বাংলাদেশ দলের ওপেনিং নিয়ে নতুন চিন্তা শুরুর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তামিম ইকবালের পার্টনার হিসেবে সৌম্য সরকার রয়েছেন ব্যর্থতায়। নিজেকে মেলে ধরতে একেবারেই ব্যর্থ এ বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। এ পর্যন্ত যে সুযোগটা পেয়েছেন সৌম্য, সেটা অন্য কোনো ক্রিকেটারের বেলায়ই হয়নি। দলে টিকে থাকার মূল বিষয় যদি হয়, পারফরম্যান্স। তাহলে সেটাতে সৌম্যের বেলায় কেন নয়? দশ টেস্ট ম্যাচে ২৯.৩৬ গড়ে রান করেছেন তিনি ৫৫৮। যার মধ্যে হাফ সেঞ্চুরি মাত্র চারটি। দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বশেষ টেস্ট ওপেনার মার্করামের ব্যাটের দিকে তাকালেই দেখা যাবে কতটা সফল। প্রথম টেস্টে ৯৭ করার পর দ্বিতীয় টেস্টে সেঞ্চুরি। সৌম্য কবে পৌঁছবেন ওই মার্কে? শুধু তা-ই নয়। প্রায় প্রতিটা টেস্ট ম্যাচেই সৌম্যই প্রথম আউট হয়ে দলকে চাপের মধ্যে ফেলে দেয়। এমনিতেই বাংলাদেশ দলের একটা কথা রয়েছে, সূচনা ভালো হলে শেষও ভালো।
সূচনাটা বারবার খারাপ করে দেন এ ব্যাটসম্যান। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে পচেফস্ট্রুমে ইনজুরিতে পড়ে খেলতে পারেননি। দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে নেমে রান করেছেন দুই ইনিংসে ১২। ৯ ও ৩। তামিম ইকবালের অবর্তমানে তাকে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবটা অমন। টেস্ট ম্যাচে সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি গত মার্চে শ্রীলঙ্কায় ও কলম্বোতে। ৬১ করেছিলেন তিনি। পরের ইনিংসে ১০ করে আউট। ওই হাফ সেঞ্চুরির পর টানা সাত ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি পর্যন্ত নেই তার। সেটা হোমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই টেস্টের চার ইনিংসসহ। দেশের বাইরে সবার কিছু না কিছু দুর্বলতা থাকে। কিন্তু হোমেই (ঢাকা ও চট্টগ্রাম) তার সর্বশেষ স্কোর ৩৩, ৯, ৯.৩।
এ তো গেল টেস্ট ম্যাচের চিত্র। ওয়ানডেতেও সৌম্য সরকারের পারফরম্যান্স একই রকম। তার ব্যাটে সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি এসেছে ডাবলিনে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৮৭ করেছিলেন। সে থেকে টানা পাঁচ ম্যাচে কোনো হাফ সেঞ্চুরি নেই। তার ইনিংসগুলো হচ্ছেÑ ০ (নিউজিল্যান্ড), ২৮ (ইংল্যান্ড), ৩ (অস্ট্রেলিয়া), ৩ (নিউজিল্যান্ড), ও ০ (ভারত)। এ পর্যন্ত ওয়ানডে খেলেছেন তিনি ৩১টি। যাতে রান করেছেন তিনি ৩৫.৫১ গড়ে. ৯৫৯। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফপ ছিলেন এ ব্যাটসম্যান।
কথাগুলো উঠে এসেছে কাল ব্লুমফন্টেইনে একমাত্র ওয়ানডে প্রস্তুতি ম্যাচে তার পারফরম্যান্সের কারণে। প্রতিটা ম্যাচেই তার ব্যাটে রান আসবে এ প্রত্যাশায় ঠেলে দেয়া হয় ওপেনিংয়ে। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ। দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ড একাদশের বিপক্ষে এক্সট্রা কোনো চাপ ছিল না প্রাকটিস ম্যাচ বলেই। কিন্তু সে ম্যাচে ৩ রান করেই আউট। তামিম খেলেননি। ফলে সৌম্য ও ইমরুল কায়েস ইনিংস ওপেন করেন। কিন্তু দলীয় ৩২ রানে সৌম্য ক্যাচ দিয়ে ফেরেন প্যাভেলিয়নে। ৩১ রানের মধ্যে তার ব্যাটে এসেছিল ৩ রান। কবে রান করবেন তিনি। কবে ফর্মে ফিরবেন এ বাঁ-হাতি। টেস্ট ক্রিকেটে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতার পর এবার ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। মাশরাফি-সাকিবে উজ্জীবিত বাংলাদেশ ভালো একটা ওয়ানডে সিরিজ খেলবে এমনটাই প্রত্যাশা।
সেখানে এমন ফপ ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কিভাবে সেটা কাভার করা সম্ভব। না পারছেন তিনি টেস্ট ম্যাচে, না ওয়ানডে। সর্বশেষ ১৩ ইনিংসে কোনো হাফ সেঞ্চুরি পর্যন্ত নেই এ ব্যাটসম্যানের। এমন অবস্থা তার এ-ই প্রথম নয়। আরো বহুবার হয়েছে। টানা ব্যর্থ। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে টিকে যান তিনি দলে। ঘরোয়া টপ অর্ডারে পারফরম্যান্স করা বহু ক্রিকেটার পারফর্ম করেও জাতীয় দলের কথা চিন্তাও করতে পারেন না। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটেও বাজে পারফরম্যান্স এ ব্যাটসম্যানের। কথিত রয়েছে হেড কোচ হাতুরাসিংহের খুবই আস্থাভাজন। হাতুরাসিংহের অনেক আস্থা।
এক দিন বিশ্ব ক্রিকেটে অনেক বড় একজন ব্যাটসম্যান হবেন। অনেক সফল হবেন সৌম্য। আদৌ তেমন কোনো লক্ষণ কী দেখা যায় সৌম্যতে। নাকি বাঁ-হাতি এ ব্যাটসম্যানেরই ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়া হচ্ছে। কারণ ব্যাটসম্যানরা আস্থাশূন্য হলে তাকে বিশ্রাম দেয়া হয়। নিজেকে গুছিয়ে আবার ফেরার সুযোগ থাকে তাতে। সৌম্য তো সে ফুরসৎও পান না। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং লাইনে কী এমন স্বপ্ন বিলাসের সুযোগ রয়েছে? যেখানে প্রতিনিয়ত চলছে ব্যর্থতা ও হতাশা, তেমন এক দলে।
ব্যাটিংয়ে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি
দক্ষিণ আফ্রিকার সফর সূচনায় তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচটা তবু ভালো হয়েছিল। ওয়ানডে সিরিজের আগে কাল যে ম্যাচটা খেলেছে বাংলাদেশ দল সেটা আসলে সেভাবে হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার বোর্ড একাদশের বিপক্ষে ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ। সেটা বড় ব্যবধানেও। সেটা নিয়ে আসলে প্রশ্ন না। প্রস্তুতি ম্যাচ তো এমনই। যেখানে ব্যাটসম্যানরাও অনেক কিছুর পরীক্ষা-নিরীক্ষাতে থাকেন। ফলে এ ম্যাচের রেজাল্ট তেমন মুখ্য না। এরপরও একটা কথা থেকেই যায়। তাই বলে কারোরই কি পারফরম্যান্সটা সেভাবে হবে না?
ব্যাট হাতে এক সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমান ছাড়া কারোরই হাফ সেঞ্চুরি নেই। বড় কথা ৫০ ওভার ব্যাটিংই করতে পারেনি টিম বাংলাদেশ। অল-আউট হয়েছেন তারা ২৫৫ রান করে ৪৮.১ ওভারে। পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব করেন ৬৮ রান ৬৭ বলে। এ ছাড়া লোয়ার অর্ডারে সাব্বিরের ৫৪ বলে করা ৫২ রান ইনিংনের উল্লেখযোগ্য। তামিম এ ম্যাচে খেলেননি। ফলে ইনিংস ওপেন করেন সৌম্য ও ইমরুল। সৌম্য টানা ব্যর্থতার ঘোরটোপে আছেন। এ ম্যাচেও ৩ রান করে আউট তিনি। ওয়ান ডাউনে নামা লিটন দাসও আউট হয়েছেন ৮ রান করে। ইমরুল অবশ্য ২৭ করেছেন। ৪-এ নেমে মুশফিক করেছেন ২২। অন্যদের মধ্যে মাহমুদুল্লাহ ২১, নাসিরের ১২ রান ইনিংসের উল্লেখযোগ্য।
ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন আড়াই শ’ বা তার ধারে কাছে থাকা রান তেমন রানই নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার একাদশের ব্যাটিং দেখে অন্তত তাই মনে হলো। স্বাগতিকেরা এ ম্যাচেও তাদের শক্তিমত্তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। দুই ওপেনার মার্করাম ও ব্রিজকে পাত্তাই দিচ্ছিলেন না বাংলাদেশের বোলারদের। এরা খেলেন ১৪৭ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ। এ সময় অবশ্য নাসির হোসেন এসে আউট করেন সেঞ্চুরির পথে থাকা মার্করাম। ৮২ করে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। ৬৮ বলে এক ছক্কা ও ৮ চারের সাহায্যে ওই রান করেন তিনি। এরপর আউট হন ব্রিজকে। দলীয় ১৭৪ রানে মাশরাফি বোল্ড করেন এ ব্যাটসম্যানকে। ৭১ রান করেছিলেন তিনি। এরপর জেপি ডুমিনি ও এবি ডিভিলিয়ার্স দলের ১৮৮ রান নিয়ে ব্যাটিং করছিলেন। এ ম্যাচে যে স্বাগতিকেরা সহজেই জিতে যাবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এ ম্যাচের ভুলত্রুটি শুধরে মূল ম্যাচে নামবেন মাশরাফিরা এটাই প্রত্যাশা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন