৩-০! একটি বাস্তব স্কোরলাইন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন মৌসুমে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মঙ্গলবার রাতে এই ব্যবধানেই জুভেন্টাসকে হারিয়েছে বার্সেলোনা। ইউরোপের এলিট ক্লাবদের টুর্নামেন্টটিতে গত আসরে ঠিক একই ব্যবধানে বার্সাকে হারিয়েছিল জুভরা। সেটারই মধুর প্রতিশোধের রাতে লিওনেল মেসির জাদুতে আরও একবার জেগে উঠল কাতালানরা।
জুভেন্টাসের কাছে আগের হারের পর একটা বিষয় খুব আলোচনার জন্ম দেয়। সেটা গোলকিপার জিয়ানলুইজি বুফনের বিপক্ষে মেসির গোল করতে না পারা। গত মৌসুমে দুই লেগেই গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন এমএল টেন। সমালোচনার দাগটা আরও মোটা হয়, স্প্যানিশ সুপারকাপে বার্সা যখন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের কাছে দুই লেগে ৫-১ গোলে হেরে শিরোপা বিসর্জন দেয়।
যন্ত্রণাদায়ক পরাজয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় কোলাহলপূর্ণ গ্রীষ্ম। ক্লাব ছেড়ে নেইমারের প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনে চলে যাওয়া, মার্কো ভেরাত্তি এবং ফিলিপে কৌতিনহোর মত টপ টার্গেট খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তি করতে না পারা এবং চুক্তির বিষয় ঘোষণা হওয়ার পরও মেসির চূড়ান্ত স্বাক্ষর না করা। সব মিলিয়ে অনেক দুর্যোগ এবং বিষণ্ণতায় ঢাকা পড়ে ন্যু ক্যাম্পের আকাশ।
দলের পতন কাতালান ক্লাবের ভক্তদের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্লাব প্রেসিডেন্ট জোসেপ মারিয়া বার্তেমেউ সমর্থকদের আস্থা হারাতে থাকেন।
ঘরের ভেতরে যাই হোক, স্প্যানিশ সুপারকোপার পর থেকে বার্সা মাঠে যা করছে, সেটাও কিন্তু অবিশ্বাস্য (অবস্থার বিচারে)। নতুন কোচ আর্নেস্টো ভালভার্দের অধীনে লিগের তিন ম্যাচেই জিতেছে মেসিরা। এসব ম্যাচে রিয়াল বেটিস, আলাভেস এবং এস্পানিয়লের বিপক্ষে ৯টি গোল করেছে বার্সার আক্রমণভাগ। সেটা আবার কোনও গোল হজম ছাড়াই।
গোল না পেলেও অ্যাসিস্ট দিয়ে কাতালান জার্সিতে অভিষেক হয়েছে নতুন রিক্রুট উসমানে ডেম্বেলের। জুভেন্টাসের বিপক্ষেও প্রথম একাদশে নেমেও শুরুটা করেছেন দারুণ। জুভ ডিফেন্ডারদের একের পর এক ফাউল করার মধ্যে প্রথমার্ধ জুড়ে উজ্জ্বল ছিলেন ফরাসি ফরোয়ার্ড। সেইসঙ্গে ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন, একটু সময় পেলেই নিজেকে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত তিনি।
আর ডেম্বেলে, সুয়ারেজ, রাকিটিচদের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ানে মেসি যে ফুটবলটা খেলেছেন সেটা এক কথায় অপ্রতিরোধ্য!
ম্যাচের শুরুতে ঝাঁঝালো আক্রমণের আভাসই দিয়েছিল জুভেন্টাস। কিন্তু ২০ মিনিটেই তাদের খেলখতম করে দেন মেসি। ম্যাচের প্রথম দিকের মত শেষভাগেও যেটা করেছেন, যা অধিকাংশ সময়ই তিনি করে থাকেন। দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে জুভ ডিফেন্ডারদের সঙ্গে গোলকিপার বুফনকে দুইবার যেভাবে বোকা বানিয়েছেন, সেটা ছিল রীতিমত চোখ ধাঁধানো।
যদিও প্রতিদ্বন্দ্বী এসি মিলানের কাছে ডিফেন্সের অন্যতম ভরসা লিওনার্দো বোনুচ্চিকে হারানোর পর বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে ছাড়াই বার্সা ম্যাচে খেলতে হয়েছে জুভেন্টাসকে। বোনুচ্চিকে ছাড়া সামনের বাধাগুলো কিভাবে পাড়ি দেয় জুভরা সেটাও দেখার বিষয়।
কিন্তু জুভেন্টাসের বোনুচ্চি না থাকলেও বার্সার লিও আছেন। সেইসঙ্গে কোচ ভালভার্দের দর্শনের সঙ্গে সমন্বয়টাও প্রায় সেরে ফেলেছে মেসি-পিকেরা। কোচ ইঙ্গিত দিয়েছেন মৌসুমের বাকিটায় দারুণ কিছু উপহার দিতে প্রস্তুত বার্সা। বেদনাদায়ক গ্রীষ্মের পর. আর নতুন রিক্রুট করতে না পারা বার্সাকে তারপরও বাতিলের খাতায় ফেলা যায় না। কারণ লিওনেল মেসি যে এখনও তাদেরই রয়েছে। ফুটবল বিশ্লেষকদের অভিমত এমনই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন