এই তো গত জানুয়ারি মাসের ৩০ তারিখের কথা। ক্যালেন্ডারের হিসাবে এক বছরও পেরিয়ে যায়নি। কুয়াশামোড়া শীতের এক সকালে দেশের মানুষ পেয়েছিল দারুণ এক সংবাদ। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইসলামিক সলিডারিটি আর্চারি প্রতিযোগিতায় সোনা জিতেছেন বাংলাদেশের হীরা মণি। সেটা তো ছিল তাঁর শুরু। আর্চারির কুড়িয়ে পাওয়া ‘হীরা’ নিজেকে কোথায় আরও উজ্জ্বল করে তুলবেন! না, তিনি এখন হারিয়ে যেতে বসেছেন। ঢাকায় অনুষ্ঠেয় এশিয়ান আর্চারিতে বাজে পারফরম্যান্সের কারণে দল থেকে বাদ পড়েছেন তিনি।
বছরের শুরুতে ১৪টি দেশের আর্চারদের অংশগ্রহণে প্রথমবারের মতো ঢাকায় বসেছিল আন্তর্জাতিক আর্চারির আসর। সেখানে রিকার্ভ বোয়ে মেয়েদের এককে আজারবাইজানের ইয়ালাসুল রামোজামোভাকে ৬-৪ সেটে হারিয়ে সোনা জয় করেছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়ে হীরা। তিনি হতে পারতেন এবারের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের বড় ভরসা। কিন্তু সেটা আর হলো কোথায়?
হীরার নিজেরও মন খারাপ। ভাবতেও পারেননি এভাবে বাদ পড়ে যাবেন। তবে এইচএসসি পরীক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কারণে ব্যস্ত থাকার প্রভাব পারফরম্যান্সে পড়েছে বলেই জানিয়েছেন তিনি। অসুস্থতাও একটা বড় কারণ, ‘আমার চিকুনগুনিয়া হয়েছিল। খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। তা ছাড়া এইচএসসি পরীক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য ছয় মাস প্র্যাকটিস করতে পারিনি।’
ইসলামিক সলিডারিটির পর থাইল্যান্ডের আরও একটি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন হীরা। এরপর থেকেই প্রায় ছয় মাস ছিলেন তির-ধনুকের বাইরে। ঈদুল আজহার পর ক্যাম্পে ফিরে নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াই করেছিলেন। কিন্তু পেরে ওঠেননি। ট্রায়ালে কৃতকার্য হতেও ব্যর্থ হয়েছেন। সলিডারিটিতে নিয়মিত ২৯০-এর ওপর স্কোর করেছিলেন। কিন্তু এখন ২৫০-এর আশপাশে। স্বাভাবিকভাবে দলে জায়গা হয়নি। শুধু ব্যক্তিগত ইভেন্টে নয়, দলগতভাবেও নেই তাঁর নাম।
অথচ সেদিন সোনা জয়ের পর এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়েই বেশি কথা হচ্ছিল। কারণ, ঘরের মাঠে এত বড় একটা আসরে তাঁকে ঘিরেই ছিল সম্ভাবনা। সলিডারিটি গেমসকে বলেছিলেন এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ‘ড্রেস রিহার্সাল’। সবকিছুই হয়ে গেল অতীত।
বড় বোন আদর করে নাম রেখেছিলেন হীরা। নামের প্রতি করেছিলেন সুবিচারও। তাই বলে এত অল্পতেই হরিয়ে যাওয়া!
হীরার মতো দুঃসংবাদ আছে আরও একটি। মেগা আসরে নেই শ্যামলী রায়। নামটা চেনা চেনা লাগছে, তাই না? হ্যাঁ, গত বছর রিও অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। এক বছর পেরোতেই শোনা যাচ্ছে তাঁর বিদায়ধ্বনিও। নিজের অসুস্থতাকেই ঢাল হিসেবে দাঁড় করালেন শ্যামলী, ‘আমি অনেক দিন অসুস্থ ছিলাম। ফুটবল এসে লেগেছিল আমার মাজায়। সেই থেকে ব্যথা। ফলে ভালোভাবে অনুশীলন করতে পারিনি’। এই তো সলিডারিতে শ্যামলীর অনবদ্য পারফরমেন্সে রিকার্ভ বোয়ের দলগত ইভেন্টে সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ।
সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়েরা হাজার সমস্যার চাপে পড়ে এভাবেই হারিয়ে যান প্রতিনিয়ত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন