একটা ঘটনা বলি। রাজু (ছদ্মনাম) দীর্ঘদিন ধরেই অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাই ভিসা পেতে যে যা বলছেন তাই করছেন। লোকাল বাসের ‘কম খরচে ভিসা করা হয়’ সস্তা বিজ্ঞাপনকেও ছাড় দেয়নি সে। তো একদিন কোনো এক পরিচিতের কথায় ঢাকায় অভিবাসন আইনজীবী পরিচয়ধারী অফিসে যায় রাজু। একটা লম্বা সাক্ষাতের পর বেজায় খুশি সে। অস্ট্রেলিয়ার ভিসাতো ডাল-ভাত বলেছে তারা। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে সহজেই ছাত্র অথবা অভিবাসন ভিসায় যাওয়া যাচ্ছে, এ নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বেশ কিছু লেখার সূত্রও দেখিয়েছে তারা। তারপর আরও বেশ কয়েকদিন ‘ঠান্ডা না গরম খাবেন’ সাক্ষাতের পর রাজু বেশ মোটা অঙ্কের টাকা ভিসা ফিসহ অন্যান্য খরচ হিসেবে জমা দেয় তাদের কাছে। মাসখানিক পর রাজু জানতে পারে, তার যে ভিসায় আবেদন করার কথা, অস্ট্রেলিয়ার সরকার তা বেশ আগেই বন্ধ করে দিয়েছে। আর যাদের সে টাকা দিয়েছে, তাদেরও কোনো হদিস নেই। রাজুর মতো এমন ঘটনাসহ আরও অনেক প্রতারণার ঘটনা অহরহই ঘটতে দেখা যায়।

অভিবাসন আইনজীবীদের নিবন্ধন সংক্রান্ত সরকারি ওয়েবসাইট

অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর অন্যতম একটি অভিবাসন দেশ। তবে তার পাশাপাশি আইনের জটিলতাও দেশটিতে ব্যাপক। আর অভিবাসন আইনের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে খুবই সতর্ক দেশটির সরকার। তাই যেকোনো ভিসার আবেদনপত্র বেশ সুচারুভাবেই খতিয়ে দেখে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগ। সেই সঙ্গে প্রকৃতপক্ষেই যোগ্য অভিবাসী নির্বাচন ও অন্যান্য অনেক কারণেই কয়েক দিন পরপরই অভিবাসন আইনে নানা পরিবর্তন আনে দেশটির সরকার। ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া, যোগ্যতা, প্রমাণপত্র ও আসনসংখ্যা কিংবা সময়সীমায় এ ধরনের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। এসব কিছু বিবেচনায় রেখে বলা যায়, কঠোর ও সদা পরিবর্তিত আইনের কারণে অস্ট্রেলিয়ার ভিসাপ্রাপ্তি খুব সহজসাধ্য কোনো বিষয়ও নয়। আর এমতাবস্থায় ভিসা কেনার মতো কোনো সুযোগ তো নেই-ই। তাই রাজুর মতো যারা সস্তা বিজ্ঞাপন দেখে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কিনে নেওয়ার পিছু ছুটছেন, তাদের সময় ও অর্থ দুটোই আপনাকে বিপদাপন্ন করে তুলছে। বিশাল অঙ্কের এমন অর্থ খুইয়ে অনেকের পক্ষেই তা আর কোনো দিন পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না।

ভিসাসংক্রান্ত তথ্যের জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকার পরিচালিত ওয়েবসাইট

তাহলে কি করা যায়? যদি অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন সংক্রান্ত পরামর্শ নিতেই হয় তবে যিনি পরামর্শ দিচ্ছেন তার সম্পর্কে সহজেই জেনে নেওয়া আজকাল আর কঠিন কিছু না। ওয়েবসাইটে ক্লিক করলেই সমস্ত তথ্য হাজির হবে নিমেষেই। জেনে রাখা ভালো, শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়া সরকারের অভিবাসন অধিদপ্তরের (www.mara.gov.au) নিবন্ধিত ব্যক্তিই অভিবাসন সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে পারেন। সলিসিটার, ব্যারিস্টার ও মাইগ্রেশন এজেন্টসহ সকল আইনজীবী যারা এ অভিবাসন আইনে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া সরকারের অভিবাসন বিভাগের অধিদপ্তরে নিবন্ধিত হতে হবে।

মাইগ্রেশন এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে (www.mara.gov.au) নিবন্ধিত ব্যক্তিদের একটি হাল নাগাদ তালিকা থাকে। সে তালিকা যে কেউ তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করে দেখতে পারেন পরামর্শদাতা ব্যক্তিটি নিবন্ধিত কিনা। নিবন্ধিত নন, তিনি যেই হন—সলিসিটার, ব্যারিস্টার ও মাইগ্রেশন এজেন্টসহ যত ধরনের আইনজীবী আছেন, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তারা অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন সংক্রান্ত পরামর্শ দিলে তাদের বড় ধরনের জরিমানা ও শাস্তি হয়। সেটা আর্থিক জরিমানাসহ সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে। সুতরাং নিবন্ধিত না হলে তার থেকে পরামর্শ না নেওয়াই ভালো।

আর অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার যেকোনো ভিসা সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রের লেখা বা তথ্য পড়ার পরও তা অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে এটা এখন বলবৎ আছে কিনা। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন ও ভিসা সংক্রান্ত সকল তথ্য দেশটির সরকার কর্তৃক পরিচালিত ওয়েবসাইটে (www.border.gov.au) পাওয়া যায়। এ ছাড়া ভিসাসংক্রান্ত যেকোনো পরিবর্তনের তথ্য সময়মতো হালনাগাদও করা হয় এই ওয়েবসাইটটিতে। অথবা অস্ট্রেলিয়ার কোনো রাজ্যের নির্দিষ্ট ভিসা সংক্রান্ত তথ্য ওই রাজ্যের নির্ধারিত ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাবে। ইন্টারনেটে একটু খোঁজাখুঁজি করলেই অনেক তথ্যই পাওয়া যায়। ভিসা আবেদনসহ প্রায় সকল প্রক্রিয়া দেশটির অভিবাসন বিভাগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ইমি অ্যাকাউন্ট (immiaccount) খুলে এর মাধ্যমে অনলাইনেই সম্পন্ন করা যায়। তবে এমন অনেকেই রয়েছেন যাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের জ্ঞান খুবই সীমিত। সে ক্ষেত্রে কোনো ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ কারও সহায়তা নিতে পারেন। তবে এ কথাটা শুনতে একটু রূঢ় লাগবে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যার ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারণা খুব বেশি নেই, এমন বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ায় আসলে খুব বেশি ভালো করতে পারবেন বলে মনে হয় না।

কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী। ইমেইল