রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে সকল অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ব্লু হোয়েল গেম ঢুকিয়ে দেয়া হবে, এক ঘণ্টা মোবাইল বন্ধ রাখুন। এই কালেমা ১০ জনকে পাঠাও তাহলে সবচেয়ে বড় আশা পূরণ হবে, না পাঠালে খারাপ খবর পাবে। একমাত্র সাহাবী গাছ। বিড়ালের ১০ পা। প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে সেজদারত মানব আকৃতির গাছ। ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে এমন সব ছবির শেষে লেখা থাকে আমিন না লিখে যাবেন না অথবা শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব মেসেজ বা ছবি দেখলেই বুঝতে হবে খারাপ কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
কখনও এসব মেসেজ বা ছবির পেছনে পোস্ট করে দেয়া হয় জঙ্গি বার্তা বা হ্যাকিং সফটওয়্যারের লিংক। এটি ওপেন বা শেয়ার করা মাত্রই সংশ্লিষ্ট জঙ্গি বা হ্যাকারের কাছে চলে যেতে পারে আপনার মোবাইল অথবা কম্পিউটারের ব্যক্তিগত তথ্য। তাই এসব থেকে সাবধান থাকা উচিত। সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ মেহেদী হাসান জানান, একজন জঙ্গি যদি মোবাইল, ইমো, মেসেঞ্জার বা এই ধরনের ডিভাইস ও অ্যাপ ব্যবহার করে কোনো তথ্য আদান-প্রদান করতে যায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ট্যাগ করে তাকে ধরে ফেলতে পারেন। এই জন্য তারা এক ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে ধর্মীয় অনুভূতি জড়িত কোনো ছবির পেছনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছড়িয়ে দেন। সাধারণ মানুষ এসব কিছু জানেন না। ধর্মীয় অনুভূতির জায়গা থেকে বা সওয়াবের আশায় ছবিটি শেয়ার করছেন। একই সঙ্গে পরিচিতদের শেয়ার করার জন্য প্রলুব্ধ করছেন। কেউ শেয়ার না করতে চাইলে ধরে নিচ্ছেন লোকটির ঈমান নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে জঙ্গিরা জানে এই ধরনের ছবি মানেই কোনো মেসেজ থাকতে পারে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেসেজ উদ্ধার করে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখা গেল এখন কোনো জঙ্গি গ্রুপ সরাসরি তাদের কর্মীদের অস্ত্র তৈরির কৌশল শেখাতে পারছেন না বা বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ও ম্যাপ সরবরাহ করতে পারছেন না। এক্ষেত্রে এক ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে এমন ছবির পেছনে অস্ত্র তৈরির ডিজাইন ও সকল নিয়ম-কানুনের সফট কপি অ্যাড করে দিলেন। অথবা বড় কোনো হামলার মেসেজটি ছবির পেছনে বা মেসেজের পেছনে অ্যাড করে দিলেন। আর সংশ্লিষ্ট জঙ্গিরা এই ধরনের মেসেজ বা ছবি পেলেই তা চেক করে দেখলেন। এক পর্যায়ে পেয়ে গেল সেই লুকায়িত মেসেজটি। পরে তারা অস্ত্র তৈরির কৌশল রপ্ত করে বানিয়ে ফেললো অস্ত্রটি। অথবা লুকায়িত মেসেজটি জানতে পারলো।
তিনি বলেন, ওপেন স্ট্রেগো, স্ট্রেগো এনালাইসিস অথবা এই জাতীয় বিভিন্ন সফটওয়্যার বা সাইট ব্যবহার করে ছবির পেছনে তথ্য অ্যাড করা যায়। আবার একই সফটওয়্যার ব্যবহার করে ওই লুকায়িত মেসেজ পড়া বা দেখা যায়। তবে এই ধরনের সফটওয়্যার ইন্টারনেটে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। এর কার্য ক্ষমতাও কম। অপরাধীরা এখন অনেক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের মেসেজ আদান- প্রদান করে। তাই বিনামূল্যের সফটওয়্যার দিয়ে ওইসব ছবির পেছনে লুকায়িত মেসেজ উদ্ধার করার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এছাড়া, গত কয়েকদিনে বিটিআরসি’র সূত্র উল্লেখ করে ব্লু হোয়েল গেমসের লিংক ছড়ানোর যে সতর্কবার্তা ছড়িয়ে পড়েছে এগুলোর মাধ্যমে অপরাধীরা আপনার জিপিএস লোকেশন জেনে ফেলতে পারে। আপনি কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপের টার্গেট হলে শুধু আপনাকে উদ্দেশ্য করে মেসেজ পাঠিয়ে লোকেশন জেনে আপনাকে হত্যা করতে পারে। আবার মেসেজ পাঠিয়ে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ও প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে। আবার অ্যাকাউন্টের টাকা আপনা-আপনি হ্যাক করে বাগিয়ে নিতে পারে। এসব মেসেজ বা ছবির ফাঁদ থেকে বাঁচার উপায় হলো মেসেজটি কাউকে সেন্ড না করা। ছবিগুলো শেয়ার না করা। এমন কিছু সামনে পড়লে এড়িয়ে চলা।
এ ব্যাপারে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সদস্য ও অ্যাড. তানজিম আলম বলেন, শুধু বিটিআরসি নয় যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে যদি কেউ কোনো মেসেজ বা তথ্য ইন্টারনেট অথবা প্রযুক্তির কোনো মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠান এবং সেগুলো যদি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। তাহলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের প্রচলিত তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। আবার কে বা কারা মেসেজটি প্রথম ছড়িয়েছে তা উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একই আইনের আওতায় শাস্তি দিতে পারেন। আবার নিজের বন্ধুমহল বা সাধারণকে সচেতন করার জন্য আবেগে পড়ে যারা মেসেজটি পাঠাচ্ছেন বা ছবি শেয়ার করছেন তারা হয়তো জানেন না এটার ক্ষতিকর দিক। কিন্তু এমন ভুয়া মেসেজ পাঠিয়ে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে পারেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন