‘সারাদিন খাটুনির পর ঘরে ফিরে কমেডি দেখতে ভালো লাগে। মাঝেমইধ্যে ছবি দেখি, কলকাতার বাংলা বই-ই বেশি দেখি। বাংলাদেশের ছবিও দেখি। তয় সব সময় টেলিভিশনেই দেখা হয় না, কাজের ফাঁকে ফাঁকে মোবাইল দিয়া ইন্টারনেটে ঢুকেও নাটক-সিনেমা দেখি। গান শুনি। আমার পরিবার তো দেশি চ্যানেল ধরেই না। কাজকাম থুইয়া কলকাতার সিরিয়াল দেখে।’রাজধানীর পরীবাগ এলাকার এক স্থায়ী চায়ের দোকানি আব্দুল মান্নান টেলিভিশ অনুষ্ঠান দেখা প্রসঙ্গে এমন কথাগুলো বলেন।
ঢাকার টেলিভিশন দর্শকদের ৭৫ শতাংশ লোক দেশি টেলিভিশনের অনুষ্ঠান নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট। পরিপ্রেক্ষিত পরিচালিত ‘জনগণের গণমাধ্যম মনস্কতা- বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শিরোনামের এক গবেষণায় এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ওই গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, রাজধানীর ৯ শতাংশ লোক দেশীয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান নিয়ে কম সন্তুষ্ট, ১৪ শতাংশ খুব সন্তুষ্ট এবং ২ শতাংশ লোক একেবারেই সন্তুষ্ট নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেভিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের স্নাতোকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী আবে হায়াত সৈকত বলেন, দেশের টেলিভিশনগুলোর অধিকাংশই অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচারের ক্ষেত্রে গতানুগতিক ধারা ধরে রাখে। বৈচিত্র চোখে পড়ে না। কখনো কখনো বিশেষ সময় উপলক্ষে কিছু ভালো অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। মানম্পন্ন ও রুচিশীল নাটক নির্মাণের সুযোগ থাকলেও চ্যানেলগুলো অযথাই ভাঁড়ামিপূর্ণ নাটক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
এরপরও রাজধানীর ৪ দশমিক ২ শতাংশ লোক দৈনিক নূন্যতম আধ ঘণ্টা সময় টেলিভিশন দেখেন। এক ঘণ্টা দেখেন ২১ দশমিক ৪ শতাংশ, দেড় ঘণ্টা দেখেন ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, দুই ঘণ্টা দেখেন ৩২ দশমিক ৭ শতাংশ, আড়াই ঘণ্টা দেখেন ১ দশমিক ৯ শতাংশ, তিন ঘণ্টা দেখেন ১৯ দশমিক তিন শতাংশ, চার ঘণ্টা দেখেন ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, পাঁচ ঘণ্টা দেখেন ৪ দশমিক ৩ শতাংশ, ছয় ঘণ্টা দেখেন ১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ছয় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে টেলিভিশন দেখেন ১ দশমিক ৬ শতাংশ লোক।
গণমাধ্যম কর্মী শর্মিলী আক্তার বলেন, দেশীয় চ্যানেগুলোয় দেখার মতো অনুষ্ঠান খুব একটা পাই না। তবু বিদেশি সিরিয়াল দেখি না, কারণ এটায় অভ্যস্ত হয়ে পড়লে রুচি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখন টেলিভিশন দেখার সময়টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাটাই। সিনেমা দেখতে হলে ইউটিউব বা সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলোয় ঢুঁ মারি।
আগে দেশীয় চ্যানেলের সংখ্যা কম ছিল। অনুষ্ঠান কম প্রচারিত হলে মানসম্পন্ন ছিল। লোকে সেসব দেখত। এখন চ্যানেল সংখ্যা অনেক বেড়েছে, প্রতিযোগীতামূলকভাবে চ্যানেলগুলো অনুষ্টান নির্মাণ ও প্রচার করতে গিয়ে গুণ ও মান হারাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই বিদেশি চ্যানেল ও ইন্টানেটভিত্তিক বিনোদনের ওপর দেশি দর্শকদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা, বয়স ও বৃত্তের লোকদের সঙ্গে কথা বললে এসব তথ্য উঠে আসে।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ কর্মকর্তা মারুফ আহমেদ বলেন, অবসরে টিভি দেখি। বাংলাদেশি কিছু নাটক ভালো লাগে। গানের অনুষ্ঠান, রিয়েলিটি শো দেখি। মাঝেমধ্যে টেলিফিল্মও দেখি। আমার স্ত্রী আবার বিদেশি সিরিয়াল খুব পছন্দ করেন। উনি সিরিয়াল দেখা শুরু করলে আমি সোস্যাল মিডিয়া নয়ত ইউটিউবে সময় কাটাই।
নিয়মিত কম-বেশি টেলিভিশন দেখেন, এমন কয়েকজনের মতামত থেকে জানা গেছে, ক’বছর আগেও দেশীয় চ্যানেলগুলোয় বেশ সমৃদ্ধ ধারাবাহিক প্রচারিত হতো। ইদানিং আর অমন ধারাবাহিক দেখা যায় না। এখনকার ধারবাহিকগুলো প্রাণহীন! পাশাপাশি সব চ্যানেল একই ধরনের গৎবাধা অনুষ্ঠান প্রচার করায় দর্শক সংখ্যা কমছে। এছাড়া দেশীয় ইউটিউব চ্যানেলগুলো ভালো মানের নাটক প্রকাশ করায় দর্শকদের একটা অংশ ওদিকে ঝুঁকছে। পাশাপাশি দেশীয় জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠানের অধিকাংশই এখন সম্প্রচারিত হওয়ার পরপরই ইউটিউবে পাওয়া যায়। ফলে অনেকেই সময় ধরে টিভিতে অনুষ্ঠান না দেখে ইউটিউবে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন