ইংলিশ ক্রিকেট কিংবদন্তী ডবলিউ. জি. গ্রেস তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমি যখন লর্ডসে প্রথম খেলা শুরু করি (১৮৬৪ সালের দিকে) তখন মাঠের কোনো নির্ধারিত বাউন্ডারি ছিল না। কোনো বল যদি প্যাভিলিয়নে আঘাত হানতো, তা হলে চার রান পেতাম। এ আইনটিও এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। তখন বাকি বাউন্ডারি হিটের স্বাভাবিক পরিণতি ছিল বাতিল ঘোষিত হওয়া’।
এ এন হর্নবির এক ঘটনার পর বাউন্ডারি সম্পর্কিত চিন্তা-ভাবনা প্রাতিষ্ঠানকতার দিকে গড়ায়। হর্নবি একবার একটা বলের পেছনে এত দৃঢ়তা ও শক্তি নিয়ে দৌড়াচ্ছিলেন যে, দর্শকরা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। কিন্তু এক বৃদ্ধ পর্যাপ্ত সতর্ক না থাকার কারণে হর্নবির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মারাত্মক আহত হন।
মরিস গলসওয়ার্দি তাঁর ‘দি এনসাইকোপেডিয়া অব ক্রিকেট’-এ উল্লেখ করেছেন, ১৮৮৪ সালে ক্রিকেট বিধিতে সর্বপ্রথম বাউন্ডারির ধারণা অন্তর্ভুক্ত হয় ও ১৮৮৬ সালে থেকে তা কার্যকর হয় লর্ডসের ইটন বনাম হ্যারো দলের ম্যাচের মধ্য দিয়ে। আর চুয়াল্লিশ পায়ের দ্রুত ও প্রচণ্ডতম জীবন্ত খেলা ক্রিকেট শতাব্দীর পর শতাব্দী বিবর্তিত হতে হতে আজ নয়া মিলেনিয়ামে প্রবেশ করেছে।
বাউন্স না খেয়ে বলটি সোজা উড়ে বাউন্ডারি লাইন পেরুলে ব্যাটসম্যানের ঝুলিতে ছক্কা যোগ হয়। আইন সত্ত্বেও ১৯০৬ সালের প্রথম ভাগে হাতে গোনা কয়েকটি মাঠে তা অনুসৃত হতো। ১৯১০ সালের দিকে ছক্কা বিধি ব্যাপকভাবে চালু হয়। তবে ১৯০৬ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় ওভার বাউন্ডারির জন্য পাঁচ রান দেওয়া হতো।
এতো দীর্ঘ গৌরচন্দ্রিকার পরও ক্রিকেটে বাউন্ডারি নিয়ে বিভ্রান্তি সুরাহা হবার নয়। বাউন্ডারি কি সীমানা নাকি স্কোর? নাকি দুটোই? পিচ থেকে বাউন্ডারির দূরত্ব কম পক্ষে ৭৫ ফুট বলা হয়েছে। অর্থাৎ এখানেও ফাঁক রাখা হয়েছে। ৭৫ ফুট হতেই হবে- এমন আইন প্রণীত হয়নি।
সংগত কারণে বিশ্বের প্রতিটি পিচে চার ও ছয় রানের পরিমাপও সমান নয়। বিষয়টা আরেকটু খোলাসা করে বললে এটাই বলতে হয়: ১৯৫৭ সালে আইসিসি পিচের কেন্দ্র থেকে বাউন্ডারির দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু বহুবিধ জটিলতার কারণে ১৯৬৬ সালে আইসিসির কনফারেন্সে এ বিধি রহিত হয়।
আগের কথায় ফিরে আসি। সব বাউন্ডারির জন্য ব্যাটসম্যান বর্তমানের মতো চার অথবা ছয় রান পেতেন না। প্যাভিলিয়ন সীমান্ত ছাড়া অন্য প্রান্ত দিয়ে বল বাউন্ডারি ত্যাগ করলে ব্যাটসম্যান দুই রান পেতেন। এখানে এক হিটে ১০ রানের স্মরণীয় ঘটনাটি বলা যেতে পারে।
১৯০০ সালে লর্ডসে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে এমসিসির বিরুদ্ধে খেলতে নেমে ডার্বিশায়ারের এসএইচউড এমসিসির সিজে বার্নআপের ডেলিভারিতে হিট করে তা বাউন্ডারিতে পাঠান এবং দৌঁড়িয়ে চারটি রানও নেন। বাউন্ডারির কারণে তিনি আরো দুই রান পান। কিন্তু ওভার থ্রো হবার কারণে বলটি আবার বাউন্ডারি অতিক্রম করে। উডও এই ফাঁকে দৌড়িয়ে দুই রান নেন। ফলে তিনি মোট ১০ রান (৪+২+২+২) পান। অবশ্য এ আইন এখন আর নেই।
যাই হোক, ক্রিকেটে আরো এক ধরনের বাউন্ডারি দরকার আছে যা নির্মাণে আইসিসি পুরোপুরি সফল হয়নি। তাহলে ম্যাচ ফিক্সিং বাউন্ডারি। কড়কড়ে মার্কিন ডলার ক্রিকেট বাউন্ডারিতে প্রায় হামলা চালায়। অবশ্য স্যার পল কনডন নামক ইংল্যান্ডের এক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সতর্ক অধ্যবসায়ে ম্যাচ ফিক্সিং বাউন্ডারি নির্ধারণের জন্য দুরন্ত কোশেশ করেছিলেন। কিন্তু পুরোপুরি সফল হননি। এখনও ম্যাচফিক্সিং হয় আর আশরাফুলরা সরলতা দেখাতে গিয়ে ধরা খান!
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন