এক শিশি ছাই। এ নিয়ে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ধুন্দুমার ক্রিকেট যুদ্ধ। কালের বিবর্তনে ছাই নিয়ে সেই যুদ্ধই এখন ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি ঐতিহ্য। ‘ছাই’ যেন একটি সম্মান, একটি মর্যাদা। এই মর্যাদার লড়াই শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের মধ্যেই। এই গৌরবে ভাগ বসানোর অধিকার পৃথিবীর আর কারো নেই।
ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজকে কেন ‘অ্যাশেজ সিরিজ’ বলা হয়? আসুন খুঁজে নেয়া যাক তার কারণ এবং ইতিহাস।
১৮৮২ সালের ২৯ আগস্ট লন্ডনে প্রথম জন্ম ‘অ্যাশেজ’ শব্দটির। ১৮৮২ সালের ২৮ আগস্ট একমাত্র টেস্ট ম্যাচের সিরিজে ওভালে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। সেবার টেস্ট ম্যাচের সময় ছিল তিনদিনের; কিন্তু দ্বিতীয় দিনই শেষ হয়ে যায় ম্যাচটি। তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক টেস্টটি মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে জিতে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। ওই সময় ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংলিশদের হারনো ছিল রীতিমত স্বপ্নের বিষয়। আর ইংলিশরা তো কল্পনাই করতে পারেনি, ঘরের মাঠে এভাবে তারা হেওে যেতে পারে।
দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের এমন হারে স্বাগতিকদের ক্রিকেটের মৃত্যু তখনই দেখে ফেলেছিল সে দেশের ক্রিকেটবোদ্ধা ও গণমাধ্যমগুলো। ওই সময়কার সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা দ্য স্পোর্টিং টাইমসে বেশ বড়সড়ভাবে একটি রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়। যেখানে লিখা হয়, ‘ইংল্যান্ড ক্রিকেটের মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে গেল। এখন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের অস্তিত্ব বলতে শুধু ‘ছাই’ আছে। আর সেই ‘ছাই’ সঙ্গে নিয়ে আনন্দ করতে করতে দেশে ফিরে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া।’
মূলতঃ তখন থেকে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজের নামকরণ হয় ‘অ্যাশেজ’। পরবর্তী বছর ইংল্যান্ড যখন অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল টেস্ট সিরিজ খেলার জন্য, তখন ইংলিশ মিডিয়াগুলো লিখেছিল ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল অস্ট্রেলিয়া গিয়েছে সেই অ্যাশেজ পুনরুদ্ধারের জন্য। সেই থেকেই ‘অ্যাশেজ’ জয় কিংবা পূনরুদ্ধারই চলে আসছে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে।
ইংরেজি শব্দ অ্যাশেজের বাংলা অর্থ হল ‘ছাই’। শোয়াশ বছরের বেশি সময় আগ থেকে এখনও অ্যাশেজ নামে টেস্ট সিরিজ খেলছে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। যদি বাংলা অর্থটি ব্যবহার করা হয় তবে বলতে হবে ‘ছাই’ জয়ের লড়াইয়ে আবারো যুদ্ধের ময়দানে নামছে ইংলিশ ও অসি খেলোয়াড়রা।
১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বর্তমানে ‘টেস্ট’ নামে পরিচিত লঙ্গার ভার্সনের ক্রিকেটে প্রথম মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। যা ছিল ইতিহাসের প্রথম টেস্ট। ওই সময় ধরাবাধা কোন নিয়ম না থাকায় ‘যতক্ষণ বা যতসময় বা যতদিন’ খেলা যায় এমন চুক্তিতে টেস্টটি খেলতে নামে দু’দল। তবে অনির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও চারদিন খেলার পর ম্যাচের নিষ্পত্তি ঘটায় ওই সময়কার খেলোয়াড়রা।
১৫ মার্চ শুরু হওয়া টেস্টটি শেষ হয় ১৯ মার্চ। মাঝে একদিন অর্থাৎ ১৮ মার্চ বিশ্রাম নেয় তারা। ইতিহাসের প্রথম টেস্টটি ৪৫ রানে জিতে বড় ফরম্যাটে যাত্রা শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। ওই অনির্ধারিত সময়ের টেস্ট খেলার পর যেন আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের।
সেই সুবাদে ১৮৮১ সালের মাঝমাঝি সময় চার ম্যাচের সিরিজ খেলার সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড। তাতেই ব্যাপকভাবে প্রসার পেয়ে যায় টেস্ট ক্রিকেট। নিজেদের মাঠে চার ম্যাচের ঐ অনির্ধারিত সময়ের টেস্ট সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এরপর ১৮৮২ সালে টেস্ট নিয়ে নতুন নিয়ম চালু করে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। অনির্ধারিত সময়ের টেস্ট নীতি বাদ দিয়ে তিন দিনের ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সেই সুবাধে ওভালে ১৮৮২ সালের ২৮ আগস্ট তিন দিনের এক ম্যাচের সিরিজ খেলতে নামে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু দুই দিনে নিষ্পত্তি হয়ে যায় ম্যাচটি।
পরের সিরিজটি অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। তিন ম্যাচের ঐ সিরিজটি ‘অ্যাশেজ’ নামে পরিচিত লাভ করে। আর ১৮৮২ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে প্রথম ‘অ্যাশেজ’ নামে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ লড়াই শুরু করে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ২-১ ব্যবধানে প্রথম ‘অ্যাশেজ’ নামে টেস্ট সিরিজটি জিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় ইংলিশরা।
তাই বলা যায়, ১৮৮২ সালের শেষ দিকে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ‘অ্যাশেজ’ সিরিজ। ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট ৬৯টি ‘অ্যাশেজ’ সিরিজে মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। এখন পর্যন্ত ‘অ্যাশেজ’ লড়াইয়ে ৩২টি করে সিরিজ জিতেছে দু’দলই। আর ৫টি সিরিজে জয় বা হারের স্বাদ পায়নি কোন দলই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন