না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন একুশ বছর হয়েছে। তবুও জনপ্রিয়তা কমেনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ’র।
অনেক ভক্তই সে সময়ে সালমান শাহ্কে চিঠি লিখতেন। খুব কম জনকেই তিনি উত্তর দিয়েছিলেন। সেরকম সৌভাগ্যবান পাঁচ বোনের সন্ধান পেয়েছে পরিবর্তন ডটকম। যাদেরকে অটোগ্রাফ ও ছবিসহ চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন সালমান শাহ্।
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তি পেয়েছে কিছুদিন আগে। পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন, দেশের মানুষের মুখে মুখে সালমান শাহ-মৌসুমীর নাম।
সে খবর শুনেছিলেন স্কুলে পড়ুয়া ইথেন ও মিথেন দুই বোন। তারা তখন অষ্টম ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়েন। বাবা-মাকে গিয়ে সিনেমা হলে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দেখার ইচ্ছে পোষণ করেন। তাদের অনুমতি নিয়েই সিনেমা হলে বাকি তিন বোন প্রোপেন, সোয়েন ও আপনকে নিয়ে ছবিটি দেখা।
বড় বোন জেসমিন আরা গণি ইথেন বলেন, “আমরা বিটিভিতে সালমান শাহ’র নাটক দেখেই তাকে পছন্দ করেছিলাম। সম্ভবত শমী কায়সারের সাথে ‘নয়ন’ নাটকটি প্রথম দেখেছিলাম। এরপর পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিনে তার খবর দেখলেই পড়তাম। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দেখার পর তাকে চিঠি লিখে আমাদের ভাল লাগার কথা জানানোর সিদ্ধান্ত নিই।”
কিভাবে চিঠি পৌঁছালেন? ইথেন বলেন, ‘আমাদের এক ফুফা চাকরি করতেন এফডিসিতে। উনি ছুটিতে বাড়িতে আসতেন। তখন তার কাছে জানতে পারি সালমান শাহর সাথে উনার পরিচয় আছে। তখন আমরা বড় তিন বোন ইথেন, মিথেন ও প্রোপেন মিলে চিঠি লিখে দিই।’
চিঠিতে কী লিখেছিলেন? বেশ লজ্জা পেলেন এ প্রশ্ন শুনে ইথেন। তারপরও বললেন, “তাকে আমাদের বোনদের ভাল লাগার কথা, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ অনেক ভাল লেগেছে এসব। এছাড়া বুঝেনই তো স্কুলে পড়তাম তখন। তাকে আমরা পছন্দ করে ফেলেছিলাম। সে পছন্দের কথাও তো লিখেছিলাম।”
চিঠি দেওয়া হয়েছে। দু-তিন মাস পার হয়ে গেছে চিঠির উত্তর নেই। বেশ হতাশা ভর করেছে তাদের মধ্যে। এমন যখন অবস্থা তখন ফুফা বাড়িতে আসলেন। সাথে সালমান শাহ্র নিজ হাতে লেখা চিঠি, অটোগ্রাফ ও ছবি। বোনদের উচ্ছ্বাস আর দেখে কে।
কী লিখেছেন সালমান শাহ্? পরিবর্তনের হাতে আসা সালমান শাহর চিঠিটি লেখা ছিল ইথেনকে উদ্দেশ্য করে, ‘তোমার মত একজন ভক্ত আমার আছে জেনে সত্যি খুব আনন্দ পাই। এবং মনে মনে খুব গর্ববোধ করি। তোমাদের মত অসংখ্য ভক্তদের ভালোবাসাই আমার কাজের প্রেরণা। তোমাদের এই ভালোবাসা আমৃত্যু যেন আমার সাথে থাকে— এই দোয়াই বিধাতার কাছে করি।’
চিঠিতে উত্তর দিতে দেরি হওয়া এবং সংক্ষেপে উত্তর দেওয়ায় সালমান শাহ্ বারবার তার কাছে ক্ষমা চান।
‘চিঠির উত্তর পেয়ে আমরা তো মহাখুশি। স্কুলের সকল বন্ধু-বান্ধবকে দেখাতাম। সকল স্যারদেরও দেখিয়েছি। সবার কাছে বেশ ইর্ষার পাত্রী হয়েছিলাম আমরা’— বললেন ইথেন।
ইথেন আরও বলেন, ‘সালমান শাহ্ আমাদেরকে চিঠির উত্তর দেবার মাস দুয়েক পরে আমরা তা হাতে পাই। কারণ সরাসরি আমাদের ফুফার হাতে উত্তর দিয়েছিলেন এবং তিনি ছুটিতে বাড়ি আসতে দেরি করে ফেলেছিলেন।’
সালমান শাহ্র মৃত্যুর খবর তারা বিটিভির খবরে প্রথম শুনেছিলেন। ইথেন ও মিথেন দুবোন চিৎকার করে কান্নাকাটি জুড়ে দেন বাড়িতে। সালমান শাহর অকাল মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বিশ্বাস তাদের।
ইথেন বলেন, ‘আমরা চাই সালমান শাহ্ হত্যার বিচার হোক। খুনি যত শক্তিশালী হোক না কেন সে যেন রেহাই না পায়।’
ইথেন জানালেন তাদের বোনদের সংগ্রহে সালমান শাহ্র এক হাজারের উপরে ভিউ কার্ড আছে। যেগুলো তারা স্কুলের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে কিনেছিলেন।
সালমান শাহ্ তাদেরকে চিঠি লেখার একটি ঠিকানা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন ভবিষ্যতে আরও চিঠি লেখার। ঠিকানাটি ছিল, ‘সালমান শাহ্, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। ঢাকা, বাংলাদেশ।’
কিন্তু হায় এ ঠিকানায় চিঠি গেলেও উত্তর দেবার মানুষটি যে নেই, এটাই বাস্তবতা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন