ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাকের আজ জন্মদিন। বেঁচে থাকলে এবার তিনি ৭৬ বছরে পা রাখতেন। তার জন্মদিনের শুভেচ্ছায় ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তাকে ঘিরে এফডিসিসহ নানা সংগঠন ও রেডিও-টিভিতে নেয়া হয়েছে বর্ণিল আয়োজন।
বাংলা সিনেমার প্রয়াত এই দিকপালের জন্মবার্ষিকীতে দেখে নেয়া যাক তার জীবনীর এক ঝলক-
রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায়। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় সরস্বতী পূজা চলাকালীন মঞ্চনাটকে অভিনয়ের জন্য তার গেম টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে বেছে নেন নায়ক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চরিত্রে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা নাটক বিদ্রোহীতে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নায়করাজের অভিনয়ে সম্পৃক্ততা।
তিনি ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাড়ি জমান। প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাগড় লেন চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক।
পরবর্তীতে কার বউ, ডাক বাবু, আখেরী স্টেশনসহ আরও বেশকিছু ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করে ফেলেন। পরে বেহুলা চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন সদর্পে। তিনি প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র।
নায়করাজ রাজ্জাক প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ‘কি যে করি’ ছবিতে অভিনয় করে। পাঁচবার তিনি জাতীয় সম্মাননা পান। ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার পেয়েছেন অসংখ্যবার।
স্ত্রী খাইরুন্নেছাকে ভালোবেসে লক্ষ্মী বলে ডাকতেন। তার তিন পুত্র ও দুই কন্যা। তারা হলেন বাপ্পারাজ (রেজাউল করিম), নাসরিন পাশা শম্পা, রওশন হোসেন বাপ্পি, আফরিন আলম ময়না, খালিদ হোসেইন সম্রাট। দুই পুত্র বাপ্পারাজ ও সম্রাটও চলচ্চিত্র অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত।
পুরো নাম : আবদুর রাজ্জাক।
বাবা : আকবর হোসেন।
মাতা : নেসারুন্নেসা।
অভিনয়ে যাকে গুরু মানেন: পীযুষ বোস।
অভিনয়ে পারিবারিক সমর্থন : মেজ ভাই আবদুল গফুর।
চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততা : আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে উজালা চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হিসেবে।
নায়ক হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্র : জহির রায়হানের ‘বেহুলা’।
প্রথম নায়িকা : কোহিনূর আক্তার সুচন্দা।
জুটি হিসেবে জনপ্রিয়তা : কবরীর সঙ্গে। প্রথম চলচ্চিত্র সুভাষ দত্তের ‘আবির্ভাব’।
নায়ক হিসেবে অভিনয় : ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। নায়ক হিসেবে শেষ চলচ্চিত্র `মালামতি`। বিপরীতে নূতন।
চরিত্রাভিনেতা হিসেবে অভিনয় : ১৯৯৫ সাল থেকে।
প্রথম প্রযোজিত চলচ্চিত্র : রংবাজ (রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন্স), পরিচালক জহিরুল হক। বিপরীতে কবরী।
প্রযোজনায় বিরতি : ২০০০ সালে ‘মরণ নিয়ে খেলা’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণের পর ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে।
প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র : ‘অনন্ত প্রেম’ (১৯৭৭), বিপরীতে ববিতা।
প্রযোজনায় ফিরে আসা : ২০০৮ সালে ‘আমি বাঁচতে চাই’। নায়ক হিসেবে ছোট ছেলে সম্রাটের অভিষেক।
সর্বশেষ পরিচালিত চলচ্চিত্র : ‘আয়না কাহিনী’ (২০১৪)।
সর্বশেষ অভিনীত চলচ্চিত্র (এখন পর্যন্ত) : বাপ্পারাজ পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কার্তুজ’।
নায়ক হিসেবে যাদের বিপরীতে কাজ করেছেন : সুচন্দা, কবরী, শবনম, শাবানা, নাসিমা খান, সুজাতা, ববিতা, কবিতা, নূতন, অঞ্জনা, কাজরীসহ আরও অনেকে।
জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি : বাংলাদেশের মানুষের অপরিসীম ভালোবাসা ও বন্ধু সাংবাদিক প্রয়াত আহমদ জামান চৌধুরীর লেখনীর মধ্যদিয়ে নায়করাজ উপাধি অর্জন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন