আমাদের জনপ্রিয় অনেক অভিনয় শিল্পীকে যেমন ছোট পর্দায় দেখা যায়, একই সঙ্গে তাদের দেখা মেলে বড় পর্দাতেও। বিজ্ঞাপনও বাদ যায় না। এই কয়েক মাধ্যমের বদৌলতে শিল্পী কতটা জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেন? দুজনার উদাহরণ দিয়েই শুরু করা যাক। পূর্ণিমা ও আমিন খান। বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়কার জনপ্রিয় দুজন নায়ক- নায়িকা। ছোট পর্দায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সেই ব্যস্ততা কাটিয়ে আর বড় পর্দায় ফেরা হয়নি। বড় পর্দায় এখন তাদের সলো ক্যারিয়ার নেই বললেই চলে। এর বিপরীতেও কথা বলা যায়। চঞ্চল চৌধুরি, আনিসুর রহমান মিলন, মোশাররফ করিম, ফজলুর রহমান বাবু, জাহিদ হাসান, অপর্ণারা দু পর্দাতেই নিয়মিত অভিনয় করছেন। এরা সবাই ছোট পর্দায় জনপ্রিয়। বড় পর্দায় প্রশংসিত। কিন্তু ব্যবসাসফল নয়।বলতে গেলে পৃথিবীর কোথাও এমন রেওয়াজ নেই। একই সঙ্গে তিন মাধ্যমে কাজ করে। তাও সবাই মূল চরিত্রে। যার ফলে তাদের সিনেমার জন্য একটা সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে আলোচিত হয়, প্রশংসিত হয় কিন্তু ব্যবসায়িক সফলতা নেই।
কথা হতে পারে ‘আয়নাবাজি’ কিংবা মমর ‘ছুয়ে দিল মন’ নিয়ে। এগুলো তো ব্যবসায়িক সফলতা পেয়েছে। এর ব্যবসার পেছনের যদি নায়ক কিংবা নায়িকাকেই যদি মূল ধরেন। সেটা ভুল কথা। কথা হতে পারে এক হুমায়ূন ফরিদীও তো দু মাধ্যমে সমান জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু তিনি মূল চরিত্রে ছিলেন না। হয়তো তাই তার অভিনয় দিয়ে তিনি উৎরাতে পেরেছেন। দু মাধ্যমেই মূল চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। এমন উদাহরণ নেই বললেই চলে।
একটা সময় গেছে, যখন বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল বড় পর্দা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যে কারণেই হোক, বড় পর্দার সে জায়গা অনেকটাই দখল করে নিয়েছে ছোট পর্দা। তাইতো এফডিসি ঘরানা আর ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় চাওয়া শিল্পীদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা চলে নীরবে। যা ডিপজলের মতো ব্যক্তিরা কখনো কখনো প্রকাশ্যেও নিয়ে আসে। এখন ছোটপর্দা তাই স্বাভাবিকভাবেই দুই পর্দার মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা এসেই যায়।
বিদ্যা সিনহা সাহা মীম বলেন,‘ আমার প্রথম কাজ বড় পর্দার হলেও আমার শুরু কিন্তু ছোট পর্দা দিয়ে। আমি তাই দুই পর্দাকেই সমান প্রাধান্য দিয়ে একটা সময়ে কাজ করেছি। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে কোনো একটা বেছে নিতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমি বড় পর্দা বেছে নিয়েছি। দু-মাধ্যমে কাজ করলে আসলে বানিজ্যিক সফলতা পাওয়া বেশ মুশকিল।’
সুমাইয়া শিমু বলেন,‘এ প্রসঙ্গে আমি বলব, প্রতিটি দেশের সেরা শিল্পী কলাকুশলীরা বড় পর্দায় কাজ করেন। নতুনেরা সেখানে কাজ করার স্বপ্ন দেখে। আমাদের এখানে পরিস্থিতি ভিন্ন। আমরা যারা ছোট পর্দায় কাজ করি, তারা সামাজিক সম্মানটা কিন্তু একটু বেশি পাই। তাই অনেক অভিনয়শিল্পীরাই হয়তো বড় পর্দায় যেতে চায় না। ’
মোশাররফ করিম বলেন, ‘আমরা যে বিশেষ ছোট পর্দামুখী দর্শকশ্রেণীর কথা বলছি, তারা কিন্তু কখনোই কাউকে দেখার জন্য হলে যাবে না। গেলে যাবে পুরো সিনেমাটা কেমন হয়েছে, সেটা দেখতে যায় সাধারনত। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ভক্তরা যে টিকিট কেটে আমাকে দেখতে যাবে। সেটা আমি কুব বিশ্বাস করি না। কারণ আমাকে নিয়মিতই টিভি পর্দায় দেখা যায়। আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, আমির খান বছরে এক-দুইটা ছবি করেন। আর আমাদের সবচেয়ে পপুলার নায়ক তার কিন্তু একটা সময়ে প্রতি সপ্তাহে সিনেমা মুক্তি পেত। সেগুলো জনপ্রিয়তাও পেত। ছোট পর্দার ক্ষেত্রেও তা-ই। আমরা যতই নিয়মিত টিভিতে অভিনয় করি। একটা দর্শক সেখানে আমাদের আছে। কিন্ত সেটা বড় পর্দায় নেই। সেটা শাকিব খানের আছে বলেই তার ছবি ব্যবসাসফল হয়। আমরা আশাও করি না যে আমাকে দেখে দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়বে। আমাদের প্রত্যাশা একটা ভালো গল্পে অভিনয় করলাম। সেখানে নিজেকে কতটা তুলে ধরতে পেরেছি।’
বাণিজ্যিক ছবির পরিচালক পরিচালক বদিউল আলম খোকন বলেন,‘ এটা সত্যি কথা। যদি কারও বড় পর্দায় অভিনয় করতে হয়। তাহলে এখানে তার নিয়মিত হতে হবে। অন্য কোথাও আর ঢু মারা চলবে না। তাতে নিজেরই ক্ষতি।’
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন