রাখী নাহিদ
আমরা সবকয়টা ভাই বোনই মাশ আল্লাহ প্রেমের মহাসাগর! চার ভাই বোনের মধ্যে তিন জনেরই পলায়ন পূর্বক বিবাহ! আমার আব্বুর লাখ লাখ টাকা বেচে গেছে আমাদের তিন ভাই বোনের কল্যানে তবে ইজ্জত নিয়ে টানাটানি লেগেছে বহুবার! সেই জন্য আব্বুর কাছে সারাজীবন অপরাধী হয়ে থাকব! ঘটনা সেটা না, ঘটনা হচ্ছে!! আমাদের সবচেয়ে ছোট ভাইয়ের বিবাহের কাহিনীটা বড়ই ইউনিক! বেস্ট ইন বাংলাদেশ!
বিয়ে সাধারনত কাজী অফিসে হয়! এদের বিয়ে হয়েছিল র্যাব এর অফিসে! কারন দুই পক্ষ থেকেই তাদেরকে বাত্তি দিয়ে খোজা হচ্ছিল! এবং খুজে পাবার পরে তাদের পুলিশী এস্কর্ট এ র্যাব এর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পুলিশী মধ্যস্থতায় অত্যন্ত মনরম পরিবেশে তাদের নিকাহ সম্পন্ন হয়!
বাড়ি থেকে চম্পট দেয়ার সময় তাদের পরনে ছিল ঘরে পরার সালয়ার কামিজ এবং জিন্স টি শার্ট! এটা দেখে র্যাব এর এক অফিসারের মায়া হয় এবং উনি আমার ভাইকে তার নিজের একটা পাঞ্জাবী পরতে দেন এবং তার স্ত্রীর একটা শাড়ী দেন আমার ভাইয়ের বউকে! ওহ, শুধু তাইনা, ইমিটেশনের একটা গয়নার সেট ও ধার দেন উনি! নতুন বউ বলে কথা,একটু গয়না না পরলে হয়? বিয়ে পড়ানো শেষ হলে র্যাবের অফিসার সেই কাপড় চোপর এবঙ ইমিটেশন এর গয়নার সেট করায় গন্ডায় ফেরত নেন ! হাও প্যাথেটিক!
তাদের বিয়ের আজকে দশ বছর পূর্ন হল! ঘুম থেকে উঠে নিউজ ফিডে ভাইয়ের বউ এর সুখি সুখি চেহারার এনিভারসারী পোস্ট দেখে আমার মনে উইশ করার বদলে প্রথম যে কথাটা আসল সেটা হল- কি যে পেইন দিসিলা রে বইন,বাপের নাম ভুইলা গেসিলাম প্রায় সেদিন!
মানব জীবনের অত্যন্ত রহস্যময় ব্যাপারের একটা হচ্ছে মানুষ অতীতের বেশিরভাগ প্যারাময় ঘটনা বলার সময় হাসে! সেগুল এক সময় মানুষকে আনন্দ দেয় বলেই হয়ত মানুষ অতীতের সব রাগ দুখ ভুলে যায়! এটাও আল্লাহর একটা নিয়ামত! ঘটনা সেটাও না! ঘটনা হচ্ছে, আমার ভাই এবং তার বউ জীবনে যদি একটা কাজের কাজ করে থাকে সেটা হল তারা একটা কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে! তার নাম ইরাবতী! বয়স সাড়ে তিন বছর!
আমার ধারনা, আল্লাহ তার মায়ের পেট থেকে তাকে জন্ম দিলেও বানানর সময় আমার কলিজা থেকে ছোট একটা পিস কেটে ওর শরীরে সেট করে দিয়েছেন! আই রিয়েলি মিন ইট! জীবনে যে নিজের পুত্রদের ছাড়াও আর কারো প্রতি এরকম কলিজার টান অনুভব হবে তা ধারনা করি নাই! ওকে দেখলে মনে হয় ভাড়া করা বাড়ি বেচে দিব দরকার পড়লে তাও তার কোন শখ আহ্লাদ অপূর্ন রাখব না ইনশা আল্লাহ।
ইরাবতীর বয়স সাড়ে তিন বছর হলেও তার রুহ সম্ভবত প্রাচীন রুহদের মধ্যে একটা! দুনিয়ার সব ব্যাপারে তার অগাধ জ্ঞান! সে শিক কাবাবের রেসিপি জানে, পনের বিশটা কবিতা জানে! শিশুতোষ ছড়া না,বড়দের কবিতা! আরন্যক বসুর মনে থাকবে কবিতা সে এক নিশ্বাসে বলে ফেলে! কলকাতার শিল্পীদের দাতভাঙ্গা শব্দঅলা বাংলাগান সে বিন্দাস গেয়ে ফেলে!
সমস্ত মানবীয় সম্পর্ক সম্বন্ধেও তার জ্ঞান অগাধ! সে মাঝে মাঝেই তার বাবা মাকে প্রেম ভালবাসা বিসয়ক জ্ঞান দিয়ে মাননীয় স্পিকার বানায়ে ফেলে! সেদিন প্রেম বিশয়ক এক বানী দেয়ার পরে তার মা তাকে জিজ্ঞেস করল- প্রেম করা মানে কি? সে উত্তর দিল- প্রেম করা মানে ধ্বংস হয়ে যাওয়া।
বাবা মা, ভাইবোন, পুত্র, পুত্রদের বাবা সবার সাথেই মোটামুটি অনেকদিনের সম্পরক আমার! তাই তাদের প্রতি ভালবাসা থাকলেও সেটার উপস্থিতি খুব সরব না! মানে অনেকদিন ধরে থাকতে থাকতে ওগুলা এখন নিস্তরঙ্গ! কিন্তু ইরাবতীর জন্য ভালবাসা উতলে উঠে, বুকের মধ্যে সারাক্ষন ভালবাসা বলকায়।
ফেসবুক থেকে নেওয়া
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন