রাত বাজে আড়াইটা। এনআইসিইউয়ের সামনে পায়চারি করছিলেন জামান। সন্তান ভর্তি আছে। ডাক্তার জানিয়েছে রক্ত লাগবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ম্যানেজ করতে হবে। এত রাতে কোথায় রক্ত পাবেন। পরিচিত মানুষের মধ্যে ওই ব্লাড গ্রুপের রক্ত পাওয়া যাবে সেই খবরই এত রাতে কীভাবে নেবেন। ফেসবুকে রক্তদাতার গ্রুপ আছে বলে শুনেছিলেন জামান। তিনি এমন কয়েকটি গ্রুপে রক্ত চেয়ে পোস্ট দিলেন। রক্তদাতা গ্রুপ নয় এমন কয়েকটিতেও পোস্ট দিলেন। রাত ৩ টার মধ্যে তিনজনের ফোন পেলেন রক্ত দিতে ইচ্ছুক। এদের একজন হাসপাতালের কাছেই থাকেন। ভোর চারটার দিকে এসে তিনি রক্ত দিয়ে গেলেন।
জামানের মতোই বাংলাদেশের লাখো মানুষের জন্য রক্তের নির্ভরতার স্থল হয়ে পড়েছে ফেসবুক। জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রক্তদাতাদের বিভিন্ন গ্রুপ আছে। এসব গ্রুপে পোস্ট করে কোন গ্রুপের রক্ত, কোথায় গিয়ে দিতে হবে তা জানানো হলে অল্প সময়ের মধ্যেই রক্তদাতা খুঁজে পাওয়া যায়।
ফেসবুকে বাংলাদেশের ব্লাড ডোনার কয়েকটি গ্রুপের ঠিকানা দেওয়া হলো:
http://bit.ly/2DebgFn
http://bit.ly/2FEHqaL
http://bit.ly/2EIgOEv
http://bit.ly/2EI9atR
http://bit.ly/2Dl97qQ
এমন শতাধিক গ্রুপ আছে ফেসবুকে যারা শুধু রক্তদানের সঙ্গেই যুক্ত।
এমন গ্রুপের বাইরেও রক্তের জন্য পোস্ট দিতে পারেন। এক্ষেত্রে যেকোনো গ্রুপেই যুক্ত থাকুন না কেন সেখানে রক্তের জন্য আবেদন করতে পারেন। অনেক সময় এসব গ্রুপ থেকেও রক্তদাতা খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া নিজের ওয়ালে পোস্ট করে ফেসবুক বন্ধুদের মধ্যে থেকেও অনেক সময় রক্তদাতা পাওয়া যায়।
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের একাধিক ব্লাড ব্যাংকের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই জরুরি ভিত্তিতে ফেসবুকের মাধ্যমে রক্তদাতা খুঁজে নেন। এসব রক্তদাতাদের বেশিরভাগই হয় রাজধানীর বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এমন একজন রক্তদাতা রাজধানীর একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেলিম বলেন, তিনমাস পরপরই তিনি রক্ত দেন। ফেসবুকে বেশ কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে তিনি যুক্ত। জরুরি প্রয়োজনে একাধিক রক্ত দেওয়ার অভিজ্ঞতাও তাঁর হয়েছে।
আরেক রক্তদাতা ধানমন্ডির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোহান বলেন, ফেসবুকের এক বন্ধুর পোস্ট দেখে তিনি প্রথমে ফোনে যোগাযোগ করেন। পরে নির্ধারিত সময়ে রক্ত দিতে এসেছেন। ওই ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে তেমন সখ্যতা না থাকলেও জরুরি সময়ে পাশে দাঁড়াতে দ্বিধা ছিল না তাঁর।
ব্লাড ব্যাংকের রক্ত দিতে আসার এক চাকরিজীবী মাহবুব বলেন, তিনি নিয়মিত রক্ত দেন। ২০১৩ সাল থেকেই তিনি ফেসবুকে রক্তের জন্য অনুরোধ পান। তখনই মূলত ফেসবুক ভিত্তিক রক্তদাতা বিভিন্ন গ্রুপ গড়ে ওঠে। তবে ২০১৫ সালে এসে বিষয়টি থমকে যায়। ওই বছর মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে ফেসবুক বন্ধ ছিল। সেই সময়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ওই সময়টায় রক্ত দিতে এসে হাসপাতালে রক্তের জন্য মানুষের হাহাকার ও আকুতি দেখেছি। কিন্তু রক্তদাতা খুঁজে পাওয়ার সহজ কোনো উপায়ই ছিল না। ওই সময় এমনও ঘটেছে সেই বিটিভির যুগের মতো রক্তদাতার জন্য টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। অবশ্য তা বিটিভিতে প্রচার হয়নি। জনপ্রিয় বেসরকারি চ্যানেলগুলোতে ওই সময় তিনি অনেকবারেই রক্তের জন্য বিজ্ঞাপন দেখেছেন।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন