মবিশ্বাসী, স্পষ্টবাদী অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বললেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য
‘নেপোটিজম’ নিয়ে আপনি বলিউডের যাঁদের দিকে আঙুল তুলেছেন, তাঁরা এই বলিউডকে রীতিমতো শাসন করেন। আপনার মনে হয় না, এর ফলে আপনার ১২ বছরের ক্যারিয়ার বিপন্ন হতে পারে?
আমি খুব ছোট শহর থেকে মুম্বাইতে এসেছি শুধু নিজের পায়ে দাঁড়াব বলে। তখন ছিলাম কিশোরী। এই সময় সাধারণত সবাই ‘লাভ লেটার’ পায়। প্রেমে পড়ে। কিন্তু আমাকে করতে হয়েছে চূড়ান্ত সংঘর্ষ। অনেক অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করেছি। ভয়ে ভয়ে দিন কাটিয়েছি। কিন্তু আজ আমি জীবনে অনেকটাই সফল। কিশোরী বয়সে প্রতিবাদ করতে পারিনি। আজ ৩০ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে তা প্রতিবাদ করার সময় এসেছে। সত্যি বলতে আমি আজ কাউকে ভয় পাই না।
এত দিন এ বিষয়ে মুখ খোলেননি কেন?
বললাম না, তখন বয়স কম ছিল। আমি অতটা ‘ম্যাচিউরড’ ছিলাম না। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক পরিপক্ব আমি।
কয়েক দিন আগে আপনি বলিউডের তিন অভিনেতার নামে অভিযোগ জানিয়েছেন। ‘সিমরান’ মুক্তির আগেই এই অভিযোগ। অনেকের ধারণা, এসব আপনার আগামী ছবির জন্য প্রচারণার কৌশল।
(একটু ভেবে) ছবি আসবে যাবে। হিট হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে। কিন্তু আমি তো থাকব। আমি মনে করি, সম্মান একজন নারীর অলংকার। সম্মানের থেকে বড় কিছু নেই। এই সম্মানে যখন কেউ আঘাত করে, তখন প্রতিবাদ করা উচিত। আমার যা মনে হয়, আমি তা-ই করি। আমি নিজের মর্জির মালিক। অত ভেবেচিন্তে কিছু করি না। ছবি মুক্তির আগে, না ছবি মুক্তির পরে প্রতিবাদ করলাম, এসব নিয়ে ভাবতে চাই না। অভিনেত্রী হিসেবে বলিউডে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। আর কিছু হারানোর ভয় পাই না। ভয়ের ওপর আর জীবনটা কাটাতেও চাই না। নিজের স্বাধীনতাকে উপভোগ করতে চাই। মানালিতে সুন্দর একটা বাড়ি বানিয়েছি। ওখানেই নাহয় চলে যাব। (সশব্দে হেসে)।
বলিউডে এখন সবচেয়ে বেশি কথা হয় আপনাকে নিয়ে...
তা তো হবেই। কারণ, আমি আমার জায়গায় সফল। আমি নিজের কাজ অত্যন্ত নিপুণভাবে করছি। সফল ব্যক্তিকে নিয়েই সমালোচনা বেশি হয়। আর আমাকে শুরু থেকে অনেকে বলে এসেছে যে বলিউডে টিকে থাকতে হলে ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ থাকতে হয়। মান্ধাতার আমল থেকে বলিউডে এই নীতি চলে আসছে। আর আমার এখানেই প্রবল আপত্তি। আমার মনে হয়, যারা এই নীতি মেনে চলে এসেছে, তাদের সমাজের চোখে কোনো সম্মান নেই। সত্যি বলতে, মিথ্যাচারিতায় এই বলিউড ভরে গেছে। কেউ সত্যি কথা বলতেই চায় না। বিরিয়ানি খেলে বলে মটর পনির খেয়েছি। বুঝুন ঠেলা।
‘কুইন’-এর চূড়ান্ত সফলতার চাপ কি ‘সিমরান’-এর ক্ষেত্রে অনুভব করছেন?
না, সে রকম কিছু অনুভব ‘সিমরান’-এর ক্ষেত্রে করছি না, যা হওয়ার হবে।
‘রেঙ্গুন’-এর ক্ষেত্রে ছিল কি?
হ্যাঁ, রেঙ্গুন-এর সময় একটু চাপে ছিলাম। আমি জানতাম ছবিটা ফ্লপ হলে প্রচুর আঙুল আমার দিকে উঠবে। তা-ই হলো। তখন এই ধাক্কা সামলে নিয়েছি। ভয়টাকে জয় করে নিয়েছি। তাই হয়তো সিমরান-এর ক্ষেত্রে আর ভয় পাচ্ছি না।
শুনেছি, ‘রেঙ্গুন’ ছবির জন্য আপনি সাইফ আলী খান ও শহিদ কাপুরের থেকে বেশি পারিশ্রমিক চেয়েছিলেন?
শুধু নায়কেরাই বেশি পারিশ্রমিক পাবেন কেন? আমার মনে হয়, অভিনেত্রীরাও অভিনেতাদের থেকে বেশি পারিশ্রমিক পেতে পারেন। আমি সেই পথই দেখিয়েছি।
রিল লাইফ সিমরান-এর সঙ্গে রিয়েল লাইফ কঙ্গনার কী মিল?
বেশ কিছু মিল আছে। ‘সিমরান’-এর মতো আমিও স্বাধীনচেতা। জীবনটাকে নিজের রঙে রাঙাতে চাই। নিজের ইচ্ছামতো চলি।
ছবিতে সিমরান-এর চুরির অভ্যাস আছে। আপনি কখনো কিছু চুরি করেছেন?
হা হা হা, (জোরে হেসে) হ্যাঁ করেছি তো। ছোটবেলায় অল্পবিস্তর চুরি করেছি। আমার নানা বলত পকেট থেকে ১০ টাকা বের করতে। আর আমি ৫০ কিংবা ১০০ টাকা বের করে নিতাম। এ ছাড়া ছোটবেলায় হামেশাই কিছু না কিছু চুরি করতাম।
‘সিমরান’ ছবির শুটিংয়ের সময় আপনার নাকি বড় দুর্ঘটনা হয়েছিল?
হ্যাঁ, আমার গাড়িচালক হঠাৎ ‘ব্ল্যাক আউট’ হয়ে যায়। তখন দুর্ঘটনাটি ঘটে। আমি মাথায় চোট পেয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাই। স্ক্যান করাই। কিন্তু তারপরও মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা হতো। কিছু খেতে পারতাম না। আমি ট্রমায় চলে গিয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছিলেন বেশ কিছুদিন বিশ্রাম করতে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। আমেরিকায় শুটিং করা খুবই ব্যয়বহুল। তাই কাজ করে গেছি।
কোনো বিশেষ চরিত্রে কাজ করতে ইচ্ছে হয়?
আমার খুব ইচ্ছে সাংবাদিকের চরিত্রে কাজ করি। ওদের জীবন ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। সাংবাদিকদের সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে চাই।
মধুর ভান্ডারকরের ‘পেজ থ্রি’ হয়েছে তো...
হ্যাঁ, তা-ই তো। কঙ্কনা (সেন শর্মা) দারুণ কাজ করেছিল।
সাংবাদিক হয়ে কোনো অভিনেতাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন?
(সশব্দে হেসে) না না, সে রকম কিছু নেই।
আপনি তো ভীষণ স্পষ্টভাষী ও প্রতিবাদী। রাজনীতিতে আসতে চান না?
না না, একদমই ইচ্ছে নেই। রাজনীতিবিদদের পোশাক খুবই বিরক্তিকর। আমি ভীষণই ফ্যাশনপ্রিয়। কে ওই সব সুতির পোশাক পরবে! আমার মধ্যে শিল্পীসত্ত্বা খুবই গাঢ়। আমার ফ্ল্যাটের সব কোনায় শিল্পের ছোঁয়া পাবেন। শিল্পী মানুষ হয়ে রাজনীতিতে আসতে চাই না।
আপনাকে এখন বলিউডের অনেক তারকা রীতিমতো ভয় পান। আপনি কাকে ভয় পান?
হা হা, আমি সাপকে খুব ভয় পাই।
শেষ প্রশ্ন, আপনার আগামী ছবি ‘মণি কর্ণিকা’ সম্পর্কে কিছু বলুন?
মণি কর্ণিকা নিয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলতে চাই না। আবার তো দেখা হবে। তখনকার জন্য তোলা থাক।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন