ভ্রমণে যাওয়ার সময় আমরা কোথায় যাবো, কী পোশাক পরবো, কয়দিন থাকবো আবার কবে ফেরত আসবো এই ধরনের চিন্তাই বেশি করে থাকি। কিন্তু এতো সবের মাঝে অনেক জরুরি কিছুও ভুলে যাই। যেমন আপনার বাড়ির পোষা প্রাণীটির কথা। আবার হয়তো বা আপনার শখের বাগানের কথা। আর যখন এদের কথা মনে পড়ে তখন অনেক সময় ভ্রমণের চিন্তাই মাথা থেকে বাদ দিয়ে দিতে হয়।
যদি আপনার যৌথ পরিবার হয় তাহলে তো আপনার কপাল ভালো। এদের নিয়ে কোনো চিন্তাই করতে হবে না। কিন্তু যদি ছোট পরিবার বা বাড়িতে থাকার মতো কেউ না থাকে তাহলে তো বিপত্তি! অনেকেই আছেন যে ভ্রমণে যাওয়ার সময় তার শখের প্রাণীটিকে সাথে নিয়ে যান। তবে সব প্রাণী বা সব কিছুর ক্ষেত্রে তো এটা প্রযোজ্য নয়। তাই আসুন আজ কিছু উপায় জেনে নিন যে আপনি ভ্রমণে গেলে আপনার প্রাণীটির কি করবেন।
কুকুর ও বিড়াল: আপনার বাড়িতে থাকা পোষা প্রাণীটি যদি কুকুর অথবা বিড়াল হয় তাহলে তাদেরকে আলাদা প্যাকেটজাত খাবারে অভ্যস্ত করে তুলুন। প্যাকেটজাত খাবারগুলো শুকনা থাকে। এতে করে খাবার পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
তবে এদের খাবার ডাস্ট হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে চাইলে একটু বুদ্ধি খাটাতে হবে। বোতল কেটে এবং সেটাতে পুশিং সিস্টেম করে অনেক খাবার একসঙ্গে দিলেও তা ডাস্ট হয়ে যায় না। আর এটি বানানোর বিভিন্ন পদ্ধতি ইউটিউব ঘাটলেই পেয়ে যাবেন।
টাচ ডিটেক্ট মেশিন: এখন অবশ্য এক ধরনের মেশিন বেরিয়েছে, যেটি আপনার পোষা প্রাণীর স্পর্শ ডিটেক্ট করতে পারে এবং ওই মেশিনে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে তা খাবার দিতে থাকে। এর সুবিধা হল আপনার প্রাণীটি ক্ষুধার্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেশিনটি স্পর্শ করলেই খাবার পেয়ে যাবে। বিভিন্ন অনলাইন শপিং সাইটে এই মেশিন এবং ইউটিউবে এর ব্যবহার পেয়ে যাবেন সহজেই।
পোষা পাখি: পাখির ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন। তবে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের জন্য নলের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে আপনার পোষা প্রাণীর একটু প্রশিক্ষণের দরকার আছে। তার জন্য অবশ্য একদিন সময় যথেষ্ট। আপনি আপনার পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে রেখে দিন আপনার পোষা প্রাণী ঠিকই আবিষ্কার করে ফেলবে যে কিভাবে খাবার এবং পানীয় পাওয়া যাবে।
অ্যাকুরিয়াম: মাছের অ্যাকুরিয়ামের জন্যও নলের মাধ্যমে খাবারের ব্যবস্থা করা যায়। তবে অক্সিজেন চালু রেখে যাবেন। মাছ মারা যেতে পারে। এখন অ্যাকুরিয়ামের জন্য কিছু কিছু গাছ ও খাবার পাওয়া যায় যা আপনি চাইলে পানিতেই রেখে যেতে পারবেন। তাহলে আপনি বাহির থেকে খাবার না দলেও চলবে।
খরগোশ: যারা খরগোশ পালেন তাদের জন্য একটু সমস্যা রয়েছে। এই প্রাণীটির জন্য আপাতত কোনো সমাধান নেই আমাদের কাছে। তাই ছুটি কাটাতে যাওয়ার আগে আপনার পছন্দের খরগোশটিকে রেখে যান অন্য কারো কাছে যে কি না তার দেখাশোনা করতে পারবে। অথবা নিজের সাথে করে নিয়ে যান ভ্রমণ সাথী হিসেবে।
গাছের জন্য: এমন অনেক গাছ আছে যেগুলোতে সপ্তাহে একদিন পানি দিতে হয়। যেমন ক্যাকটাস। এই ধরনের গাছ থাকলে আপনি নিশ্চিন্তে তা রেখে ছুটি কাটাতে যেতে পারেন। কিন্তু যে গাছগুলোতে নিয়মিত পানি দিতে হয় সেগুলোর কি করবেন? জলপোসের ব্যবস্থা করতে পারেন। গাছের টবের নিচে আরেকটি পাত্র যেটা ভর্তি পানি থাকবে। অথবা জলধারার ব্যবস্থা করে রেখে যেতে পারেন।
একটি মাটির পাতিল নিবেন যেটার নিচে একদম মাঝ বরাবর খুবই ছোট একটা ছিদ্র থাকবে। ছিদ্রটি এতোটাই ছোট হতে হবে যেন এক ফোঁটার পরে আরেক ফোটা পানি পড়তে অনেক খানি সময় লাগে। এতে করে গাছের গোড়া পচবে না বা গাছ শুকিয়ে যাবে না এবং আপনিও নিশ্চিন্তে ঈদের ছুটি কাটাতে পারবেন।
তবে পোষা প্রাণীর ক্ষেত্রে আরো একটি কথা বলতে চাই, ঢাকাতে এখন এমন অনেকে আছেন যারা অল্প সময়ের জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে পোষা প্রাণীদের দেখাশোনা করেন। একেক ধরনের প্রাণীর ক্ষেত্রে একেক ধরনের পারিশ্রমিক নির্ধারিত। আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করে আপনার শখের প্রাণীটিকে তাদের কাছে রেখে যেতে পারেন।
কিছু টিপস:
বাড়িতে অনেক সময় অনেক কাজের লোক থাকে যারা অনেক বিশ্বস্ত। আপনি তাদের কাছে আপনার গাছ ও প্রাণীর দায়িত্ব দিয়ে যেতে পারেন।
আপনার আপন পরিবারে কেউ যদি আপনার বাসার খুব কাছাকাছি থাকে তাহলে আপনি তাদেরকেও দায়িত্ব দিয়ে যেতে পারেন।
আপনার প্রাণীটিকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দিন যেন আপনি না থাকলেও সে বাড়িতে একা একা থাকতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন