সদ্য সমাপ্ত নিদাহাস টি-টুয়েন্টি সিরিজের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে হারের হাহাকার এখনো বেজে চলেছে। ট্রফির একেবারে কাছে গিয়েও হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে।
রুবেল হোসেনের ওভারে দিনেশ কার্তিকের ছক্কা-চারগুলো সেই যে শূল হয়ে বিঁধেছে, ক্ষতগুলো যেন শুধুই বড়ই হয়ে চলেছে। সৌম্য সরকারের শেষ ওভারে তো জয় ধরা দিতেই পারতো। রুবেল হোসেন যদি এতো ব্যয়বহুল না হতেন। এই আক্ষেপগুলো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের দর্শকদের।
তবে উল্টো পিঠে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সাফল্যও তো কম নয়। ওয়ানডে এবং এমনকি টেস্টেও (টেস্ট ক্রিকেট শুরু করেছিল যে দুই দল অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড, তাদেরকেও অন্তত একবার পরাজিত করার সাধ বাংলাদেশ পেয়েছে) সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। টি-টুয়েন্টিটা জটিল ধাঁধাঁ হয়েছিল। নিদাহাস সিরিজে তো সেই টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটেও বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভাবের ইঙ্গিতই মিলল।
টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে অতীতে সাফল্য যে নেই বাংলাদেশের তা নয়। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ আয়োজিত হয়েছিল টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে। ঘরের মাঠে সেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানকে হারিয়ে। কিন্তু পরের যাত্রায় এই ফরম্যাটটা আবরো দুরূহ হয়েই ধরা দিচ্ছিল। তার অন্যতম কারণ কী এই ফরম্যাটের সঙ্গে মানানসই ক্রিকেটারের অভাব? বাংলাদেশের স্কোয়াডে যে পাওয়ার হিটার নেই। নেই একা ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ক্রিকেটার। তবে নিদাহাস ট্রফিতে একটা তত্ত্ব ঠিকই প্রয়োগ করে সেই প্রতিকূলতা জয় করেছে বাংলাদেশ। সেটি ‘বাংলাদেশি ব্র্যান্ড’।
এই ‘বাংলাদেশি ব্র্যান্ড’ ক্রিকেট খেলে টি-টুয়েন্টিতে বড় শক্তি হতেই পারে বাংলাদেশ। সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল এই সিরিজ শেষে সেই আশা দেখতে সাহস পাচ্ছেন। সিরিজ পরবর্তী প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনায় যোগ দিয়ে তিনি বলেন, টি-টুয়েন্টিতে আমাদের টিমটাও তৈরি হচ্ছে। ওয়ানডে-টেস্টে যতোটা শক্তিশালী, টি-টুয়েন্টিতে আমরা ততোটা ছিলাম না। এই সিরিজটা দিয়েই হয়তো আত্মবিশ্বাসের লেভেলটা উপরে উঠেছে সবার।
মোহাম্মদ আশরাফুলের এই কথাকে সমর্থন জানাবেন সবাই। বাংলাদেশকে হারিয়ে ট্রফি জেতার পর যেমন ভারত অধিনায়ক বলেছেন, শেষ তিন বছরে আমরা দেখেছি তারা তাদের ক্রিকেট খেলার স্টাইলটাই বদলে ফেলেছে।
সেই যে ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে ভালো খেলার পথে হাঁটছিল বাংলাদেশ, গেল বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগ পর্যন্ত সেই ধারা বজায় ছিল। তবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজ থেকে উল্টো রথে যাত্রা। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজও কাটে বাজে। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালও জিততে পারে না বাংলাদেশ। তবে এই বাংলাদেশ খারপ সময় লম্বা হতে না দিয়ে ফিরে আসাটাও যেন রপ্ত করেছে। মোহাম্মদ আশরাফুল তাই এক কথায় মুগ্ধ, পুরো সিরিজটা তো অসাধারণ কাটিয়েছে বাংলাদেশ। যাওয়ার আগে সাধারণ মানুষ সবাই আশা করেছে একটা ম্যাচ যেন জিতি আমরা। কিন্তু বাংলাদেশ অসাধারণ সময় পার করে এসেছে।
পুরো সিরিজে টাইগারদের পারফম্যান্স বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আশরাফুল বলেন, প্রত্যেকটা ম্যাচেই টুকটাক সবাই রান করেছে। কয়েকটা ভালো স্পেল ছিল। রুবেল অসাধারণ বল করেছে। ফাইনালে দিন শেষে ব্যয়বহুলের তালিকায় পড়ে গেছে। কিন্তু তিনটা ওভার দারুণ করেছে। মিরাজ এক ম্যাচে দারুণ খেলেছে। সাকিব কামব্যাক করল ইনজুরি থেকে। মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকের অসাধারণ ইনিংস। সবকিছু মিলিয়ে আমি বলব- শেষ সাড়ে তিন বছরে আমাদের টিমের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস ছিল, সেই আত্মবিশ্বাসটা আমরা এই সিরিজে আবার ফিরে পেয়েছি।
এই আত্মবিশ্বাসটাই তো ক্রিকেটে বড় শক্তি। এই ক’দিন আগে যখন টানা হারের মধ্যে ছিল দল, তখন ক্রিকেটাররা বলতেন একটা জয়ই বদলে দিতে পারে সব। সেই কথা মাঠে প্রমাণ করেই দেখিয়েছেন তারা। নিদাহাস ট্রফিতে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটেও ভালো খেলতে পারার যে আত্মবিশ্বাসটা পাওয়া গেছে, সেটি পুঁজি করে এবার এই ফরম্যাটে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পালা সাকিবদের। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভারতের সাথে পর পর দুটি ট্রফিতে ফাইনালে হারের ধারাবাহিকতায় ছেদ টানতে পারবে বলে বিশ্বাস টাইগার ভক্তদের।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন