পাকিস্তানের কাছে কুপোকাত হয়েছে বিশ্ব একাদশ। মঙ্গলবার লাহোরে তিন ম্যাচ টি২০ আন্তর্জাতিক সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তান ২০ রানে জিতেছে। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান করেছিল ৫ উইকেটে ১৯৭। জবাবে বিশ্ব একাদশ নির্ধারিত ২০ ওভারে করে ৭ উইকেটে ১৭৭ রান। আজ বুধবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে।
পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমদ পরে বলেছিলেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর এটাই তার কাছে সবচেয়ে বড় জয়।
পাকিস্তানের বাবর আজমের ঝড়ো গতিতে ৮৬ রানই ম্যাচের ফয়সালা করে দিয়েছিল। তিনি ৫২ বলে ১০টি চার আর ২টি ছক্কা দিয়ে ৮৬ রান করেছিলেন। এছাড়া শোয়েব মালিক ২০ বলে ৩৮, ইমাদ ওয়াসিম ৪ বলে ১৫ রান করে স্বাগতিক দলকে বিশাল স্কোর গড়ে দেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে বিশ্ব একাদশের কেউ বড় কোনো স্কোর করতে পারেননি। ড্যারেন স্যামি এবং অধিনায়ক ডু প্লেসিসের ২৯ রানই ছিল সর্বোচ্চ। এছাড়া হাশিম আমলা করেন ২৬ রান। বাংলাদেশের তামিম ইকবাল ১৮ রান করে ১৮ বরে।
এই ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরল পাকিস্তানে। বছরের পর বছর এক ঘরে থাকার পর মঙ্গলবার তারকা খচিত বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে শুরু হওয়া তিন ম্যাচ টি-২০ সিরিজ দিয়ে পাকিস্তানে পুনরুজ্জীবিত হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এ উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশটির সরকার।
লাহোরে ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা দল বহনকারী বাসে সন্ত্রাসী হামলায় আট ব্যক্তি নিহত হলে বিশ্বের শীর্ষ দলগুলো পাকিস্তান সফরে অস্বীকৃতি জানায়। কেবল ক্রিকেট নয়, ক্রীড়াঙ্গনের অধিকাংশ ইভেন্টই পাকিস্তান ত্যাগ করে। তাই দীর্ঘ আট বছর পর ক্রিকেট পাগল দেশটিতে এটিই সবচেয়ে হাই প্রোফাইল সিরিজ।
বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে এ সিরিজ দিয়েই চির দিনের জন্য সে কালো অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে এবং নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটাররা প্রথমবারের মতো নিজ দেশের ভক্তদের সামনে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবে বলে আশা করছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
পাকিস্তানের বর্তমান দলটির দু’একজন ছাড়া কারোরই দেশের মাটিতে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদসহ বর্তমান দলের মাত্র পাঁচ খেলোয়াড়ের দেশের মাটিতে খেলার অভিজ্ঞতা আছে।
সরফরাজ বলেন, ‘পাকিস্তানি ক্রিকেট ভক্তদের আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি তাদের সামনে খেলা আমরা মিস করেছি।’
‘তবে আমার দৃঢ় বিশ্বস এই সফরের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে আমরা অনেক বেশি ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাব। নিজ দেশের ভক্তদের জন্য জয় উপহার দিতে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
-বড় ইস্যুগুলো-
বিশ্ব একাদশের কোচ ও জিম্বাবুয়ের সাবেক ব্যাটসম্যান এন্ডি ফ্লাওয়ার বলেন, ‘এ সিরিজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই অনুধাবন করতে পারবে যে ক্রিকেটে জয়ের চেয়ে অনেক বড় কিছু এখানে জড়িত।’
‘তবে আমি মনে করি, দারুন সব খেলোযাড় যখন একটা দল হিসেবে মাঠে নামবে তখন নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতা চলে আসবে এবং সমন্বিতভাবে ম্যাচ জয়ের জন্য তারা তাদের সর্বশক্তি ব্যবহার করবে।’
ইংল্যান্ড দলের সাবেক কোচ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাটকীয়ভাবে পাকিস্তানে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এখনো হামলা চালানোর ক্ষমতা রাখে। সরকার কোনো ধরনের ফাঁক রাখতে চাইছে না।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে যাওয়া-আসার সময় দলগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে আইন-শৃংখলা বাহিনীর আট হাজার সদস্য।
২৭ হাজার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামের চার পাশের সকল সড়ক ও দোকান বন্ধ থাকবে। কয়েক স্তরের তল্লাশি চৌকি পেড়িয়ে দর্শকদের মাঠে প্রবেশ করতে হবে।
-দীর্ঘ প্রতিক্ষা-
স্টেডিয়ামের চারপাশের কিছু বিক্রেতা নিরাপত্তা বিষয়ে বাড়াবাড়ির অভিযোগ করেছে।
স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ ফারুক গর্বের সহিত বলেন, ‘টিকেট পাওয়ার আগে আমাকে সাত ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
২০০৯ সালের পর থেকে পাকিস্তান তাদের অধিকাংশ ‘হোম’ ম্যাচ সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলতে বাধ্য হয়েছে। পিসিবির দাবী এ জন্য তাদেও ১২০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
গত জুনে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয়ী পাকিস্তান ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ ডু প্লেসিসের নেতৃত্বাধীন বিশ্ব একাদশে তার সতীর্থ হাশিম আমলা, ডেভিড মিলার, বাংলাদেশের তামিম ইকবাল এবং অস্ট্রেলিয়ার জর্জ বেইলিকে নিয়ে রয়েছে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ।
-আইসিসি স্বীকৃতি-
২০১০ টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যান্ড অধিনায়ক ৪১ বছর বয়সী পল কলিংউডকেও তারা অবসর ভেঙ্গে এ সিরিজে আনতে পেরেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার মরনে মরকেল ও ইমরান তাহিরের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বেন কাটিং এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যামুয়েল বদ্রি, ড্যারেন সামির সমন্বয়ে রয়েছে শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ বিভাগ।
পিসিবি চেয়ারম্যান নাজাম শেঠি বলেন, ‘আমি মনে করছি, এই সিরিজ পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দরজা খুলে দেবে।’
ইন্টার্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে।
মঙ্গল, বুধ ও শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য তিন ম্যাচকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে আইসিসি। সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ গ্রেট রিচি রিচার্ডসনকে ম্যাচ রেফারি হিসেবে পাঠিয়েছে। শ্রীলংকান বাসে হামলার পর প্রথমবারের মত কর্মকর্তা পাঠালো বিশ্ব ক্রিকেটের নির্বাহী সংস্থাটি।
আইসিসি প্রধান নির্বাহি ডেভিড রিচার্ডসন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আইসিসি তার সকল সদস্য দেশে নিরাপদে নিয়মিত ক্রিকেট আয়োজন দেখতে চায় এবং লাহোরে বিশ্ব একাদশের খেলাটা পিসিবির জন্য কেটা বড় পদক্ষেপ।’
এই সিরিজের পর নিরাপদে প্রতিনিয়তই পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হবে বলেও আশাবাদী তিনি।
সিরিজের ফল যা-ই হোক না কেন কোনো দুর্ঘটনা ছাড়া এটা সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হলে আগামী মাসে শ্রীলংকা দল পাকিস্তান সফর করবে।
নিরপেক্ষ ভেন্যুর কথা উল্লেখ করে পিসিবি শনিবার শ্রীলংকার বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ টি-২০ সিরিজের প্রাথমিক সুচি ঘোষণা করেছে। তবে কোনো অঘটন ছাড়া বিশ্ব একাদশের সিরিজ শেষ হলে লংকান সিরিজের ফাইনাল ম্যাচটি গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
তেমনটা ঘটলে হামলা হওয়ার সাড়ে আট বছর পর একই ভেন্যুতে ফিরবে শ্রীলংকা দল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন