মিজানুর রহমান আরিয়ান। টিভি নাটকের নির্মাতা হিসেবে অর্ধযুগ পার করেছেন। পর্দার অন্তরালে কাজ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আলোচনায় আসেন বিদায়ী বছরে। তার নাটক বড় ছেলে দেশের, প্রবাসের লাখো-কোটি বাঙালির মন জয় করে নেয়। ছোটপর্দার পর ওয়েবেও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইউটিউবে বড় ছেলের দর্শকসংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এই সাফল্য নিয়ে ঢাকাটাইমস আলাপ করেছে আরিয়ানের সঙ্গে। কথা বলেছে হালের কাজ নিয়েও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সৈয়দ ঋয়াদ
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই পুরোদস্তুর নির্মাতা হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। সরাসরি নির্মাণে কেন?
লেখালেখির ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। ইচ্ছে ছিল আমি বুয়েটে পড়ব। শারীরিক অসুস্থতার কারণে একটি সাবজেক্ট গ্রেড কম আসে, ফলে আমার আর বুয়েটে পড়া হয়নি। সেখান থেকে আমার জেদ চাপলো আমি এমন কিছু করব যেন আমার কখনো রিগ্রেটফিল না হয়। যেহেতু লিখতে পারি, তাই নিজের লেখাগুলোকে চিত্রায়িত করাটাই বেস্ট মনে করেছি। ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েও তেমন কিছু বন্ধুও জুটে যায়। পড়াশোনার খুব একটা চাপ থাকুক সেটা আমি ভার্সিটি লাইফে চাইনি।
আপনার প্রথম পরিচালনা তো যৌথভাবে ছিল।
‘এই ছেলে’ নামে নাটকের কথা আমি বলতে চাই না। আমি নিজে শুরু করি ‘তুমি, আমি, সে’ নাটক দিয়ে। আরেফিন শুভ, অর্ষা, ইশানা ও নিরব ছিল সেই নাটকে। আরিফিন শুভ ভাইয়ের টিভিতে শেষ যে কাজটা করেছে সম্ভবত এটা তার শেষ কাজের আগের কাজ হবে। তখন তার ক্যারিয়ারে খুব ভালো সময় যাচ্ছিল। তারপরই কিন্তু তিনি ফিল্মে কাজ শুরু করেন। সে সময়ে ‘তুমি আমি সে’ এই নাটকটি বেশ হিট করে।
বিদায়ী বছর শুধু নয়, গত কয়েক বছরের হিসেবেও সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক ‘বড় ছেলে’। সালতামামিতে উঠেও এসেছে তা। এই সাফল্য কতটা উপভোগ করছেন?
হ্যাঁ, এটা আসলেই আমার টিমের জন্য আনন্দের। আমার নিজের জন্যও আনন্দের। প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ ভিউ হয়েছে এখন পর্যন্ত। এই বিষয়ে আমাকে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে সেটা হলো আমি কি ভেবেছিলাম এটা এত হিট করবে? তার আগে বলে নেই বড় ছেলে আমার সেরা কাজ নয়। গত দুই-তিন বছরে ১০টা আলোচিত কাজের মধ্যে অন্তত আমার দুই একটা কাজ জায়গা করে নিয়েছে। বড় ছেলে তার ব্যতিক্রম নয়।
হিট হওয়ার বিষয়টি কী আগেই অনুমান করতে পেরেছিলেন?
ঈদের সময় অপূর্ব ভাইয়া আমাকে ফোন করে বলেন এবার আমাদের কোন নাটকটা হিট হতে পারে, ‘ব্যাচ টোয়েন্টি সেভেন’? আমি তখন তৎক্ষণাৎ বললাম, না ‘বড় ছেলে’ এক নম্বরে থাকবে আর ব্যাচ টোয়েন্টি সেভেন দুই। আর বড় ছেলেকে সেদিন এগিয়ে রাখার একটা কারণ ছিল। শেষ যে সিকুয়েন্সটা ভাইরাল হলো, মেহজাবিন যেই দৃশ্যে গিফটগুলো অপূর্বকে দিল, সেই সিকুয়েন্সটার কথা বলছি। এই সিকুয়েন্স শেষ হওয়ার পর কাট বলতে হয়নি সিকুয়েন্স শেষ হওয়ার পর সবাই হাততালি দিতে থাকল। কলাকুশলীসহ যারা রাস্তায় শুটিং দেখেছে সবার চোখেই কান্না চলে এসেছে। তখন মনে হয়েছে এটা ভালো কিছু হয়েছে।
নিশ্চয়ই প্রত্যাশার বাইরেও অনেকের অভিনন্দন পেয়েছেন।
অনেকে ফোন করেছেন। বিশেষ করে ফারুকী ভাই (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী) থেকে শুরু করে সবাই ফোন করে ধন্যবাদ দিয়েছেন। তবে একজনের ফোন আমাকে বেশি অবাক করেছে। তিনি মিশা সওদাগর। সিনেমায় যেই মানুষটাকে অগ্নিমূর্তি ধারণ করতে দেখা যায়, সেই মানুষটা ফোন করে যথেষ্ট আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন। আমি ভাবতেও পারিনি তিনি এই নাটক দেখে এতটা ইমোশনাল হয়ে যাবেন। এটা আমার কাছে বড় সারপ্রাইজ।
প্রথম বিগ বাজেটের নাটক করেন ‘ট্রাম্পকার্ড। পরে এর সিকুয়ালও করেন। ব্যাচ টোয়েন্টি সেভেন, ব্যাচ টোয়েন্টি সেভেন লাস্ট পেজ। আপনার প্রতিটি নাটকই কিন্তু ব্যয়বহুল।
আমি এখন বাজেট ভালো পাচ্ছি। যে কাজটার জন্য যতটুকু বাজেট দরকার আমি সেটুকু ছাড়া কাজটা কখনো করিনি। প্রথম দিকের অনেক কাজে নিজ থেকে টাকা দিয়ে হলেও কাজটা করেছি। এখন অনেক কাজে সবচেয়ে বেশি বাজেটও পাচ্ছি। প্রথম প্রথম এত বাজেট পেতাম না। হয়তো বাজেটের চেয়ে লাখখানেক টাকা বেশি গেলেও আমি কাজটা করে ফেলেছি। তুমি নিজেও জানো আমি ভার্সিটির সেমিস্টার ড্রপ দিয়েছি। কারণ সেমিস্টার ফি নাটকের কাজে খরচ করে ফেলেছি। সেই সময়টাতে নিজের ওপর দিয়ে গেছে সব।
শুনেছি নতুন বছরে চমক নিয়ে আসছেন?
চমক কি না জানি না আমি দুটো বড় কাজের পরিকল্পনা করে রেখেছি। একটি হচ্ছে ‘সংসার’ অন্যটি ‘প্রবাসী’। সংসার নিয়ে যেটা হবে সেটা আমার চোখে আমি একটি আদর্শ কাপলকে কিভাবে কল্পনা করি, দর্শকের ভাবনার জয়গাটাও সেখানে থাকবে। ‘সংসার’ তৈরি করবো ভ্যালেন্টাইনকে সামনে রেখেই। আর প্রবাসীদের নিয়ে যে কাজটা করব সেটাও মধ্যবিত্তের টানাপড়েন যেখানে একজন ছেলের আয়ে তার পরিবার চলে না। তাই জীবিকা নির্বাহের জন্য তাকে বিদেশ বিভূঁইয়ে পাড়ি দিতে হয়। সে পরিবারে নানা রকম সংকটে পরিবারের পাশে থাকতে পারে না এটাই গল্প। এমনকি নিজের মায়ের মৃত্যুর সংবাদেও সে আসতে পারে না। এগুলোর পরিকল্পনা চলছে।
এনটিভিতে আপনার প্রথম ধারাবাহিক যাচ্ছে।
গল্পগুলো আমাদের নামে একটি ধারাবাহিক শুরু করেছি এনটিভির জন্য। আমার প্রথম ধারাবাহিক এটা। আমি ঘোষণা করেছি এটা যদি ভালো না হয় আমি আর কখনো সিরিয়াল বানাব না। আমার সঙ্গে যারা প্রথম দিকে কাজ করেছে তুমিসহ সবাই এই বিষয়গুলো জানে। আমি দর্শকের নির্মাতা। আমি শুধু টাকার জন্য কাজ করব না। টাকা অনেকভাবেই আয় করা যায়। টাকার প্রয়োজনও আছে, তবে সেটা ভালো কাজের মধ্য দিয়েও সম্ভব।
আরিয়ান হচ্ছে ‘ডিরেক্টর অব রোমান্স’ এই যে একটা নির্দিষ্ট ট্যাগ দিয়ে দিচ্ছে দর্শক-ভক্তরা, এতে নির্দিষ্ট একটি গণ্ডিতে আবদ্ধ হওয়ার বিষয় তো থেকে যায়।
এটা আমি অস্বীকার করছি না। এর বাইরে খুব একটা কাজ করি না। আমার কাছে মনে হয়েছে, মানুষের জীবনটা আসলে সম্পর্ককেন্দ্রিক। এর মানে কিন্তু এই নয় যে, বিষয়টি একটি গ-ির মধ্যে কিন্তু সীমাবদ্ধ নয়, এর ব্যাপ্তি অনেক। আমরা কেউ এর বাইরে নই। আর দর্শকরা আমাকে অনেক ভালোবাসে। এটা আপনি ইউটিউব আর ফেসবুক দেখলে সহজেই অনুমান করতে পারবেন।
আমরা যখন একসঙ্গে কাজ করেছি তখনো আপনার লক্ষ ছিল ফিল্ম বানানোর। সেটা কত দূর?
ফিল্ম আমার হাতে অনেক আগে থেকেই আছে। কিন্তু আমি আমার দর্শককে কোন গল্পটা বলব? এটা আমার কাছে চিন্তার বিষয় ছিল। আর তার চেয়ে বড় ব্যাপার আমার সময়ের প্রয়োজন ছিল। এখন সব দিক থেকেই রেডি, চলতি বছরের যেকোনো সময়ই ফিল্মের ঘোষণা আসতে পারে। তবে সেটা এ বছরই আসছে এটা নিশ্চিত। আমার গল্পটা ফিক্সড হয়েছে। ফিল্মের যে প্রিপারেশন দরকার সেটা অলমোস্ট হয়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করি ফিল্ম ভালো কিছুই হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন