স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে। আবার স্বামী বা স্ত্রী আলাদা থাকতে পারেন। তাঁদের সন্তান থাকলে এ ক্ষেত্রে সন্তানদের আইনগত অবস্থান কী হবে, সন্তানেরা থাকবে কার কাছে, কে বহন করবে তাদের ভরণপোষণ, তার জন্য আইন আছে। কিন্তু মনের আইন কী? সন্তানের মন কি মানে কাউকে ছেড়ে থাকতে? বাবা-মায়েরাও চায় না সন্তান চোখের আড়াল হোক। আমাদের দেশে সাধারনত সন্তান মায়ের কাছেই থাকে। সেভাবে বাবা-সন্তানের অভাবটা কীভাবে পূরণ হয়?
নুহাশের বাবা হুমায়ূন আহমেদ
ছোটবেলা থেকে অনেকে জানতে চায়, বাবা-মা আলাদা হয়ে গেলে বাচ্চাদের কেমন লাগে। এটা আমার জন্য সবার কমন প্রশ্ন। বাবার মৃত্যুর এতটা দিন পরেও কেউ কেউ জানতে চায়। এ প্রশ্নের কোনো জবাব আমার জানা নেই। সাধারনই তো। কারণ একসঙ্গে থাকলে কি হত। তা তো আমার জানা নেই। আমার বোনেরা বলে, একসময় একটা বিশাল সুখী পরিবার ছিল আমাদের। কিন্তু সেসব আমার কাছে গল্পই। আমার মনে পড়ে না, মা-বাবাকে কখনো একসঙ্গে দেখেছি। আমার কাছে এটাই জীবন। আমিও সুখী একটা পরিবারই পেয়েছি, শুধু একটু বিচ্ছিন্ন, এইটুকুই পার্থক্য। একটা সময়ে সপ্তাহে একদিন বাবার সঙ্গে দেখা হত। এমন সময় আসলো, দিনের পর দিন বাবার সঙ্গে দেখা হয় না, কিন্তু ফোনে কথা হচ্ছে সারাক্ষণই। বাবার একটা বদঅভ্যাস ছিল হুটহাট কোন দরকারে প্রশ্ন করতেন। কল করতেন। তথ্য জানতে চাইতেন। হয়তো গুগল সেও করতে পারে। কিন্তু আমার কাছে জানতে চাইতো। বাবার সঙ্গে প্রচুর ছবি দেখতাম। যখন বাবার সঙ্গে থাকতাম না, ছুটির দিনটা কাটাচ্ছি মায়ের সঙ্গে, মাঝরাতে টেক্সট পাই—‘বাবা, আই মিস ইউ। আই অ্যাম লোনলি।’ বাবা শেষদিকে তাঁর অন্য পরিবার নিয়ে খুব চিন্তিত থাকতেন। হয়তো ভাবতো আমরা আমাদের পথ খুঁজে পেয়েছি। বাবাকে নিয়ে অনেক গল্প অনেক সময় বলেছি। নতুন করে পুরনো একটি কথাই বলবো। আমার বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। হয়তো তিনি পরিবারের কর্তা হিসেবে ব্যর্থ, স্বামী হিসেবে ব্যার্থ।
বাবার প্রতি দায়বদ্ধতা? বাবা নিজের জন্য নিজে অনেককিছু করে গেছেন। তাঁর অগনিত ভক্তরা তাকে আজীবন মনে রাখবে। আমি এখন যদি বলি এটা করবো। ওটা করবো। সেটা করতে পারবো কিনা জানি না। আলাদা করে আমি বাবার জন্য কিছু করতেও পারবো না।
আয়রা তেহরিম খানের বাবা তাহসান
তাহসান ও মিথিলার কন্যা সন্তান, সেহেতু আইনানুগভাবে যতদিন না আইরা প্রাপ্তবয়স্ক না হবে ততদিন পর্যন্ত মায়ের হেফাজতেই থাকবে, অবশ্য এরপরও মায়ের কাছে থাকা যাবে। সেটা আইরার তখনকার সিদ্ধান্ত। বর্তমানে সপ্তাহে একদিন তাহসানের সঙ্গে আইরার দেখা হয়। এই একদিন বাবা-মেয়ে ঘুরাঘুরি করেন। কখনও বা সেটাও হয় না। মেয়ের পড়াশুনার চাপ থাকে। বাবাও ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মেয়ের ভরণপোষনের দায়িত্বও নিতে চায় তাহসান। এরজন্য মাসিক দিয়ে থাকেন। কিন্তু আইরার মা মিথিলাও স্বাবলম্বী। তিনিও অভিনয়শিল্পী ও ভালো চাকরি করেন। তাহসান উদাহরণ দিয়ে বোঝালেন,‘আমাদের বিচ্ছেদের কোন খারাপ ইফেক্ট ওর উপর পরতে দেই না। প্রতিটা আনন্দই আমরা ওর সঙ্গে শেয়ার করি। ওর জন্মদিন ওর মাও যেমন পালন করে। আমিও পালন করি ওকে নিয়ে। এভাবেই ওর বেড়ে উঠতে হবে। আশাকরি সময় হলে ও সবকিছু বুঝতে পারবে। ‘
আব্রামের বাবা শাকিব খান
ছেলে আব্রাম খান জয়কে খুব মিস করেন চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। তিনি বলেন, ছেলে তো খুব ছোট। এখন আইটডোরেই বেশি থাকা হয়। ভীষণ মিস করি। ও আমাকে মিস করে। কিন্তু কী করব। কাজ তো করতেই হবে। তারকা বলে যখন তখন ছেলেকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেও পারি না। একসঙ্গে শপিং করা হয় মাঝেমধ্যে। আমি বাসায় থাকলে নিয়ে আসি বাসায়। বাবা-ছেলে একান্তে সময় কাটাই।’
আর ভরণপোষন, অপু বিশ্বাস তো বলেন আপনি খোঁজ নেন না?‘ সে কি বললো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার ছেলের জন্যই আমার সবকিছু। সে কেমন থাকবে সেটা আমি ভুলিনা। কোন বাবাই ভুলতে পারেন না। আমি প্রতি মাসেই ওর খরচ বহন করি। আর আব্রামের যখন যা দরকার। কোনভাবে আমার কানে আসলে সেটার জন্য আমি দুই মিনিট ভাবি না। বাবা হিসেবে আমার দায়িত্ব আমি শতভাগ পালন করি। ওকে দূরে রেখে থাকতে আমারও কষ্ট হয়। কিন্তু পরিস্থিতিই ওকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।’
শারারাত ইসলাম হুমায়ুন ফরীদির একমাত্র মেয়ে
দেবযানী নামেই তাঁকে চেনে সবাই। বাবা সম্পর্কে কখনো তাঁকে কোনো কথা বলতে শোনেনি কেউ। বাবাকে নিয়ে তেমন কিছু বলেন না তিনি। একটা অভিমান সেই কবে থেকে বুকে চাপা। হুমায়ূন ফরীদির মৃত্যুর দিনের একটি চিত্র এক সাংবাদিক বলেছিলেন,‘ গিয়ে দেখি শোবার ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে বাবার মরদেহের দিকে তাকিয়েছিলেন মেয়ে দেবযানী। একমাত্র মেয়ে দেবযানী বাবার মৃত্যুতে কোনো কথাই বলতে পারছিলেন না। কিছুক্ষণ পরপরই রুমের এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিলেন। যেন দেয়ালের ছবিগুলো থেকে শুরু করে হুমায়ুন ফরীদির নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী চশমা, জামা সবকিছুতে করুণ দৃষ্টি মেলে প্রিয় বাবাকে খুঁজছিলেন। একপর্যায়ে আসেন দেবযানীর মা। মাকে পেয়ে বোবা কান্না পেয়ে বসে দেবযানীকে।’
দেবযানী বাবাকে নিয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি। শুধু বললেন,‘উনি অনেক বড়মাপের অভিনেতা ছিলেন। বাবাকে নিয়ে একটি স্মৃতিকথার সংকলনের কথা ভাবছি। এই মাপের একজন শিল্পীকে তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম এবং তারও পরবর্তী প্রজন্ম যেন জানতে পারে, সে জন্যই এ ভাবনা। যাঁরা বাবাকে চেনেন, তাঁরাই লিখবেন। অভিনয় জীবনের পাশাপাশি তাতে উঠে আসবে বাবার শৈশব-কৈশোর, জীবনযাপনের নানা প্রসঙ্গের কথা। অনেকদিন ধরেই ভাবছি কাজটা করবো। হয়ে উঠে না।
উল্লেখ্য,
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৭৬ সালে গুলতেকিন খানকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। বড় মেয়ে নোভা আহমেদ, মেজো মেয়ে শীলা আহমেদ এবং ছোট মেয়ে বিপাশা আহমেদ। তাঁর বড় ছেলের নাম নুহাশ আহমেদ। অন্য আরেকটি ছেলে সন্তান অকালে মারা যায়। তিনি তার নাম রেখেছিলেন রাশেদ হুমায়ূন। ২০০৩ সালে গুলকেতিনের সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায়। ২০০৫ সালে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে। সে ঘরেও দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ুন ফরিদী দুবার বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে করেন ১৯৮০`র দশকে। `দেবযানী` নামের তাঁর এক মেয়ে রয়েছে প্রথম সংসারে। পরবর্তীতে বিখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাকে তিনি বিয়ে করলেও তাঁদের মধ্যেকার বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে ২০০৮ সালে।
জনপ্রিয় তারকা জুটি তাহসান মিথিলার ডিভোর্স হয়ে গেছে গত বছরের মে মাসে। শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের ডিভোর্স হয়ে যায় এ বছরের শুরুর দিকে।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন