ভ্যাট আরোপের ফলে আঁতুরঘরেই প্রাণ যেতে বসেছে দেশে সংযোজিত মোবাইল হ্যান্ডসেট শিল্পের। তাই প্রস্তাবিত বাজেট সংশোধন করা না হলে ঝুঁকির মুখে পড়বে ৫০০ কোটি টাকার প্রাথমিক বিনিয়োগ। কর্মসংস্থান হারাতে পারে দুই হাজারের বেশি কর্মী। অবৈধ পথে মোবাইল আমদানি বেড়ে গিয়ে বিপুল অংকের রাজস্ব হারাবে সরকার। ১০ হাজার কোটি টাকার এই বাজার ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়বে।
বাজেট উত্তর বিশ্লেষণে এমনটাই বলছিলেন, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসেসিয়েশন (বিএমপিআইএ) সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব।
তিনি বললেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনে এবং মোবাইল যন্ত্রাংশ আমদানিতে ব্যাপক শুল্ক ছাড়ে সরকারের আহবানে কারখানা করতে উদ্যোগী হয়েছেন। ইতিমধ্যে স্যামসাং, সিম্ফনি, আইটেল, ওয়ালটন ও উই সংযোজন কারখানা স্থাপন করে ফেলেছে। যেখানে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন এক বছর ধরে বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপন শেষে যখন উৎপাদনে যাওয়ার সময় ঠিক তখনই এই ভ্যাটের খড়গ।
তিনি আরও বলেন, নতুন বাজেট অনুযায়ী তৈরি হ্যান্ডসেট আমদানিতে কর ৩১ দশমিক ১ শতাংশ আর দেশে সংযোজন করলে হবে ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ। তাই আরোপিত এই কর প্রত্যাহার না করলে স্থাপিত কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং এখানে কেউ আর কারখানা করবে না।
স্যামসাংয়ের কারখানা স্থাপনের দেশীয় অংশীদার ফেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান রুহুল আলম আল মাহবুব বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটের সঙ্গে জারিকৃত মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন -১৬৮ এর কয়েকটি শর্ত দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট সংযোজন ও উৎপাদন শিল্পের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
দলিল দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রজ্ঞাপনের শর্ত (ক)-তে বলা হয়েছে, ‘সংযোজন প্রতিষ্ঠান ব্যতীত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ইহা প্রযোজ্য হইবে।’ এই শর্ত অনুযায়ী শুধু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতামুক্ত থাকবে, সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান নয়। অথচ গত অর্থ বছরের বাজেটের সময় জারি করা প্রজ্ঞাপনে সংযোজন এবং উৎপাদনকারী উভয় প্রতিষ্ঠানকেই ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছিল।’
প্রজ্ঞাপনের শর্তের কথা তুলে ধরে বিএমপিআইএ বলছে, গত বছর প্রজ্ঞাপন জারি করে এ বছরই তার বিপরীত প্রজ্ঞাপন জারি করে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় পূর্ণাঙ্গ মোবাইল আমদানির খরচের চেয়ে স্থানীয়ভাবে সংযোজিত মোবাইলের খরচ বেশি পড়বে।
মাহবুব প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের সকল মোবাইল প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোই একটি পূর্ণাঙ্গ মোবাইল ফোন তৈরির জন্য অনেকগুলো সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে যন্ত্রাংশ সরবরাহ নিয়ে তা সংযোজনের মাধ্যমেই নিজস্ব ব্র্যান্ডের মোবাইল উৎপাদন করে। এরমধ্যে পিসিবিএ, ডিসপ্লে, আইডি হাউজিং, এসএমটি, চিপসেট, মেমোরি, ব্যাটারি, চার্জার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। যেখানে বিশ্বের কোনো কোম্পানিই এককভাবে সবগুলো যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করে না, সেখানে বাংলাদেশে তা কিভাবে সম্ভব?
প্রজ্ঞাপনের (ঙ) শর্ত অনুযায়ী যেসব যন্ত্রপাতি স্থাপনের কথা বলা হয়েছে, তাও ‘অবাস্তব’ এবং মূসক প্রজ্ঞাপনের (চ) শর্ত অনুযায়ী ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজনও ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে মনে করেন আল মাহবুব।
তাই প্রজ্ঞাপনটিতে ‘বাস্তবসম্মত’ শর্ত অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংযোজন শিল্পকে ভ্যাটমুক্ত করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন