ভারতের বিরুদ্ধেও টাইগাররা গত ম্যাচের মাহমুদুল্লাহর মতো চরম দায়িত্বশীলতার খেলা খেলবেন বলে আশাবাদী সবাই। Image: AP
শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার সত্তর বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে কাল ভারতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭ টা ৩০ মিনিটে মাঠে গড়াবে ম্যাচটি। লঙ্কানরা ফাইনালে ওঠা নিয়ে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলো যে কার পাসে ফাইনালের দুই দল হিসাবে ভারত-শ্রীলঙ্কার নাম ছাপিয়েছিল তারা। চরম অভব্যতার এই জওয়াব মাঠের খেলাতেই লঙ্কানদের পরাস্ত করে দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমে রান তাড়া করে রেকর্ড জয়, এবং শেষ ম্যাচে স্নায়ুক্ষয়ী উত্তেজনায় মাহমুদুল্লাহর ঠান্ডা মাথার খুনে রুপ লঙ্কানদেরই দর্শক বানিয়ে দিয়েছে ঘরের মাঠে। উজ্জীবিত বাংলাদেশ কি পারবে ভারতকে বধ করে শেষ হাসি হাসতে? সে উত্তরটাই খোজার চেষ্টা করবো এবার।
ইতিবাচক দিক
• লঙ্কানদের বিপক্ষে শেষ দুটি ম্যাচে জয় যে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এবং দুটি ম্যাচেরই নিস্পত্তি একদম শেষ ওভারে হওয়ায় এটা এখন প্রমাণিত যে কঠিন মুহুর্তে চাপ নিতে বেশ ভালোই শিখে গিয়েছে বাংলাদেশ।
• তামিম-মুশফিকের দারুণ ফর্মটাও বাংলাদেশের জন্য অন্যতম ইতিবাচক একটি দিক। তামিম হয়তো আগের মতো ঝড় তুলছেন না, কিন্তু বলের সাথে পাল্লা দিয়ে কার্যকর ইনিংস খেলে মিডল অর্ডারের জন্য কাজটি সহজ করে দিয়ে যাচ্ছেন। আর তামিমের গড়ে দেয়া প্লাটফর্মের পূর্ণ ফায়দা নিচ্ছেন মুশফিক। পরিপূর্ণ ব্যাটিং প্যাকেজই উপহার দিয়ে চলেছেন পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে। সাথে ম্যাচ শেষ করে আসার ক্ষমতা যোগ হওয়ায় বাড়তি একটি সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। একই সাথে সময় মতো জুটি গড়ে তুলছেন তিনি। সুতরাং, বাংলাদেশকে হারাতে হলে ভারতের বিশেষ পরিকল্পনা আবশ্যক মুশফিককে নিয়ে।
• বাংলাদেশ দলে যে জিনিসটির সবচেয়ে বড় অভাব ছিলো সেটি হচ্ছে নিখাদ ফিনিশারের। কিন্তু লঙ্কানদের বিপক্ষে দুই ম্যাচে দুই ভায়রা দেখিয়ে দিলেন এ জায়গাটা আর বাংলাদেশের দূর্বলতম দিক না। বরং পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক ঠান্ডা মাথায় ম্যাচ শেষ করার ক্ষমতা এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের রয়েছে।
• ভারতের এই দলটায় কয়েকজন বাদে প্রায় বাকি সবাই অনভিজ্ঞ। তাদের এই অনভিজ্ঞতাটা যদি ঠান্ডা মাথায় কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ, ইতিবাচক একটি ফল আশা করাই যায়। বিশেষ করে এক চাহাল বাদে বোলিং ইউনিটটা পুরাই নতুন বলা যায়। বলের মেরিট বুঝে শুরু থেকেই চওড়া হয়ে যদি ভারতীয় বোলারদের আত্মবিশ্বাসে একটি ধাক্কা দেয়া যায়, প্রেমাদাসা অনায়াসেই প্রিয় হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য।
• বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট সাকিবের ফেরাটা। তার দলে থাকা ব্যাটিং-বোলিং এর গভীরতাই শুধু বাড়ায় না, ম্যাচ রিডিংয়ে তার চমৎকার দক্ষতাও কাজে লাগে দারুণ অস্ত্র হিসাবে।
নেতিবাচক দিক
• বোলিংটা পুরো সিরিজ জুড়েই ভোগাচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। বিশেষ করে স্লগ ওভারগুলোতে বাংলাদেশের বোলারদের এলোমেলো বোলিংয়ে পুরো ফায়দাই নিয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা।
• স্লথ গ্রাউন্ড ফিল্ডিংও বাংলাদেশের অন্যতম মূল সমস্যার একটি। টি টোয়েন্টিতে যেখানে প্রত্যেকটি রান গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে স্লথ ফিল্ডিং ব্যাটসম্যানকে সুযোগ করে দিচ্ছে বাড়তি রান যোগ করে বোলারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার। একই সাথে বাজে থ্রো-ইন বাংলাদেশ দলের একটি মূল সমস্যা।
• টপ অর্ডারের অধারাবাহিকতাও একটি প্রধান সমস্যা। লঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ বাদ দিলে প্রত্যেক ম্যাচেই দ্রুত উইকেট হারিয়ে দলকে বিপদে ফেলে দিয়েছেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। যার চাপ পুরোটাই গিয়ে পড়েছে মিডল অর্ডারের ওপর।
• অনেকেই দ্বিমত করতে পারেন, তবে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের অন্যতম প্রধান সমস্যা সৌম্য সরকার। টপ অর্ডারে নেমে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসছেন, তো মিডল অর্ডারে নেমে খেলছেন পরিস্থিতি যা দাবি করে তার বিপরীত ধাচের খেলা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ খেলতেই নামছে একজন খেলোয়াড় কম নিয়ে।
• ডেথ ওভারে নিজেকে হারিয়ে খোজা মোস্তাফিজও একটি সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছেন। গত ম্যাচেই অসাধারণ শুরুর পরেও নিজের শেষ দু ওভারে লঙ্কানদের হাতে বেধড়ক পিটুনি খেয়ে ম্যাচটাই আরেকটু হলে তুলে দিয়েছিলেন লঙ্কানদের হাতে। দলের মূল বোলারের এই সমস্যার অরোগ্য আশু প্রয়োজন বাংলাদেশ দলের।
‘১৫ বিশ্বকাপের সে ম্যাচ ডাকাতির পর ভারত-বাংলাদেশ মুখোমুখি হওয়া মানেই বাড়তি উত্তেজনা। সাকিববিহীন দুই ম্যাচে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষায় সেটি অনুপস্থিত থাকলেও সাকিবের ফিরে আসাটা যে পরিস্থিতি বদলে দিবে তার নমুনা কালকেই দেখা গিয়েছে। বহুবার আম্পায়ারের ভূলে ম্যাচ হেরে খেসারত দেয়া বাংলাদেশ কাল বুঝিয়ে দিয়েছে নীরবে মুখ বুজে সহ্য করার দিন শেষ। এখন পর্যন্ত যে রকম ক্রিকেট বাংলাদেশ খেলেছে, তাতে ছোট ভুলগুলো শুধরে নিতে পারলে ভারত বধের আশা করাই যায়। হ্যা, তাতে হয়তো বিশ্বকাপের সে ক্ষত মিটবে না, কিন্তু প্রত্যাশিত সুকুন তো মিলবে বাংলাদেশ সমর্থকদের দিলে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন