টেসলা ও স্পেস এক্স এর প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্কও অবশেষে তার নিজের ফেসবুক একাউন্ট মুছে ফেলেছেন। এর সাথে নিজের কোম্পানি দুটির অফিসিয়াল ফেসবুক পাতাও মুছে ফেলেন এই প্রযুক্তি খাতের পরাশক্তিধর ব্যবসায়ী। টেকক্রাঞ্চ এর খবরে বলা হয়, দুটি কোম্পানির ফেসবুক পাতায় ২৬ লাখেরও বেশি লাইক ও ফলোয়ার ছিল।টুইটারে এক টুইট বার্তায় হোয়াটসঅ্যাপ এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান অ্যাক্টর তার অনুসারীদের উদ্দেশ্যে “এখনই সময়” লিখে সবার ফেসবুক একাউন্ট মুছে ফেলার আহবান জানান। ব্রায়ানের টুইটের পর পরই এলন ব্যাঙ্গ করে জানতে চান, “ফেসবুক আবার কী?”ব্যবহারকারীদের তথ্যগত গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগে দুনিয়ার সবচাইতে বড় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক যখন বেশ বেকায়দায় রয়েছে। এমন খবরে উদ্যোক্তা মার্ক জাকারবাগের কপালের ভাঁজ আরও বাড়বেই বলা যায়। টুইটারে শুরু হওয়া “হ্যাশট্যাগ ডিলিটফেসবুক” আন্দোলনে সাড়া দিতে শুরু করেছে খোদ মার্কিন দুনিয়ার রাঘব বোয়ালরা।
এর আগে ‘সেডারসপ্রোফাইল’ নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী মাস্ককে প্ররোচিত করে টুইট করে, সে বলে– “তুমি যদি ব্যাটা হয়ে থাকো তবে স্পেস এক্স এর ফেসবুক পাতা মুছে দেখাও।”জবাবে মাস্ক বলেন, “আচ্ছা ভাবিনি তো, করছি।”সামাজিক যোগাযোগের সর্বোচ্চ জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক তাদের ব্যবহারকারীদেরকে না জানিয়েই ৫০ মিলিয়ন গ্রাহকের তথ্য বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ এনালিটিকাকে সরবরহ করেছে। লন্ডন-ভিত্তিক ব্রিটিশ রাজনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি ফেসবুকের কাছ থেকে তাদের গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তা যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে ব্যবহার করেছিল।বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই খবরটি প্রকাশ হবার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “হ্যাশট্যাগ ডিলিট ফেসবুক” বা “হ্যাশট্যাগ বয়কট ফেসবুক” প্রচারণা শুরু হয়েছে।ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ এ নিয়ে নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন।
গ্রাহকদের তথ্য বেহাত হওয়ার এই ঘটনাটিকে ‘গ্রাহকদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা’ করার সামিল বলে ফেসবুকে দেয়া বিৃবতিতে মন্তব্য করেছেন।
ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গ গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “আপনার তথ্যের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু সেটি দিতে ব্যর্থ হলে আমাদের সেবা দেয়ার অধিকারও থাকবে না।”জাকারবার্গ আরও বলেন, “আমি ফেসবুক শুরু করেছি এবং দিনশেষে এই প্ল্যাটফর্মে যা-ই ঘটুক না কেন দায়-দায়িত্বও আমার।”যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ২০১৫ এবং ২০১৪ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রুশ-আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী আলেক্সান্দার কোগান ফেসবুকের তৈরি করা ‘দিস ইজ মাই ডিজিটাল লাইফ’ নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের ওপর একটি জরিপ চালায়। এটি ছিলো মূলত একটি কুইজ ভিত্তিক অ্যাপ।
ফেসবুক এই কুইজে অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিত্বের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে এবং শেষ পর্যন্ত তার সবটাই গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে দিয়ে দেয়। সেসময় প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই কুইজে অংশ নেন। ফলশ্রতিতে এই তিন লাখ ২০ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং তাদের বন্ধুদের মিলিয়ে প্রায় ৫০ মিলিয়ন বা পাঁচ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার হাতে চলে আসে। এবং এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ভোটারের ব্যক্তিত্ব বুঝে তাদের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করে তাদের কাছে পাঠানো হয়। যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর-এর একদল ছদ্মবেশী সাংবাদিকের কাছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আলেক্সান্ডার নিক্স নিজেই এসব তথ্য ফাঁস করেন।
এদিকে ঘটনার পরপরই ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা’র প্রধান নির্বাহী আলেক্সান্ডার নিক্সকে বরখাস্ত হয়েছেন। এবং ফেসবুকের প্রাধান মার্ক জাকারবার্গের পাশাপাশি, ফেসবুকের চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গসহ ফেসবুকের অনেক উর্ধতন কর্মকর্তারা এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।এই কেলেঙ্কারি ফাঁস হবার পর ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে ফেসবুক। শেয়ারবাজারেও ফেসবুকের দরপতন শুরু হয়েছে। ওই কেলেঙ্কারির জেরে চলতি সপ্তাহে শেয়ারবাজারে ৫০ বিলিয়ন ডলার খুইয়েছে ফেসবুক। সাথে সাথে আইনী জটিলতার মধ্যেও পড়তে পারে যোগাযোগ মাধ্যমটি। নিউইয়র্ক এবং ম্যাসাচুসেটসের অ্যাটর্নি জেনারেলরা ফেসবুকের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু করেছেন।
thejoban
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন