দু’টুকরো মুরগীর মাংস আর ভাত দেয়া হলো খাবারে। ভুনা মাংসে ঝোল নেই, আমি আবার শুকনো খাবার খেতে পারি না। শাওনকে ডালের কথা বলবো কীভাবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। পরে কাঁচা লবন চেয়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। প্রতি লোকমা ভাত চিবিয়ে যাচ্ছি অনন্তকাল, গিলতেই পারছি না। হঠাৎ করে মনে হল পানি তো আছে। লজ্জায় ঠান্ডা পানিও চাইতে পারছিলাম না। পরে পানি দিয়ে গপাগপ খেয়ে ফেললাম। মাংসের প্রতিটি অংশই অনেক এক্সপেন্সিভ মনে হচ্ছিলো। খাওয়া শেষে সাবান পাইনা হাত ধোবার, সর্বকনিষ্ঠ বন্দী মাহবুব নিয়ে এলো হ্যান্ড-ওয়াস। এদিকে পাঞ্জাবী আর প্যান্টও ধোয়া দরকার, ভাবলাম পানিতে ভিজিয়ে রাখি পরে ধুয়ে নিবো। ছোট মাহবুব তা হতে দিলো না, সে কাপড়গুলো ধুয়ে ফেললো।
এবার আর শরীর চলে না। খাওয়ার পর অন্তত বিশ মিনিট হাঁটি, সেটা আর সম্ভব হল না, পড়ে গেলাম বিছানায়, শরীর জুড়ে ক্লান্তি আর ক্লান্তি। বালিশটা প্রথমে বানানো হয়েছিল শিমুল তুলো দিয়েই। মাথা রেখে মনে হলো গ্রানাইট পাথরের সঙ্গে বাড়ি খেয়েছি, পিঠের নীচে বেডশিটটা স্যাঁতস্যাঁতে লাগছিলো। এতোকিছু কে দেখে! চোখজুড়ে ঘুমের সীমাহীন আক্রমণ। কোলবালিশ আর কাঁথা আমার নিত্যসঙ্গী, ভাবার সময় নেই। মশাদের সান্নিধ্যে ভ্যাপসা গরমে ঘুমালাম প্রায় দু’ঘন্টা।
আমার রুটিন এখানে চলবে না, তাই ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম ঝটপট, নইলে আবার অভুক্ত থাকতে হবে, তেলাপিয়া মাছের দো পেঁয়াজা খুব টেস্টি ছিলো। অমৃতের স্বাদ পেয়েছি, জীবনে এতো ভাল খাইনি।
খাওয়া শেষে রুমের প্যাসেজে হাঁটা শুরু, একজন ডাকলেন, ও গায়ক সাব এইহানে একটু বইয়া একটা বিড়ি খান, আমনে তো মেশিনের লাহান খানা আর আডা শুরু করসেন। বরিশালের মূলাদীর মানুষ তিনি। পাশে গিয়ে বসলাম, আস্তে আস্তে সবাই আসা শুরু করলেন, আমিও ফর্মে ফেরার সিগন্যাল পেলাম।
রাত জাগা আমার অভ্যাস। জেলে বাতি বন্ধ হয় না, একটু কমানো হয়। দুটো শুটিং মিস হল এই কারাবাসে, অনুতপ্ত বোধ করছি। নানান ভাবনা মনে, নানান ফ্ল্যাশব্যাক চোখে। একা একা শুয়ে হাসি আর রণ-রুদ্র’র কথা ভাবি। ওরা মাত্র ক্লাস সিক্সে, হোষ্টেলে ঠিক এমনই পরিস্থিতিতে ছিলো, ওরাও নিশ্চয়ই বাসায় শুয়ে আমার জন্যও ভাবছে। আজ দু’রাত ছেলেদের চুমু দেই না। ওরা জানে ওদের বাবা একা একা ভয় পায়, একা থাকতে পারে না।
ফজরের শেষে ঘুম জড়িয়ে এলো চোখে, ঠিক সকাল সাড়ে সাতটায় ডাক, হাজিরায় যেতে হবে স্বাক্ষর করার জন্য। মেজাজ খিচড়ে গেলো, সামলে নিলাম পরক্ষণেই, এখানে আমি আগন্তুক, নিয়ম মেনে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ…
প্রথম পর্ব
* আমি কয়েদী নাম্বার ২৫০২৭
(আসিফ আকবরের ফেসবুক থেকে নেওয়া)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন