কোকিলকণ্ঠী শিল্পী বেবী নাজনীন। গানে গানে একজীবন পার করে দিলেন। নতুন গান, স্টেজ শো ও নতুন অ্যালবাম নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বললেন পরিবর্তন ডটকমের সঙ্গে...
অনেকদিন পর সিনেমার গান করলেন...
গান নিয়েই আছি। স্টেজ শো, দেশের বাইরের অনুষ্ঠান। কিন্তু নতুন গান থেকে লম্বা সময় দূরে ছিলাম। ‘সুপারহিরো’ ছবির জন্য গান করলাম। এতে আমার সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছে ইমরান। প্রথমবার আমি তার সঙ্গে প্লেব্যাক করলাম। গানটির কথা লিখেছেন কবির বকুল, সুর ও সংগীত আলি আকরাম শুভর। গানের কথাগুলো সুন্দর-দেখেছো এতদিন প্রেমেরই ট্রেলার, দেখোনি রোমান্টিক লাভি লাভি পিকচার, দেখে ভালোবাসতে চাইবে খুবই-এমন একটি গান। রেকর্ডিং হয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় পর কোনো চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিলাম। আমার মনে হয়, গানটি সবার ভালো লাগবে।
এখন কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
কিছুদিন হলো দেশে ফিরেছি। ফিরেই গানে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমার ৫১তম একক অ্যালবামের কাজ চলছে। স্টেজ শো করছি। চলচ্চিত্রে গান গাইলাম। আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে গাওয়ার কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে বেশ উপভোগ করছি এই ব্যস্ততাটাকে। ভালো কিছু গান শ্রোতাদের উপহার দিতে পারবো বলে আশা করছি।
আপনি তো কবিতা লেখেন, গানও লেখেন...
কবিতা শখের বশে লিখি। গানও তাই। আমার অনেক অ্যালবামে আমার নিজের লেখা এবং সুরারোপিত গান আছে। ভালোলাগে। কিছু হয় কিনা ভক্ত-শ্রোতারা বলতে পারবেন। কবিতা লিখতে ভালোবাসি। আমার তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে- ‘সে’, ‘ঠোঁটে ভালোবাসা’ এবং ‘প্রিয়মুখ’ শিরোনামে।
সংগীত জগতের অবস্থা তো আগের মতো নেই-আপনার ভাবনার কথা বলুন?
আমি মনে করি, অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে শিক্ষিত মানুষরা যত বেশি ততই উত্তরণ করবে। মিডিয়ার অস্থিরতার মূল কারণ হলো দেশ এখনও ক্রান্তিকাল থেকে উঠে আসেনি। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও খারাপ। কেবল টাকা থাকলেই ভালো কিছু করা সম্ভব হয় না। পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন আমাদের পুরো সিস্টেমকে পরিবর্তন করা। আমি চাই, আমার ভক্তরা যেন ভালো গান শোনেন এবং ভালো গানের পরিবেশ সৃষ্টি করেন। প্রযুক্তির কারণে মানুষের ধ্যান-ধারণা অনেক পাল্টা গেছে তো, আমাদের সংগীতাঙ্গনেও এর ছাপ পড়েছে। যে অ্যালবামটি করছি, সিডির পাশাপাশি ওয়েবসাইটে এবং মুঠোফোনে প্রকাশে আগ্রহী হয়েছি। এর মাধ্যমে শ্রোতারা আমার কণ্ঠের ভিন্ন ধারার কিছু গান শুনতে পাবেন।
আপনি অডিও মাধ্যমে গান করা এবং মঞ্চকে বেশি গুরুত্ব দেন, কেন?
এই দুই মাধ্যমই একজন শিল্পীর শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা অর্জনের প্রকৃত স্থান। সেটা কী রকম? টেকনোলোজির যুগে নানা টেকনিক উপজীব্য করে অডিও মাধ্যমে সফল হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু সেই তাদেরকে যখন মঞ্চে সরাসরি গাইতে দেখা যায় তখন আর মেলানো যায় না। কারণ প্রযুক্তির উপর অধিক নির্ভরশীলতা। প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো গানটি সেই শিল্পী যখন মঞ্চে গাইতে আসেন, অবস্থানটা পরিষ্কার হয়ে যায়। মঞ্চে সরাসরি টেকনিক ব্যবহারের তেমন সুযোগ থাকে না। টেকনোলোজির সুবিধাগুলো অবশ্যই ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু তা শিল্পীর স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে নয়। এতে শিল্পীজীবনের স্থায়িত্ব তৈরি করা কঠিন হয়ে ওঠে। একজন গুণী শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা অর্জনে নিরন্তর সাধনার কোনো বিকল্প নেই। আমি এখনও সাধনা করি। গানের মাধ্যমে আমি বিশ্বের বহু দেশে আজও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি। একটি বা দুটি গান দিয়ে তা করা যায় না।
নতুন শিল্পীদের গান শোনেন-অনুভূতি কেমন?
এখন যারা কাজ করছেন, তারা সুন্দর সুন্দর কাজ করছেন। এই প্রজন্মের শিল্পীদের গান নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। অনেক ভালো ভালো কাজ করছেন। তবে একটা জিনিস আমি বলব, একজন শিল্পীকে একটু সময় নিয়ে কাজ করতে হবে। ভালো শিল্পী হতে চাইলে তাকে গানের সাধনায় লেগে থাকতে হবে। চর্চার কোনো বিকল্প নেই।
মানুষের ভালোবাসা কেমন উপভোগ করেন?
মানুষের ভালোবাসা আমার আশীর্বাদ। কারণ ভক্তদের জন্যই তো আজকের এই বেবী নাজনীন। আমি একা কিছু নই। আমি তো প্রায়ই বলি-আমার ভক্তরা যতদিন থাকবে আমিও ততদিন বেঁচে থাকব। আমার ভক্তরা না থাকলে আমি থাকব না। আমার নিজের এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবেসে ‘উত্তর বঙ্গের দোয়েল’ উপাধি দিয়েছে। আমি খুবই খুশি। ভক্তদের ভালোবাসা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জন্য আমার অনেক শুভকামনা ও আশীর্বাদ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন