১১ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার ফলটা অনেক মিষ্টি হল বাংলাদেশের। ঘরের মাঠে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের পর আরেক পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে টাইগাররা। ঢাকা টেস্টে সাকিব-তামিমদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ২০ রানে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
২০০৬ সালে সবশেষ রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্টে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। এবার অসিদের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে জয়ের মধ্য দিয়ে যেন প্রতিশোধ নিচ্ছে বাংলাদেশ।
লক্ষ্য: ২৬৫।
মিরাজের বলে আউট লায়ন: শেষ মুহূর্তে এসে বাংলাদেশি বোলারদের হতাশায় ফেলে দেন নবম উইকেটের নাথান লায়ন ও প্যাট কামিন্স জুটি। তবে তাইজুলের পরিবর্তে বোলিংয়ে এসে নাথান লায়নকে ফেরালেন মিরাজ। ফলে তাদের ২৯ রানের জুটির অবসান হয়। ৬৭ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে প্রথম স্লিপে দুর্দান্ত এক ক্যাচে ১২ রান নিয়ে পিচে থাকা লায়নকে ফেরান সৌম্য সরকার।
সাকিবের বলে বোল্ড ম্যাক্সওয়েল: লাঞ্চের পর ফিরে ওভারের প্রথম বলেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে বোল্ড করে ফেরালেন সাকিব আল হাসান। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে ক্রিজে অনেকটা ধৈর্য্য ধরে প্রতিরোধের চেষ্টা করছিলেন আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান ম্যাক্সওয়েল। কিন্তু তাকে দাঁড়াতে না দিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের পঞ্চম শিকার হিসেবে ম্যাক্সওয়েলকে বোল্ড করেন সাকিব। সাজঘরে ফেরার আগে ২৫ বলে ১৪ রান করেন ম্যাক্সওয়েল।
প্রথম সেশনে ৫ উইকেট: ১০৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে আজ চতুর্থ দিন শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। ক্রিজে বিপদজনক হয়ে ওঠা ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের শুভসূচনাটি করেন সাকিব আল হাসান। আজ ৯০ রানের খরচে লাঞ্চের আগেই ৫টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশি স্পিনাররা। জয়ের জন্য ৬৬ রান দরকার অসিদের। অন্যদিকে মর্যাদার এ টেস্টে জয় পেতে আর মাত্র ৩টি উইকেট দরকার বাংলাদেশের। লাঞ্চের পর বাকি তিন ব্যাটসম্যানকে দ্রুত ফিরিয়ে অসিদের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ নিতে চাইবে সাকিব-তাইজুলরা।
তাইজুল ফেরালেন অ্যাগারকে: অস্ট্রেলিয়া দলের সপ্তম উইকেটটি তুলে নিলেন তাইজুল ইসলাম। নিজের বলেই অ্যাস্টন অ্যাগারকে ক্যাচ তুলে নিয়ে সাজঘরে ফেরান তাইজুল। দ্বিতীয় ইনিংসে এটি তার দ্বিতীয় উইকেট। ১৩ বল খেলে ২ রান করে আউট হয়েছেন অ্যাগার।
সৌম্যর দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরলেন হ্যান্ডসকম্ব: অধিনায়ক স্মিথের আউটের পর অসি ব্যাটসম্যানদের কিছুটা চেপে ধরেছে বাংলাদেশি বোলাররা। ইনিংসের ৪৯ তম ওভারে তাইজুলের করা দ্বিতীয় বলে ক্যাচ তুলে দেন হ্যান্ডসকম্ব। দুদান্ত প্রচেষ্টায় সেই ক্যাচ লুফে নিয়ে তাকে বিদায় করেন সৌম্য সরকার।
সাকিবেই বধ স্মিথ: সেঞ্চুরি করা ওয়ার্নারের পর অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে কিছুটা স্বস্তি ফেরালেন সাকিব আল হাসান। গতকাল ২৫ রানে অপরাজিত থাকা স্মিথ আজ সতীর্থদের যোগ সঙ্গ দিয়ে আসছিলেন। শুরুতে ওয়ার্নার আউট হওয়ায় তার সঙ্গে ১৩০ রানের জুটি ভাঙ্গে। এরপর ক্রিজে আসা হ্যান্ডসকম্বের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ার আগেই স্মিথকে ফেরালেন সাকিব। ব্যক্তিগত ৩৭ রানে সাকিবের বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন যান অসি দলপতি।
বিপদজনক ওয়ার্নারকে ফেরালেন সাকিব: গতকাল ১৪ রানে জীবন পাওয়া ওয়ার্নার আজ তুলে নিলেন এশিয়াতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। তবে সেঞ্চুরির পর বিপদজনক সেই ওয়ার্নারকে ফেরালেন সাকিব আল হাসান। সাকিবের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়া ওয়ার্নারকে আউট ঘোষণা করেন আম্পায়ার আলিম দার। পরে রিভিউ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি অসি ওপেনারের। সাজঘরে ফেরার আগে ১৩৫ বলে ১৬ চার ১ ছক্কায় ১১২ রানের ইনিংস খেলেন ওয়ার্নার। তার আউটের ফলে স্টিভেন স্মিথের সঙ্গে ১৩০ রানের জুটি ভেঙেছে।
ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি: ঢাকা টেস্টের চতুর্থ দিনে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি তার ১৯তম সেঞ্চুরি। উপমহাদেশে মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরি। শতরান পূরণ করতে ১২১ বল মোকাবিলা করে ১৫ চার ও ১টি ছক্কা হাঁকান অসি ও ওপেনার। প্রথম ইনিংসে ৮ রানে আউটের পর দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলছিলেন ওয়ার্নার। গতকাল ৭৫ রানে অপরাজিত থাকার পর আজ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। ইনিংসের ৩৯ তম ওভারের তাইজুলের করা প্রথম বলে ডাবলস নিয়ে সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি।
পথের কাঁটা ওয়ার্নার-স্মিথ: ২৮ রানে ২ উইকেটের পর আর কোনো বিপদ ছাড়াই ১০৯ রানে গতকাল দিন শেষে করেছে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের জয়ের পয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অস্ট্রেলিয়া দলের দুই বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার ও অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। জয়ের জন্য চতুর্থ দিনে দেড়শ অনেক বড় রান। ওয়ার্নার-স্মিথের ভয়ঙ্কর জুটি ভাঙলেই বিপর্য় আসতে পারে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ে লাইনআপে। চতুর্থ দিনের শুরুতে তাদের মূল্যবান উইকেট দ্রুত পতনের প্রত্যাশা থাকবে টাইগার সমর্থকদের।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন