সৌম্য সরকার ও মুশফিকুর রহীমের দারুণ দু’টি হাফ সেঞ্চুরিতে ১৯৩ রানে সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ দল। যা এ সংস্করণে টাইগারদের দলীয় সর্বোচ্চ রান।
কিন্তু বোলারদের ছন্নছাড়া ও ধারহীন বোলিংয়ে সে রানই মামুলি হয়ে দাঁড়ালো।
লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের তোপে যেন জায়গা মতো বল ফেলতেই ভুলে যায় স্বাগতিকরা। রুবেল-মোস্তাফিজ-সাইফ উদ্দিনদের বেদম পিটুনি দিয়ে হেসে খেলেই সে লক্ষ্য পার করে শ্রীলঙ্কা।
ফলে ২০ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের সহজই তুলে নিল দলটি।
ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজের পর আরও একটি সিরিজ হার চোখ রাঙাচ্ছে টাইগারদের। অথচ ম্যাচের শুরুটা কতো সুন্দরই না হয়েছিল বাংলাদেশের জন্য। প্রথম ওভারেই ১৭ রান তুলেছিল তারা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে আসে ৭১ রান। কিন্তু সব বিভাগে জ্বলে উঠতে না পারায় পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙতে পারলো না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক লঙ্কানরা। দুই ওপেনার কুশল মেন্ডিস ও দানুস্কা গুনাথিলাকার আগ্রাসনে ৪.৩ ওভারেই ৫০ রানের কোটা পার করে দলটি। এরপরই গুনাথিলাকাকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে ৫৩ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন নাজমুল ইসলাম অপু। ক্যারিয়ারের প্রথম শিকার তার। ১৫ বলে ৩০ রান করেন গুনাথিলাকা। তবে এক প্রান্তে ঠিকই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন কুশল। দ্বিতীয় উইকেটে উপুল থারাঙ্গার সঙ্গে ৩৭ রানের জুটি গড়েন তিনি। যাতে থারাঙ্গার অবদান মাত্র ৩ রান।
বিপজ্জনক হয়ে ওঠা কুশলকে আউট করেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। লং অফে তার ক্যাচ লুফে নেন সৌম্য। তবে এর আগেই ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কুশল। ২৭ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন এ ওপেনার। পরের ওভারেই লঙ্কান শিবিরে আবার আঘাত হানেন অপু। মিড উইকেটে আফিফের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন থারাঙ্গা (৪)।
তিন উইকেট তুলে নিলেও শ্রীলঙ্কার রানের গতিতে লাগাম পরাতে পারেনি টাইগাররা। সঠিক জায়গায় বল ফেলতে না পারার ফায়দাটা ভালোভাবেই নিয়েছে লঙ্কান শিবির। নিরোশান ডিকভেলার সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৩৭ রানের জুটি গড়েন দাশুন শানাকা। এরপর ডিকভেলা আউট হলেও থামেনি অতিথিদের আগ্রাসী ব্যাটিং। থিসারা পেরেরাকে নিয়ে ৬৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন শানাকা।
২৪ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলেন শানাকা। সমান সংখ্যক ৩টি চার ও ছক্কায় এ রান করেন তিনি। তবে সঙ্গী থিসারা ছিলেন আরেক কাঠি সরেশ। মাত্র ১৮ বলেই করেন ৩৯ রান। ৪টি চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা মারেন এ অল রাউন্ডার। ফলে ২০ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় দলটি। বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে ২৫ রানের খরচায় ২টি উইকেট নিয়েছেন অপু। ১টি করে উইকেট রুবেল ও আফিফের।
এর আগে চার জন নতুন মুখ নিয়ে এদিন টস জিতে প্রথম ব্যাটিংকেই বেছে নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। সৌম্যর সরকারের সঙ্গে উইকেটে আসেন অভিষিক্ত তরুণ জাকির হাসান। শুরুটা দারুণ করলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি ২০ বছর বয়সী জাকির। ১০ রানেই দানুশকা গুনাথিলাকার বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। তবে সৌম্যর সঙ্গে ৪ ওভারেই এনে দেন ৪৯ রানের জুটি।
ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজে দর্শক হয়ে থাকার কষ্টটা ভুলতে এদিন শুরু থেকেই স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ঢঙে খেলতে থাকেন সৌম্য। তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। তার ব্যাটেই ১০ ওভারে ১০০ রানের কোটা পার করে বাংলাদেশ। অবশ্য ৩০ বলে হাফ সেঞ্চুরি স্পর্শ করার পর আর মাত্র ১টি রানই করতে পেরেছেন সৌম্য। যদিও আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের বলি হয়েছেন এ ওপেনার। টিভি রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা গিয়ে বল ছিল স্টাম্পের বাইরে। এমনকি জীবন মেন্ডিস বলও ফেলেছিলেন লাইনের বাইরে। ৩২ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫১ রানের ইনিংস খেলেন সৌম্য।
সৌম্য আউট হওয়ার দুই বল পর আউট হয়েছেন অভিষিক্ত আফিফ হোসেনও। দুর্ভাগ্য ভর করেছিল তাকেও। জীবনের বলটি প্যাডে লেগে ব্যাটে লেগে হাতে যায় উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকভেলার। ক্যাচটাও দারুণ নিয়েছিলেন ডিকভেলা। কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
তিন বলের ব্যবধানে দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশের হাল মুশফিককে নিয়ে ধরেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৭৩ রান। ইসুরু উদানার বলে স্কুপ করতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৪৩ রানে আউট হন অধিনায়ক। ৩১ বলে সমান সংখ্যক ২টি করে চার-ছক্কায় এ রান করেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেছেন মুশফিক। দলকে বড় সংগ্রহ এনে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরিটি ঠিকই তুলে নিয়েছেন তিনি। ৪৪ বল মোকাবেলা করে ৭টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৬৬ রান করে অপরাজিত থাকেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। আর বাংলাদেশ পায় ৫ উইকেটে ১৯৩ রানের লড়াকু সংগ্রহ- যা এ সংস্করণে নিজেদের দলীয় সর্বোচ্চ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ১৯৩/৫ (২০ ওভার) (জাকির ১০, সৌম্য ৫১, মুশফিক ৬৬*, আফিফ ০, মাহমুদউল্লাহ ৪৩, সাব্বির ১, আরিফুল ১*; মাদুশাঙ্কা ০/৩৯, গুনাথিলাকা ১/১৬, উদানা ১/৪৫, থিসারা ১/৩৬, আকিলা ০/৩২, কুশল ২/২১)।
শ্রীলঙ্কা : ১৯৪/৪ (১৬.৪ ওভারে) (মেন্ডিস ৫৩, গুনাথিলাকা ৩০, থারাঙ্গা ৪ শানাকা ৪২*, ডিকভেলা ১১, পেরেরা ৩৯*; অপু ২/২৫, সাইফুদ্দিন ০/৩৩, মাহমুদউল্লাহ ০/২৩, রুবেল ১/৫২, মোস্তাফিজ, ০/৩২ আফিফ ১/২৬)।
ফলাফল : শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : কুশল মেন্ডিস।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন