অভিষেকেই পাঁচ উইকেট। তাও আবার ভারতের মতো দলের বিপক্ষে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ দলের অপরিহার্য একজন সদস্য তাসকিন আহেমদ। সীমিত ওভারে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করায় এখন টেস্ট দলেও নিয়মিত এ পেসার। কিন্তু চলতি বছরটা ভালো যাচ্ছেনা তার। শেষ চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে উইকেটশূন্য। বোলিংয়ে আগের মতো আগ্রাসনটাও অনুপস্থিত। হঠাৎ করেই যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন তিনি। তবে ক্রিকেটের প্রতি তাসকিনের মনোযোগটা ঠিক আগের মতো দেখছেন না বাংলাদেশ দলের সাবেক পেসার তারেক আজিজ খান। অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পেসারদের অনুশীলন পদ্ধতি নিয়েও। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রুবেল হোসেনের চার উইকেট পাওয়াকে স্রেফ ভাগ্য বলেই মনে করছেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বিবর্ণ তাসকিন আহমেদ। পচেফস্ট্রুম টেস্টের দুই ইনিংসেই ছিলেন খালি হাতে। এরপর দুটি ওয়ানডে খেললেও নেই কোন সাফল্য। শুধু তাই নয় মারও খাচ্ছেন প্রচুর। বল হাতে তার দৈন্যদশা দেখে সমালোচনায় বিভোর ভক্তরা। তবে তাসকিনের অফ ফর্মটা সাম্প্রতিক সময়ে নয়। চলতি বছরেই বলার মতো কিছু করতে পারেননি তিনি। তবে মনঃসংযোগের অভাবকেই দায়ী করছেন তারেক আজিজ। পরিবর্তন ডট কমকে তিনি বললেন, ‘আমার মনে হয় তাসকিনের মনোযোগে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যার কারণে সে পারছে না। এ ধরণের ক্রিকেটে মনোযোগটা যেমন থাকা উচিৎ তাতে কিছুটা ঘাটতি আছে।’
এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশের পেসারদের অনুশীলন পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি, ‘আরেকটা ব্যপার যেটা মনে হয়, আমাদের যে অনুশীলন পদ্ধতিটা আছে সেখানেও একটু ঘাটতি আছে। জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা অনুশীলনে চার পাঁচ ওভারের বেশি বোলিং করেন না। এখন যদি নেটে পর্যাপ্ত পরিমাণ বল না করে ম্যাচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বোলিং করতে যান তাহলে তো তা বেশ কঠিন। তাও যদি হয় টেস্ট ম্যাচে! পেস বোলাররা অনুশীলনে পরিশ্রমের মাত্রাটা কমিয়ে দিয়েছে এটা আমরা যারা বাইরে আছি তাদের অভিমত। আমার বিশ্বাস এ সিরিজ শেষে এবার আমাদের ম্যানেজমেন্ট এ বিষয়ে নজর দিবে।’
কথা প্রসঙ্গেই তারেক আজিজ বললেন বাংলাদেশের বর্তমান ঘরোয়া ক্রিকেটের কথা। কয়জন পেসার সেখানে নিয়মিত বোলিং করছেন? যারা খেলছেন তারা কতটুকু সুযোগ পাচ্ছেন? কিংবা জাতীয় দলে যারা খেলছেন তারা ফার্স্ট ক্লাসে কতটুকু সময় দিচ্ছেন? কথার ইঙ্গিতটাও স্পষ্ট, ‘নেটে চার পাঁচ ওভার বল করে টেস্ট খেলার মতো উপযোগী হওয়া যাবেনা। আরও অনেক পরিশ্রম করতে হবে। আরও অনেক বেশি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলতে হবে।’
পুরো ক্যারিয়ারে মাত্র ১০টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেছেন (টেস্ট অভিষেকের আগে) তাসকিন। তাতে করেছেন ১৩৩৮টি বল। যার শেষটি ছিল ২০১৩ সালে বিসিএলে উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে মধ্যাঞ্চলের হয়ে। বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে চার বছর না খেলেই টেস্ট অভিষেক হয় এ তরুণের। তার প্রভাবটাই কি পড়ছে তাসকিনের পারফরম্যান্সে? কারণ টেস্টে অভিষেকের আগে সীমিত ওভারের ম্যাচে নিয়মিতই পারফরম করেছিলেন তিনি। ২৩টি ওয়ানডেতে ২৭.৭৯ গড়ে পেয়েছিলেন ৩৫টি উইকেট। যেখানে টেস্ট অভিষেকের পর ৮ ম্যাচে ৪৫.২৫ গড়ে পেয়েছেন ৮টি উইকেট। টি-টুয়েন্টিতেও একই অবস্থা। টেস্ট অভিষেকের আগে ১৩ ম্যাচের ১১ ইনিংসে বল করে ৩০.৭৯ গড়ে পেয়েছিলেন ৯টি উইকেট। ওভার প্রতি রান দিয়েছিলেন ৬.২৫ রান। আর টেস্ট অভিষেকের পর ২ ম্যাচে ৭০.০০ গড়ে ১ উইকেট। ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ১০.২৪। আর টেস্টেও বিবর্ণ। ৫ টেস্টে ১০ ইনিংসে উইকেট ৭টি। গড় ৯৭.৪২।
দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্টের পর ওয়ানডেতেও হোয়াইটওয়াশের পথেই আছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ১০ উইকেটে হারের লজ্জা পায় বাংলাদেশ। তাও রেকর্ড গড়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে কিছুটা উন্নতি। তাও ১০৪ রানের হার। সে ম্যাচে ভালোই বল করেছিলেন রুবেল। ৪টি উইকেট পান। তবে এটাকে স্রেফ ভাগ্য মনে করছেন তারেক আজিজ, ‘আপনি বলতে পারেন চার উইকেট পেয়েছে তাই খুব ভালো বল করেছে। এক প্রান্ত থেকে যদি চাপ সৃষ্টি হয় তাহলে অন্য প্রান্তে যে থাকে তার জন্য খেলাটা সহজ হয়ে যায়। আপনি দেখেন মাশরাফির বলগুলোতে সুযোগ এসেছে ইমরুল কায়েস ক্যাচ ফেলেছে। ডি ভিলিয়ার্সের ক্যাচ একটা উঠেছিল। ওর (রুবেল) নিজের ক্যারিয়ারটা সমৃদ্ধ হয়েছে। দল তো হেরেছে সেই বড় ব্যবধানে।'
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন