আড়াই দিনে ঢাকা টেস্ট শেষ হওয়ার সমালোচনা সহ্য করতে পারছেন না বিসিবির পরিচালক ও জাতীয় দলের টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। গতকাল সমালোচনার জবাব দিতে বেশ আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। বেশ ক’য়েকবার মিডিয়ার কঠোর সমালোচনাও করেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, আড়াই দিনে টেস্ট হারের পেছনে অন্য কিছুও থাকতে পারে সে ইঙ্গিতও দিয়েছেন। কিন্তু কী সেই রহস্য সেটা অবশ্য তিনি বলেননি। তবে এ হারের জন্য তিনি কাউকেই দোষ দিতে রাজি নন। প্ল্যানের বাস্তবায়ন যথার্থ হয়নি বলেছেন শুধু এটুকুই। যে শ্রীলঙ্কাকে শ্রীলঙ্কার মাটিতে হারিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। যে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চট্টগ্রাম টেস্টেও চমৎকার খেলেছে। সে দলটির হঠাৎ কেন ছন্দপতন সে জবাবটা তিনি দেননি। খালেদ মাহমুদ তার বিরুদ্ধে করা সমালোচনা নিয়েও কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আসলে এখানে (বাংলাদেশ দলে) কাজ করতে আমার আর ইচ্ছা করছে না। অনেক নোংরামি হচ্ছে। এখানে কাজ করলে অনেক প্রবলেম। এভাবে আর কাজ করার ইচ্ছা নেই। বড় কথা আমি এখনো বাংলাদেশ দলের সঙ্গে রয়েছি এটা অনেকেই চান না।’ তিনি বলেন, ‘দল খারাপ করলেই যত সমস্যা সৃষ্টি হয়ে যায়। এটা আর সহ্য করা যায় না। চন্দ্রিকা এসেছেন। বড় বড় কোচও এখানে এসেছেন। সে সময় হারলে সমস্যা নেই। বাংলাদেশী কেউ কাজ করলে তার অধীনে হারলেই যত সমস্যা। খারাপ আমি নেব না তা বলছি না। আমাকে এটাও নিতে হবে।’
সুজন বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছি। কিন্তু ভালো করলে প্রশংসা পাইনি। হারলে সব দোষ চলে আসে। সোস্যাল মিডিয়া, মিডিয়ায় কঠোর সমালোচনা। আবারো শুনি মাঠেঘাটে নাকি মারও খেতে পারি।’ মিডিয়ার (ও সম্ভবত অন্যদের, যারা স্টেডিয়ামের কাচ ঘেরা বক্সে বসে খেলা দেখেন যেমন সাবেক ক্রিকেটার, সংগঠক) সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কাচের মধ্যে বসে অনেক কিছুই বলা যায়। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে বাস্তবায়ন কঠিন ব্যাপার। আমি যতদূর মনে পরে ’৮৩ তে খেলা শুরু করেছি। খেলেছি ২০০৮ পর্যন্ত। আমরা কিছু হলেও বুঝি। কোনটাতে ভালো কোনটা খারাপ আপনারা (মিডিয়া) অবশ্যই ভালো বুঝেন, আমরাও কিছুটা বুঝি। বুঝি না এমনটা না। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু জিনিস স্টাবলিস্ট করা হয়। এখানে আমার কোনো স্বার্থ নেই। নিঃস্বার্থ কাজ করে যাচ্ছি। হাতুরাসিংহে কেন চলে গেলেন? কিছু কিছু বিষয়ে স্টাবলিস্ট করা হয়। এখন আবার গামিনির চাকরি খাওয়ার জন্য পেছনে লাগা হয়েছে। আমরা এগুলো বুঝি না তা নয়। বুঝি। এটা তো ঠিক না। ওর দোষ কী? ওর কাছে যেমন উইকেট চাওয়া হয়েছে। ও সেটাই করেছে। ওর তো কোনো দোষ নেই। ও যে উইকেট করে দিয়েছে তাতেও তো অনেক সাফল্য এসেছে। এ সিরিজে খারাপ করাতে ওর পেছনে কেন লাগা? এমন উইকেটে তো অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডকে হারানো গেছে। শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যাওয়াতে সব শেষ? আমরা তো ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন দল হয়ে যাইনি যে সব ম্যাচেই আমাদের জিততে হবে। এখানে তো অন্য কিছুও থাকতে পারে। অনেক কারণ থাকতে পারে। সব কিছু তো আমরা কোচরা এসে বলে দেবো না। আসল কথা প্ল্যানের সঠিক প্রয়োগ হয়েছিল কি না সেটার বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘এক মোসাদ্দেক ও আবাহনী ম্যাচের হারের কারণ হতে পারে না। মোসাদ্দেক ৫৩ বল খেলে ৮ রান করেছিল আমি দেখেছি। ফলে মোসাদ্দেক নেই বলেই ম্যাচ হেরেছে এটা হতে পারে না। আর এটাই যদি কারণ হয় তাহলে আর কাজ করার কোনো অর্থ হয় না।’ তিনি বলেন, ‘ফ্লাট উইকেট হয়ে গেলেই যে বাংলাদেশ জিতে যেত এর কোনো গ্যারান্টি আছে? গ্যারান্টি নেই। সে গ্যারান্টি কেউ দিতে পারেও না।’
উল্লেখ্য, খালেদ মাহমুদ সুজন খেলোয়াড়দের প্রিয়প্রাত্র হিসেবে রয়েছেন দীর্ঘদিন। খেলোয়াড়েরা তাকে ‘চাচা’ বলেও ডাকেন। দলের অনেক সাফল্যের পেছনে তারও অবদান রয়েছে। যে হাতুরাসিংহে হঠাৎ চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন তার সঙ্গেই ছিলেন তিনি। এবং বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয়ে তার সঙ্গে শেয়ার করে দলকে এগিয়ে নেয়ার কাজ করে গেছেন। হঠাৎ হাতুরাসিংহে চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে বিসিবি। খালেদ মাহমুদের ওপরই পড়ে আপৎকালীন দায়িত্ব। তার সঙ্গে ছিলেন ইংল্যান্ডের রিচার্ড হ্যালসাল। তিনিও হাতুরাসিংহের সহকারী হিসেবে কাজ করে আসছেন। তিন জাতি ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম টেস্টে ড্র ও শেরেবাংলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আড়াই দিনে টেস্ট শেষ হওয়ার পর সমালোচনা হয়। যাতে বাদ যাননি তিনিও। এটাতেই তিনি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন