ভুয়া খবর ছড়ানো ও ইউজারদের নিউজ ফিডে মুনাফার লোভে বিভিন্ন জিনিসের বিজ্ঞাপন ছড়ানোর জন্য সম্প্রতি তীব্রভাবে সমালোচিত হয়েছে ফেসবুক। এরপর ২০১৮ সালে ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুককে 'ঠিক করবেন' বলে প্রতিজ্ঞা করেন। নতুন বছরের প্রতিজ্ঞায় জাকারবার্গ জানান, ২০১৮ সালে ফেসবুক গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন করা হবে।
একটি ব্লগ পোস্টে জাকারবার্গ বলেন, এখন থেকে ফেসবুক নিউজ ফিডে ইউজারদের আগ্রহ আছে এমন 'প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট'-এর পরিবর্তে তাদের 'অর্থবহ সামাজিক যোগাযোগ' বাড়ানোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে।
ফেসবুকে বিজ্ঞাপন কম দেখানো ও বন্ধুদের খবর বেশি দেখানোর নতুন উদ্যোগটি ভাল শোনালেও, এটি ইউজারদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আইএনসি ডটকমে মনঃসমীক্ষক অ্যামি মরিন মন্তব্য করেন, 'আমার কাছে কোনও রোগী এসে বলেন 'ফেসবুকে একটা জিনিসের বিজ্ঞাপন দেখে সেটি কিনতে না পেরে তার মন খারাপ হয়েছে। কিন্তু বহু মানুষ বলে, 'আমার সব বন্ধু আমার সুখি' বা 'আমার বন্ধুরা আমার চেয়ে উন্ত জীবন-যাপন করছে''।
মরিনের মতে, অনেক মানুষ মনে করেন সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের জীবনের আনন্দের সংবাদ দেখার কারনে তারা নিজেদেরকে অসফল মনে করেন এবং এতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২০১৬ সালে 'কারেন্ট অপিনিওন ইন সাইকোলজি' জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে মরিন বলেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সামাজিক অবস্থানের তুলনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
মানুষ ফেসবুকে স্ক্রল করে বিভিন্ন সুখি স্ট্যাটাস আপডেট, ছুটি কাটানোর ছবি ও ভিডিও, এবং আনন্দঘন পারিবারিক মুহূর্তের ছবি দেখলে আরও মন খারাপ করে।
ফেসবুক নিউজ ফিড থেকে খবর, প্রিয় ব্র্যান্ডের পোস্ট, ও ভাইরাল ভিডিও সরিয়ে ফেলা হলে ইউজাররা তাদের বন্ধুদের বিভিন্ন খবর আরও বেশি বেশি দেখবেন। এসব পোস্ট মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ ক্ষতিকর বলে মনে করেন ম্রিন।
কম্পিউটার্স ও হিউম্যান বিহেভিয়ার-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে দাবি করা হয় বিড়ালের একটি কোনও মজার ভিডিও দেখলে তা ইউজারদের মানসিক চাপ কমায় ও মেজাজ চাঙ্গা করে তোলে। কিন্তু, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ফেসবুক এসব মজার ভিডিও নিউ ফিডে দেখানো কমিয়ে দেবে।
মরিন মনে করেন, ফেসবুক ইউজারদের মধ্যে 'অর্থবহ যোগাযোগ' বাড়ানোর পরিকল্পনা করলেও, বেশিরভাগ মানুষ যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেন না।
২০১৪ সালের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে মরিন বলেন, মাত্র ৯% ফেসবুক ইউজার খবর দেখতে ও বিনোদনের জন্য সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করেন।
ওই গবেষণায় দেখা যায়, ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ফেসবুকের নিউজ ফিডে স্ক্রল করলে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হন। কিন্তু তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় এমনটি হয় না। কেবলমাত্র ফেসবুকই মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এমন প্রভাব ফেলতে পারে।
বেশ কয়েকটি গবেষণার ফল দেখে গবেষকরা মনে করছেন, মানুষ ফেসবুক থেকে লগ আউট করার পর মনে করেন তারা তাদের সময়টা নষ্ট করেছেন। সময় নষ্ট করার কারনে তারা বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
মরিন মনে করেন, দীর্ঘ সময় দেখা হয় না এমন মানুষদের সাথে যোগাযোগের জন্য ফেসবুক একটা ভাল উপায়, কিন্তু পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সবসময়ই এভাবে যোগাযোগ রক্ষা করলে তা আপনার ক্ষতি করে। পরিবার পরিজনদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে তাদের সাথে নিয়মিত সময় কাটানো উচিত।
আর সামাজিক মাধ্যমগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে তাদের নিত্য নতুন পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে যাওয়ার কোনও মানে নেই। মন ভাল রাখতে সারাক্ষণ ফেসবুক বা টুইটারে ডুবে না থেকে খুব নিয়ন্ত্রিতভাবে নির্দিষ্ট কিছু সময় এই সাইটগুলো ব্যবহার করুন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন