বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ফসলের মাঠে দৃশ্যটা এখনো বেশ পরিচিত। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, জমির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে এক কিম্ভূতকিমাকার লোক। আসলে কোনো রক্তমাংসের মানুষ নয়, ওটা কাকতাড়ুয়া।
ফসলি জমিতে ক্ষতিকর পাখ-পাখালির উৎপাত বন্ধ করতে কৃষক এই ‘অস্ত্র’ ব্যবহার করে আসছেন কৃষিব্যবস্থার শুরু থেকে। মানুষের দেহের সঙ্গে মিল রেখে পুরোনো জামা-কাপড়, যেকোনো পাতিল আর বাঁশ দিয়ে দিয়ে কাকতাড়ুয়া বানানো হয়। পৃথিবীর বহু দেশেই ক্ষতিকর পাখপাখালির বিপক্ষে যুদ্ধে কাকতাড়ুয়া কৃষকদের সনাতনী রক্ষাকবচ।
সবুজ লেজার রশ্মি দেখে ভয় পাবে পাখ-পাখালি। ছবি: বার্ডকন্ট্রোল গ্রুপ।
চার বছর আগেই এই ‘রক্ষাকবচ’-এর অত্যাধুনিক সংস্করণ বের করেছেন ‘ডাচ বার্ড কন্ট্রোল’ গবেষকেরা। দেশটির সেন্টার ফর এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সেন্টারে ‘এগ্রিলেজার’ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন তাঁরা। বাংলায় এ প্রযুক্তিকে বলা যায় ‘লেজার কাকতাড়ুয়া’। কারণ, যন্ত্রটির কর্মকাণ্ড পুরোপুরি লেজারভিত্তিক। তবে এই লেজার পাখিদের কোনো ক্ষতি করে না, শুধু ভয় দেখায়।
প্রচলিত কিংবা সনাতনী ধারার কাকতাড়ুয়া কিন্তু খুব বেশি কার্যকর নয়। ফসলের মাঠে বাতাসের দোলায় কাকতাড়ুয়া নড়াচড়া না করলে পাখিরা সেভাবে ভয় পায় না। তা ছাড়া এ পদ্ধতিতে পাখিরা একসময় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু ‘এগ্রিলেজার’ পাখিদের সে সুযোগ দেবে না। যন্ত্রটির সবুজ লেজার রশ্মি ফসলের মাঠে পাখিদের সব সময় তাড়া করবে। এই লেজার রশ্মিকে ‘শিকারি’ পাখি বা জন্তু ভেবে ফসলের ক্ষতিকর পাখপাখালি পালিয়ে যাবে।
ল্যাপটপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ‘এগ্রিলেজার’। ছবি: গিক।
যন্ত্রটির লেজার রশ্মির রং সবুজ—পাখিরা সবুজ রঙে কখনো অভ্যস্ত হতে পারে না। তবে এই লেজার রশ্মি মানুষ কিংবা পাখির শরীরকে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। চারপাশে ৩৬০ ডিগ্রি কোণে এক মাইল দূরত্বের মধ্যে কাজ করবে ‘এগ্রিলেজার’। চাইলে এই দূরত্ব আপনি কমবেশি করতে পারেন। দিনে-রাতে যেকোনো সময় ‘এসি’ (অলটারনেটিভ কারেন্ট) আর সৌরবিদ্যুতে চলবে ‘এগ্রিলেজার’। ১০ হাজার ডলার মূল্যের এই যন্ত্র দিয়ে আপনি গোটা একটা খামারের ফসলি জমির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন।
নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের মধ্যে ‘এগ্রিলেজার’ ভীষণ সাড়া ফেলেছে। যাঁদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে যন্ত্রটি কেনার সামর্থ্য নেই, তাঁরা কিনছেন সমবায়ের ভিত্তিতে। বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থায় এ প্রযুক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকেরই তা কেনার সামর্থ্য নেই। সমবায়ের ভিত্তিতে তা হতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয়, দেশের প্রযুক্তিবিদেরা যদি শুধু ‘লেজার রশ্মি’ ধারণাটি দিয়ে বাংলাদেশি কাকতাড়ুয়ার সংস্কার সাধন করেন, তাহলে অন্তত নিষ্প্রাণ মানবদেহের গড়ন নিয়ে হ্যাংলা-পাতলা প্রহরীটি আরেকটু বেশি কার্যকর হবে। সূত্র: ফিউটুরিজম, বার্ডকন্ট্রোল গ্রুপ, এবিসি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন