‘আশির দশকেই আমি শিল্পী হিসেবে এসেছি। আগে ২০ বছর ধরে গান শিখেছি। হুমায়ূন আহমেদের সিনেমাতে গান করার পরে গানগুলো সর্বস্তরে ছড়িয়ে যায়। বাঁশি বাদক হিসেবে আমার যে জনপ্রিতা ছিল তার চেয়ে বেশি শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হই। তবে সংগীত বোদ্ধারা আমাকে জানতেন-চিনতেন অনেক আগে থেকেই। এটা ঠিক, গণহারে আমার পরিচিতি আসে গান গেয়েই।’
.
পরিবর্তন ডটকমকে এক সাক্ষাৎকারে বছরখানেক আগে কথাগুলো বলেছিলেন বারী সিদ্দিকী। এ শিল্পী প্রসঙ্গে ঘুরে ফিরে আসে হুমায়ূন আহমেদের কথা।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি। হুমায়ূন আহমেদ হাসন রাজার গান নিয়ে কাজ করছিলেন। একদিন সাসটেইন স্টুডিওতে রেকর্ডিংয়ের সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। ওইদিন বংশীবাদক হিসেবে ছিলেন বারী সিদ্দিকী। বিদ্যুৎ চলে গেলে সহশিল্পীরা বারী সিদ্দিকীকে গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। পরপর কয়েকটি বিচ্ছেদ গান গেয়েছিলেন তিনি। গান শুনে মুগ্ধ হন হুমায়ূন আহমেদ।
তারপর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে আমন্ত্রণ জানানো হয় তাকে। বারী সিদ্দিকীকে দু-একটা বিচ্ছেদ গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। সেই রাতে ধানমন্ডিতে হুমায়ূন আহমেদের বাসায় বসার ঘরে ৩৫টা গান গেয়েছিলেন তিনি।
১৯৯৫ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন তিনি।
এর চার বছর পর হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিটি মুক্তি পায়। ওই ছবিতে বারী সিদ্দিকী ছয়টি গানে কণ্ঠ দেন। গানগুলো হলো— শুয়াচান পাখি, পুবালি বাতাসে, আমার গায়ে যত দুঃখ সয়, ওলো ভাবিজান নাও বাওয়া, কেহ গরিব অর্থের জন্যে ও মানুষ ধরো মানুষ ভজো। এরপর আরো সিনেমায় প্লেব্যাক করেন বারী সিদ্দিকী। নিয়মিত বিরতিতে প্রকাশ হয় অ্যালবাম।
হুমায়ূনের সঙ্গে পরিচয় ও গায়ক হয়ে উঠা প্রসঙ্গে তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, কিংবদিন্ত লেখকের জোরাজুরিতে গায়ক হয়ে উঠেছেন।
তার ভাষ্যে, “১৯৯৫ সালের দিকে হুমায়ূন সাহেবের একটি অনুষ্ঠানে সরাসরি গান করেছিলাম। সেটা উনার খুব মনে ধরেছিল। সেজন্য বারবার বলছিলেন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে আমাকে গাইতে হবে। আমি না করছিলাম। একপর্যায়ে তিনি বলে ওঠলেন— আপনি গান না গাইলে সব রেকর্ড আমি বাতিল করে দেব। বাধ্য হয়েই গাইলাম। সেখানেই আমার প্রথম গানের রেকর্ড হয়। বাকিটুকু ইতিহাস।”
হুমায়ূন আহমেদ প্রসঙ্গে আরো বলেন, “হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন দারুণ একজন সমালোচক। এবং তার সবচেয়ে বড় একটি গুণ ছিলো নিজের কাজগুলোকে তিনি অন্যের কাজের মতোই সমালোচনা করতে পারতেন। সাধারণত, কেউ নিজের কাজের খুঁত ধরতে পারেন না। তিনি পারতেন। কোনো একটা গান লেখার সময় সেটা বারবার পরিবর্তন করতেন যতোক্ষণ নিজের মনের মতো না হয়েছে। গান হয়তো রেকর্ড করা শেষ। একদিন পর হঠাৎ এসে তিনি বলতেন, ‘এই জায়গাটায় একটু চেঞ্জ করে দেন।’ এজন্যই তার কাজগুলো এতো নিখুঁত হতো।”
হুমায়ূনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে বরাবরই টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রচার করত বারী সিদ্দিকীর গান। সর্বশেষ জন্মবার্ষিকীতেও অসুস্থ শরীরে তিনি হাজির হয়েছিলেন গান গাইতে।
বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোণায় জন্মগ্রহণ করেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন