ক্রিকেটের জোয়ার আর উন্মাদনার মধ্যে বাংলাদেশের ফুটবল কখন যেন মানুষের মন থেকে একটু একটু করে দূরে চলে গেছে। দেশের ফুটবল যে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই কারও। এমনকি কারও বিন্দুমাত্র আগ্রহও নেই দেশের ফুটবল নিয়ে। না ফুটবলের বড় কর্তাদের আর না সাধারণ দর্শকদের। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তো দেশের ফুটবল নির্বাসিত হয়েছে আগেই এবার ঘরোয়া ফুটবলেও রাহুর গ্রাস দেখার অপেক্ষা।
ঘরোয়া ফুটবলের প্রধান আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের ওপর এখন এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) চোখ রাঙ্গানি। এএফসির অবশ্য এতে কোনো দায় নেই। দায় যারা ফুটবলকে পুঁজি করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত, যারা বাংলাদেশের ফুটবলকে তিন বছরের জন্য কবর দিয়েছে তাঁদের।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে অনেক আপত্তি রয়েছে এশিয়ার ফুটবলের এই অভিবাবক সংস্থাটির। দেশের একমাত্র পেশাদার লিগকে পেশাদার বলতে নারাজ এএফসি। তার যুতসই ব্যাখ্যাও দিয়েছে সংস্থাটি। পেশাদার লিগ বলেই চালিয়ে দেওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের সব খেলা হয় একটি মাত্র মাঠে। পেশাদার লিগে একাধিক ভেন্যু থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে কি শীত কি গ্রীষ্ম সকল ফুটবলের এক মাত্র আশ্রয়স্থল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। এএফসির পক্ষ থেকে অন্তত ৬টি ভেন্যুতে লিগের ম্যাচ পরিচালনা করতে বলা হয়েছে।
তাছাড়া ঢাকা কেন্দ্রিক ফুটবল দর্শক টানতে পারছে না। এই পরিস্থিতে ফুটবলে প্রাণ ফেরাতে এমনিতেই বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে বাফুফে যেন ক্লাব গুলোর ইচ্ছার উপর জিম্মি। এর আগে ২০১৬ সালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহে খেলা হয়েছে। কিন্তু গত বছর নানা অজুহাতে ঢাকার বাইরে যেতে অস্বীকৃতি জানায় ক্লাবগুলো! বেশির ভাগ ক্লাবের অবকাঠামো যেখানে নড়বড়ে সেখানে বাফুফের উপর তাঁরা ঠিকই ছড়ি ঘুরিয়ে চলেছে।
দুই দিন আগে এএফসি ডেভেলপমেন্ট কমিটির দুই কর্মকর্তা যোগেশ দেশাই ও দোমেকা গ্রামান্দি ঢাকায় এসে বাফুফেকে যে করা বার্তা দিয়ে গেলেন তারপরও কি ক্লাবগুলোর মর্জিমত চলবে বাফুফে? নাকি এবার ঘরোয়া ফুটবলকে বাঁচাতে সত্যিই কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি?
আবার একটি মাত্র যে ফুটবলের মাঠ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সেটাকেও বাঁচানোর কোনো উদ্যোগ নেই বাফুফের। অতিমাত্রায় ব্যবহারের ফলে এই মাঠের অবস্থা এখন খুবই নাজুক। এএফসির চখেও সেটা ধরা পড়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি সাইফ স্পোর্টিং আর মালদ্বীপের ক্লাব টিসি স্পোর্টসের মধ্যে এএফসি কাপের প্রাক-প্লেঅফে মাঠের অবস্থা ছিল ‘বাজে’। এ নিয়েও বাফুফেকে চিঠি দিয়ে এএফসি সাফ বলে দিয়েছে, ভবিষ্যতে ভালো মাঠে ম্যাচ আয়োজন করতে হবে। নইলে ভেন্যু বাতিল।
ঢাকার ফুটবলের একমাত্র স্টেডিয়ামটিও হুমকির মুখে অথচ দেখার যেন কেউ নেই। দেশের ফুটবল যখন মুমুর্ষ অবস্থায় ঘরোয়া লিগ এবং বঙ্গবন্ধ স্টেডিয়ামকে ঘিরে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে তখন ক্লাব ফুটবল এবং বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামকে ঘিরে এমন আশঙ্কার মেঘ কাটানো যাদের দায়িত্ব এবার কি তাঁদের ঘুম ভাঙবে?
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন