চলতি বছর তৃতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট দখলের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন পাকিস্তানি পেসার হাসান আলী। আবু ধাবীতে শ্রীলংকার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে ৩৪ রানে ৫ উইকেট দখল করে ক্যারিয়ারে ৫০ উইকেট দখলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন আলী। একইসাথে পাকিস্তানী বোলার হিসেবে দ্রুততম সময়ে ৫০ উইকেটের গর্বিত মালিক এখন হাসান আলী।
সাম্প্রতিক সময়ে বদলে যাওয়া পাকিস্তানকে যেমন ব্যাট হাতে ২৩ বছর বয়সী বাবর আজম প্রতি ম্যাচেই সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, একইভাবে একই বয়সে বল হাতে ওয়ানডে ক্রিকেটে দাপট দেখিয়ে চলেছেন হাসান আলী। আলীর গতির কাছে নতি স্বীকার করে লংকাদের ইনিংস ৪৯ ওভারে ২০৯ রানেই গুটিয়ে যায়। গত বছর আগস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হবার পরে ২৪ ম্যাচে তৃতীয়বার আলী ৫ উইকেট দখল করলেন। এর আগে আলী অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ উইকেট দখল করেছিলেন। দ্রুততম সময়ে উইকেটের হাফ সেঞ্চুরি করার তালিকায় ডান-হাতি এই পেসার পিছনে ফেরেছেন পাকিস্তানী গ্রেট ওয়াকার ইউনুস, সাকলাইন মুস্তাক ও শোয়েব আখতারকে।
একইসাথে ২০১৭ সালে আলী নিজেকে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় শীর্ষে নিয়ে গেছেন। এ পর্যন্ত তিনি চলতি বছর দখল করেছেন ৪০ উইকেট। ৩৬ উইকেট নিয়ে পরের অবস্থানে রয়েছেন ইংল্যান্ডের লিয়াম প্লানকেট ও রশীদ খান। এক ক্যালেন্ডার বছরে চতুর্থ পাকিস্তানী ও বিশে^র নবম বোলার হিসেবে আলী তিনবার ৫ উইকেট দখল করলেন। এর আগে ২০১১ সালে পাকিস্তানী হিসেবে শহীদ আফ্রিদী এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। জুনে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ে ৫ ম্যাচে হাসানের ১৩ উইকেট প্রাপ্তি বড় ভূমিকা রেখেছিল।
অভিষেকেই ইমামের সেঞ্চুরিতে সিরিজ নিশ্চিত করল পাকিস্তান
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান প্রধান নির্বাচক ইনজামাম-উল-হকের ভাতিজা ইমাম-উল-হক এর সেঞ্চুরিতে শ্রীলংকাকে তৃতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটে পরাজিত করেছে পাকিস্তান। তরুণ ওপেনার ইমাম-উল-হক এর গতকাল পাকিস্তানের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছে। এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক পাকিস্তান।
ইমামের দারুণ এই রেকর্ডের দিনে পাকিস্তানের হয়ে আরেকটি রেকর্ড গড়েছেন ডান-হাতি পেসার হাসান আলী। ৩৪ রানে ৫ উইকেট দখল করে পাকিস্তানের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম ৫০ উইকেট শিকারের মালিক এখন আলী। আবুধাবীর শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আলীর বোলিং তোপে লংকানরা ৪৮.২ ওভারে ২০৮ রানেই গুটিয়ে যায়।
ওয়ানডে অভিষেকে পাকিস্তানী হিসেবে দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে ১৩তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ইমাম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন। ১২৫ বলে ২১ বছর বয়সী ইমাম দুটি ওভার বাউন্ডারি ও পাঁচটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শততম রান পূরণ করেন। একমাত্র পাকিস্তানী হিসেবে ১৯৯৫ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে গুজরানওয়ালায় অভিষেকে সেঞ্চুরি করেছিলেন সেলিম এলাহী। কিন্তু ইমাম সেঞ্চুরির পথে ৮৯ রানে লাহিরুর গামাগির বলে উইকেট পিছনে নিরোশান ডিকবেলার ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরের পথে হাঁটা দিয়েছিলেন। কিন্তু টেলিভিশন আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবোরো নির্দেশ দেন ডিকবেলার গ্লাভসে জমা পড়ার আগে বল মাটি স্পর্শ করেছিল। ফলে স্বস্তি ফিরে পেয়ে সেঞ্চুরি পূরণ করেন ইমাম। মোহাম্মদ হাফিজ ৩৪ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচজয়ী রানটি নিয়েছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৪ সালে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালেও ইমাম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন।
ইমাম জানিয়েছেন আম্পায়ার যখন তাকে আউট দেন তখন তিনি দারুন হতাশ হয়েছিলেন। ম্যাচ সেরা এই তরুণ বলেছেন, ‘আমি মনে করেছিলাম দারুন একটি সুযোগ আমার হাতছাড়া হয়ে গেল। কিন্তু হাফিজ আমাকে বলেছিলেন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে। আমি সত্যিই সৌভাগ্যবান। অভিষেকেই সেঞ্চুরি করতে পারাটা দারুণ গর্বের। এছাড়া এটি একটি রেকর্ডও।’
প্রথম ম্যাচে দুবাইয়ে ৮৩ রানে ও দ্বিতীয় ম্যাচে আবুধাবীতে পাকিস্তান ৩২ রানের জয় তুলে নেয়। সিরিজের বাকি ম্যাচগুলো শুক্রবার ও সোমবার শারজাহতে অনুষ্ঠিত হবে। এই নিয়ে টানা ৯টি ওয়ানডেতে পরাজিত হলো শ্রীলংকা।
ছোট রান তাড়া করতে নেমে ফাখার জামানকে নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ইমাম ৭৮ রানের ইনিংস গড়ে তুলেন। জামান ২৯ রানে জেফরি ভানডারসির বলে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন। আগের দুই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান বাবর আজম ৩০ রানে গামাগির বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া শ্রীলংকা ২৩ বছর বয়সী হাসান লেগ স্পিনার শাদাব খানের (২-৩৭) দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১০৬ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে। লংকান অধিনায়ক উপর থারাঙ্গা (৬১) ও ডিকবেলা (১৮) প্রথম উইকেটে ৫৯ রান যোগ করেছিলেন। কিন্তু ২৬তম ওভারে ১০২ রানে ২ উইকেট হারানোর পরে লংকানদের ইনিংস ভেঙ্গে পড়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে অপরাজিত ৫২ ও ৪৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হওয়া শাদাব একে একে দিনেশ চান্ডিমাল (১৯) ও থারাঙ্গার উইকেট দুটি তুলে নেন। আগের ম্যাচে ১১২ রানে অপরাজিত থাকা থারাঙ্গা ৮০ বলের ইনিংসে পাঁচটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। এর আগে ইনিংসের শুরুতে দ্রুত উইকেট তুলে নেয়া হাসান ক্যারিয়ারের ২৪তম ওয়ানডেতে ৫০ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ডিকবেলার পরে তিনি সাজঘরে ফেরত পাঁঠিয়েছেন চামারা কাপুগেদারা (১৮), মিলিন্ডা সিরিবার্ধানে (২) ও ভানডারসেকে (০)।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
শ্রীলংকা : ২০৮ অল আউট, ৪৮.২ ওভার (থারাঙ্গা ৬১, থিরিমান্নে ২৮: আলী ৫-৩৪, শাদাব ২-৩৭)
পাকিস্তান : ৩ উইকেটে ২০৯, ৪২.৩ ওভার (ইমাম ১০০, হাফিজ ৩৪*: পেরেরা ১-২২)
ফল : পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : ইমাম-উল-হক (পাকিস্তান)
সিরিজ : পাঁচ ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন