টেস্ট ক্রিকেট একটা সময় শুধু অস্ট্রেলিয়ার এবং ইংল্যান্ড মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতো। আজ যে গল্পটা জানাব, তা ১৮৮২ সালের এক সিরিজের। ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলতে এসেছে অস্ট্রেলিয়া, ওভাল টেস্টে সবাইকে চমকে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া জয় তুলে নিলো। ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম জয়। সবই ঠিক ছিল, খেলার মধ্যে জয়-পরাজয় থাকবেই। কিন্তু সমস্যাটা বাধাল ইংলিশ মিডিয়া!
তবে আসল বোমাটা ফাটাল লন্ডনের প্রধান সংবাদপত্র `দ্য স্পোর্টিং টাইমস্`। তাঁরা লিখল `ইংলিশ ক্রিকেট মরে গিয়েছে এবং সেই মরা পুড়িয়ে ছাই নিয়ে যাওয়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়`! এমন বাক্যবানে জর্জরিত অবস্থায় ইংলিশ ক্রিকেট তখন টালমাটাল। কাল্পনিক ছাই এর মিথটাও চালু হয়ে গেল পরবর্তী সিরিজ থেকেই।
অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী সিরিজ। সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন ইংল্যান্ড অধিনায়ক `আইভো ব্লাই` শপথ নেন সেই কাল্পনিক ছাই ফেরত আনার। তখন ইংলিশ মিডিয়া সেই সফরের নামকরন করল `অ্যাশেজ পুনরুদ্ধারের মিশন`। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই ধরাশায়ী হলো ইংল্যান্ড। তবে সিনেমার কাহিনীর মতই পরের দুটো ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ী হল ইংলিশরা। ইংলিশদের কাছে তখন হিরো বনে গেছেন ব্লাই।
গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি, উল্টো এখান থেকেই অ্যাশেজের শুরু হয়। একদল নারী মেলবোর্নে সিরিজ জয়ের পর, আনুষ্ঠানিকভাবে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ব্লাইকে স্তুপাকার একটি পাত্রে বেলের (স্ট্যাম্পের উপরে ব্যবহৃত উপকরন) ছাই প্রদান করেন। আর তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় অ্যাশেজ সিরিজ!
পাত্রটির মত দেখতে একটি রেপ্লিকাই সবসময় বিজয়ী দলকে প্রদান করা হত। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর আসল পাত্রটি এমসিসি যাদুঘরে সংরক্ষিত রাখা হয়। টেরাকোটা দ্বারা নির্মিত পাত্রটি এখনো সেখানেই সংরক্ষিত রয়েছে। তবে ১৯৯৮/৯৯ সিরিজ থেকে একটি ক্রিস্টাল নির্মিত পাত্র বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে প্রদান করা হয়।
অ্যাশেজ সিরিজ সবসময়ই পাঁচ ম্যাচের হয়। যদি সিরিজ ড্র হয়, তাহলে আগের সিরিজ বিজয়ীর কাছেই ট্রফি থেকে যায়। দুই বছর অন্তর অন্তর (সাধারণত) অনুষ্ঠিত হতে থাকা এই সিরিজে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া সমান ৩২ বার জয়লাভ করেছে। পাঁচটি সিরিজ ড্র হয়েছে।
অ্যাশেজ নিয়ে এতকিছু লেখার পেছনের গল্প হচ্ছে, রাত পোহালেই ২৩ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে পর্দা উন্মোচন হতে যাচ্ছে অ্যাশেজের ৭০ তম সিরিজের। সবথেকে পুরনো এবং অভিজাত এই মহারণ শুধুই কি একটি ক্রিকেট সিরিজ? ক্রিকেট ভক্তদের কাছে হয়ত তাই, কিন্তু ওই ক্রিকেট ভক্তরা যদি অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের হন?
তাহলে তাদের কাছে এটা শুধুই একটি সিরিজ নয়, এটা অহংকারের প্রতীক, এটা সম্মানের ধারক। ওই ছাইয়ের পাত্র তাদের কাছে শুধুই একটি ট্রফি নয়, এটা দুই দলের ক্রিকেট মুকুটের সবচেয়ে সুন্দরতম রত্ন। এবার ওই ছাই থেকে অমূল্য রতনের খোঁজে আরও একবার মহারণে মুখোমুখি হবেন স্মিথ এবং রুটের সৈন্যদল।
কী হবে এবারের অ্যাশেজে? ক্যাঙ্গারুর জয়োল্লাস নাকি ইংলিশ সিংহের গর্জন? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে নতুন বছরের প্রথম মাস পর্যন্ত!
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন