স্টেডিয়ামের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড ১ এ ঠাসা দর্শকের মধ্যেও দুজনকে সহজেই স্পষ্ট করা যায়।সমস্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন মাঠের দিকে আর পাশে বসা বাংলাদেশির কাছে এক একটা প্রশ্ন ছুড়ছেন। সেই প্রশ্রে কখনও থাকছে ক্রিকেট, আবার কখনও এদেশের নানানকিছু।বাংলাদেশি তরুণ ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে সেই কৌতূহল মেটাতেই তাদের মুখ থেকে বেরোচ্ছে-‘ওয়াও’।
তারা পল আর সিয়ারল। ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার শহর থেকে বহু দূরের দেশ বাংলাদেশে এই নবদম্পত্তির ছুটে আসার মোট কারণ দুটো। এক: মধুচন্দ্রিমা; আর দুই: অবশ্যই বিপিএল।তাই এক ঢিলে দুই পাখি মারতেই নভেম্বরের এই সময়টা বেছে নেওয়া।
শুক্রবারের (২৪ নভেম্বর) পড়ন্ত বিকেল তখন।মাঠে চলছে রংপুর রাইডার্স আর খুলনা টাইটান্সের খেলা। খেলা দেখতে দেখতেই একরাশ কথা হলো পল আর সিয়ারলের সঙ্গে।
পেশায় ব্যবসায়ী পল আর নার্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণার্থী সিয়ারলের মন দেওয়া-নেওয়া চলছিল বহুবছর ধরে। বেশ কিছুদিন আগে সেই সম্পর্ককে বিয়েতে রূপান্তর দিয়েছেন দুজন।
‘বিয়ে হলো কিছুদিন হলো’-মুখে হাসির রেখা নিয়ে বললেন পল।
‘এরপর নানান ব্যস্ততায় মধুচন্দ্রিমায় যাওয়া হয়ে ওঠেনি। বাংলাদেশ খুব সুন্দর দেশ। এখানে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। এর সঙ্গে এদেশের মানুষের ক্রিকেট আবেগও জানা ছিল।কাছ থেকে সেসব দেখতে এই দেশকে বেছে নিলাম মধুচন্দ্রিমার জন্য।’-সোজাসাপ্টা জবাব পলের।
পল কিছুটা কথা বললেও সিয়ারলের মুখ থেকে যেনো কথাই বের হয় না। হাসি আর হ্যাঁ-না’তেই সীমাবদ্ধ লাজুক তরুণী।
তারা ১২ নভেম্বর বাংলাদেশে আসেন।এরপর ঢাকার এখানে ওখানে ঘোরার পর ১৫ নভেম্বর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যান ব্রিটিশ নব দম্পত্তি সিলেট সিক্সার্স ও খুলনা টাইটান্স এবং ঢাকা ডায়নামাইটস ও চিটাগং ভাইকিংসের খেলা দেখবেন বলে। কিন্তু বিধিবাম। বৃষ্টির কল্যাণে সেদিন একটি বলও মাঠে গড়ায়নি।
হতাশ হয়ে ফেরা পল-সিয়ারল তারপর তার চলে যান কক্সবাজার।লক্ষ্য ওই মধুচন্দ্রিমা।কক্সবাজারে কয়েকদিন কাটিয়ে তাদের পরবর্তী গন্তব্য হয় সেন্টমার্টিনে। সেখানে সময় কাটিয়ে পুনরায় কক্সবাজার। তারপর সোজাচট্টগ্রামে। লক্ষ্য না দেখা বিপিএল দেখা।
তাই দুপুরেই চলে আসেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামে বসেই মিশে গেলেন বাংলাদেশিদের সঙ্গে।
পাশে বসা বাংলাদেশি তরুণ রিয়াদুল ইসলাম বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় তাদের সঙ্গে দেখা। আমার গায়ে বাংলাদেশের জার্সি দেখে তারা জানতে চাইলেন খেলা দেখতে আসব নাকি? হ্যাঁ বলতেই তারা আমাদের সঙ্গেই মাঠে চলে আসেন। এই দেশের ক্রিকেট-মানুষ সম্পর্কে জানার বেশ আগ্রহ দুজনের।
খুলনা টাইটানস ড্রেসিংরুম লাগোয়া গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড ১ এ বসলেও দুজনের পল আর সিয়ারলের সমর্থন ছিল রংপুর রাইডার্সের দিকেই।
সমর্থনের কারণও খোলাসা করলেন দুজন।-‘আমাদের রবি বোপারা আছে, অ্যাডাম লাইথ আছে। তার সঙ্গে টি-টিয়েন্টির বড় নাম গেইল-ম্যাককুলামও একই দলে।সমর্থন তো করতেই হয় রংপুর রাইডার্সকে।
তবে দিনশেষে রংপুর রাইডার্সের হার দুজনকে কিছুটা বিবর্ণ করে দিলেও এই দেশটা দুজনের মনেই বেশ ভালো দাগ কেটেছে।
‘বাংলাদেশের মানুষ খুব অতিথিপরায়ণ। খুব সহজেই মিশে যেতে পারেন। দেখার জন্যও বাংলাদেশ দুর্দান্ত।’ পল আর সিয়ারলের যৌথ সার্টিফিকেট।
শুক্রবার রাতেই ঢাকায় ফিরবেন তারা। তারপর সোজা ইংল্যান্ড।
তার আগে অবশ্য বাংলাদেশ থেকে সুখস্মৃতির রসদই নিয়ে যাচ্ছেন দুজন...।
বাংলানিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন