ফেসবুক আজকাল ফেক আইডিতে ভরপুর। কেন জানি মনে হয় এর শতকরা ষাট ভাগই ফেক আইডি। একটি চক্রই আছে যাদের একেকজনের বিভিন্ন নামে ফেসবুকে আইডি রয়েছে। এদের কাজই হল মেয়েদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করা। মেয়েদের ছবি শেয়ার করে আজেবাজে কমেন্ট করা যেন এখন রেওয়াজ হয়ে গেছে প্রতারক চক্রের। কখনওবা ফেসবুক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করে, তারপর ইনিয়ে-বিনিয়ে মেয়েদের ছবি তুলে বখাটেরা আরেক ধরনের প্রতারণা করে থাকে। অর্থাৎ মেয়েদের ছবি দিয়ে আইডি খোলে ফেসবুকে। ফেসবুকে সহজসরল লোকেরা সুন্দরী মেয়ের ছবি দেখে তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। দেখা গেল সুন্দরীর আড়ালে এক বখাটে প্রতারক এমনসব কথা লিখে বা এমনসব ছবি পাঠায় যা দেখে কোনো কোনো যুবক মেয়েটির প্রেমে পড়েও যায়। একপর্যায়ে দেখা করতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। কিন্তু সে যে মেয়ে নয়, তা বুঝতে পারে না। নির্জন জায়গায় ডাকে, তারপর মেয়ে নামের ওই বখাটে পুরুষটি মোবাইল, টাকা, স্বর্ণের অলঙ্কারসহ সব ছিনিয়ে নেয়।
কতিপয় যুবকের কাজই হল মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা। অতঃপর কয়েকদিন যেতেই শুরু করে কুপ্রস্তাব দেয়া। কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় মেয়ের সম্পর্কে আজেবাজে কথা। কেউবা মেয়েটিকে আড়ালে-আবডালে নিয়ে ধর্ষণ করে বা আপত্তিকর ছবি তুলে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। আমার তো মনে হয়, আজ যারা ফেসবুক ব্যবহার করছে তাদের একটা অংশ নোংরা শ্রেণীর পুরুষ। তাদের কাজই হল নারীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো, তাকে ব্ল্যাকমেইল করা, গভীর রাতে অশ্লীল প্রস্তাবের মাধ্যমে উত্যক্ত করা, পোস্টে আপত্তিকর মন্তব্য করা।
পরবর্তীকালে ওই নারীদের বিভিন্নভাবে হেনস্থা করে থাকে বখাটেরা। এই বখাটেদের একটা নয়, দুইটা নয়- দশ কী বারোটা করে ফেসবুকে আইডি থাকার কথাও শোনা যায়। এরা এতটা চতুর ও বেপরোয়া যে একটি আইডি কোনো মেয়ে ব্লক দিলে আরেক আইডি দিয়ে ওই বখাটে আবার উত্যক্ত করতে থাকে। ওই উত্যক্তকারী যুবকের সঙ্গে আরও কিছু যুবক থাকে, যারা নারীদের সম্পর্কে কুৎসা রটানো লেখাগুলো ও নারীর ছবি শেয়ার করে বেশি করে প্রচারণা চালায় ফেসবুকে। ফেসবুকে নোংরামি এমন পর্যায়ে চলে গেছে, যা খুবই দুঃখজনক।
বস্তুত পত্রমিতালিরই নবভার্সন হল ফেসবুক। আমি পত্রমিতালি যুগের একজন হয়ে এই ৬৬ বছর বয়সে ফেসবুক চালাচ্ছি। এ দুইয়ের তুলনা করে বলব, ফেসবুকের মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গে একজন আরেকজনের খবরাখবর জানতে পারছি, একে অপরের নিত্যনতুন ছবি শেয়ার করতে পারছি। মন খুলে সব কথা জানাতে পারছি। পত্রমিতালি নামে একটা বইও লিখেছি। ১৯৬৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আমার জীবনে ১০ হাজার পত্রবন্ধু-বান্ধবি এসেছিল, দূর-দূরান্তে বহুজনের বাড়িতে গিয়েছি, থেকেছি। পত্রমিতালির যুগে কোনোরকম প্রতারণা দেখিনি। হয়তো সে যুগের মানুষ ছিল সহজ-সরল। আজ ফেসবুকে জড়িয়ে যা দেখছি, যা শুনছি তাতে মনটা নানাভাবে বিষিয়ে উঠেছে। কখনও কখনও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি।
ফেসবুকে অশ্লীল কথাবার্তা প্রচার যারা করছেন তাদের বলতে বাধ্য হচ্ছি, এ থেকে বিরত থাকুন। কারণ আপনাদেরও মা-বোন আছে। ফেসবুকে কোনোরকম প্রতারণার ফাঁদ, অশ্লীলতা, নোংরামি, নারীকে কুপ্রস্তাব দেয়া, মিথ্যাচার ইত্যাদি আর দেখতে চাই না। ফেসবুক হোক সুন্দর ও আনন্দময় এক সামাজিক মাধ্যম।
লিয়াকত হোসেন খোকন : প্রাবন্ধিক, মিরপুর, ঢাকা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন