আক্ষেপ। হতাশা। আরো কতো কি! হয়তো সেটা চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার। কিংবা সেটা দেশের টি-টুয়েন্টি অধিনায়ক হয়েও যার কাছ থেকে ব্যাটনটা নিয়েছেন তার কাছেই বিপিএলে শিরোপা খোয়ানো! তাও এমন বাজেভাবে, শোচনীয় রূপে! কেন? দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ দল ও শিরোপা জেতার অন্যতম দাবিদার ছিল তার দল। সেই তুলনায় প্রতিপক্ষ তো খোড়াতে খোড়াতে সুপার ফোরে। তারপর নক আউট পর্বে ওই দলের একের পর তিনটি নক আউট পাঞ্চে প্রতি প্রতিপক্ষের মাটিতে লুটিয়ে পড়া। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হয়ে ওঠে ওই কেন প্রশ্নটা? ফাইনালে মাশরাফি বিন মুর্তজার রংপুর রাইডার্সের এভাবে হার কেন? 'আমার ক্যাচ মিস'। অকপটে স্বীকার করে নিলেন সাকিব আল হাসান।
.
ক্রিস গেইল তখনো শান্ত মেজাজে। একটাও ছক্কা মারেননি। ২২ রান। মোসাদ্দেক হোসেনের বলে সোজা সাকিবের দিকে বল। জোরে। নিচু হয়ে বলটা হাতে নিতে গেলেন। সাকিবের মুঠো গলে শুধু বলটা বেরিয়ে গেল তাই না, মাটিতে লুটিয়ে পড়লো শিরোপাটা। তারপর আর গেইলকে পায় কে। একটু একটু করে নিজের খোলস খুলে বেরিয়ে পড়া। এবং ৬৯ বলে ১৮ ছক্কা ও ৫ চারে ১৪৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ফেলা। অনেক রেকর্ড ভাঙা যে সেঞ্চুরিটি সাকিবদের ছিটকে ফেলে কোন সুদুরে! গেইল হয়তো তার মনে মনে প্রত্যেক বলকে ক্যারিবিয়ান সমুদ্রের জলে পাঠানোর পরাবাস্তবতায় ডুবে ছিলেন। নিজের নাম দিয়েছেন অনেক আগে 'দ্য ইউনিভার্স বস'। সেটাই মনে ফাইনাল ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় মনে করিয়ে দিয়ে যান। তাও সেই প্রশ্নে। টি-টুয়েন্টিতে বিশ্বের সেরা আর কাউকে কি দেখেন নিজেকে ছাড়া?
প্রবল বেগে মাথা নাড়েন।
'না। না। না।' গেইলের সদর্প উচ্চারণ, 'আমিই একমাত্র একজন যে ইউনিভার্স বস। একেবারেই একমাত্র।'
সেই আক্ষেপেই পুড়ছেন সাকিব। আহা! গেইলকে আউট করতে চেয়েছিলেন শুরুতে। সুযোগ দিচ্ছিলেন না। জানেন কি করতে পারেন এই মানুষটা। কি তার সামর্থ্য। কেন এভাবে হারতে হলো এই প্রশ্নে তাই নিজের ওপর সব দোষ টেনে নিয়ে সাকিব এক বাক্যে দুষলেন নিজেকেই, 'আমার ক্যাচ মিস।'
১ উইকেটে ২০৬। ফাইনালের মতো ম্যাচে, নক আউট পর্বে এসেই দুর্ধর্ষ খেলতে থাকা রংপুরের এই গেইল এলিমিনেটর ম্যাচে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১২৬ রানের অপরাজিত ইনিংস। যা বিদায় করে দেয় খুলনাকে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সাথে ২। কিন্তু সাকিবের ওই ভুলেই তো সব সর্বনাশ তার দলের! ২০ ওভার পেরুলেই বোঝা যায়, শিরোপাটা মাশরাফিরই।
কিন্তু গেইলেই কপাল পুড়েছে জানিয়ে ৫৭ রানের হারে শিরোপা হারিয়ে সাকিব আরেক প্রশ্নে বলে যান, 'ও (গেইল) যদি ব্যাট করতে থাকে যে কোনো দলের জন্য সমস্যা হয়। ও শুরুতে আউট হয়ে গেলে তো টেনশন ছিল না। ও যেহেতু ২০ ওভার ব্যাট করেছে পুরো ২০ ওভারই টেনশন ছিল।'
সেই টেনশনটা থাকতো না গেইলকে ওভাবে নতুন জীবন নিজের হাতে সাকিব না দিলে। সেই দুঃখ নিয়েই হিসেব মেলান। যদিও কি হতে পারতো এখন আর তা ভেবে লাভ নেই। তবু সাকিবের বিশ্বাস, গেইলকে তখনও আউট করা গেলে শিরোপাটা তার হাতেই থাকতো। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা ডায়নামাইটসকে চ্যাম্পিয়ন করার গর্বটা থাকতো তার। নিজের বোলিং আক্রমণের ওপর তো দারুণ আস্থা। 'ওকে (গেইল) তখন আউট করা গেলে ওদের (রংপুর) ১৩০ রানের মধ্যে হয়তো অল আউট করতে পারতাম।'
কিন্তু সবশেষে দীর্ঘশ্বাস! দোষটা যে কেবল তারই! সাকিবের নিজেরই। এবং তা মাথা পেতেও নিতে এতটুকু সঙ্কোচ নেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন