আজ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে মাঠে নামবে রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল। ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াইয়ে দু’দলের কেউ কারো চেয়ে পিছিয়ে নেই। এক দিকে ধারাবাহিক রিয়াল মাদ্রিদ অন্যদিকে এই সিজনে দুর্দান্ত লিভারপুল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল পর্যন্ত আসার জন্য তাদের পাড়ি দিতে হয়েছে বেশ কঠিন পথ। ফাইনাল পর্যন্ত আসার সে পথটা কেমন ছিল তা নিয়েই আয়োজন, ‘রোড টু কিয়েভ’…
রিয়াল মাদ্রিদ
• গ্রুপ পর্ব…
গত সিজনটা যেন স্বপ্নের মতো কেটেছে রয়্যাল ফুটবল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের। এক সিজনে নিজেদের কেবিনেটে সাজিয়েছে পাঁচ পাঁচটি শিরোপা। অথচ এবার সিজনের একদম শুরুর দিকেই রিয়াল বেটিসের কাছে হোঁচট খেয়ে যাত্রা শুরু করে অল হোয়াইটস। সঙ্গে রোনালদোর অফফর্মও দাঁড়িয়েছিল ভক্তদের চিন্তার কারণ হয়ে। এমন বাজে অবস্থায়’ই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপপর্বে খেলা পড়ে টটেনহাম, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড আর সাইপ্রাসের দল অ্যাপোয়েল নিকোশিয়ার সাথে। আলোচনার টেবিলে তখন চর্চার বিষয় মৃতপ্রায় রিয়াল পারবে কি গ্রুপের বাঁধা টপকাতে পেরেছে? ভালমতোন পেরেছে তারা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দুর্ধর্ষ পারফর্মেন্সে গ্রুপ পর্বের ৬ ম্যাচে ৪ জয়, ১ ড্র এবং একটি পরাজয় নিয়ে এইচ গ্রপে রানারআপ শেষ ষোলতে কোয়ালিফাই করে রিয়াল মাদ্রিদ। গ্রুপ পর্বের ৬ ম্যাচে রোনালদো ৯ গোল করেন রেকর্ডভাঙ্গা ৯ গোল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আগে কখনো গ্রুপ পর্বের সবকটা ম্যাচেই গোল পেতে দেখেনি কাউকে!
• রাউন্ড অফ সিক্সটিন
সেরা হতে গেলে বাকিদের সামর্থ্যকে ভয় পাবার সুযোগ থাকে না, দিতে হয় অগ্নিপরীক্ষা। ফুটবল দেবী যেন রিয়ালকে চলতি সিজনে সেই পরীক্ষায় নামাবার পণ করেছিলেন। শুরু থেকে একের পর এক কঠিন প্রতিপক্ষের ধারা অব্যাহত রাউন্ড অব সিক্সটিনেও। তাই তো গ্রুপ পর্বে টটেনহাম বরুশিয়ার বাঁধা পেরুতেই সামনে আসে উড়তে থাকা পিএসজি। প্রথম রাউন্ডে বায়ার্ন মিউনিখকে রুখে দেয়া পিএসজি সিজনের শুরুতে রেকর্ড ট্রান্সফারে দলে ভেড়ায় নেইমারকে, একই সাথে দলে টানেন ফ্রান্সের ইয়াং ট্যালেন্ট এম্বাপ্পেকে। সব মিলিয়ে পিএসজির আক্রমণভাগ যেকোন দলের রক্ষণভাগের ভয়ের কারণ ছিল। কিন্তু রিয়ালের সামনে এসে খেই হারিয়ে ফেলে তারা। লেগ মিলিয়ে ৫-২ গোলের পরাজয়ে বিদায় নেয় টুর্নামেন্ট থেকে। প্রথম লেগে বার্নাব্যুতে ৩-১ গোলে, দ্বিতীয় লেগ পিএসজির মাঠে ২-১ গোলে জয় পায় জিদানের শিষ্যরা। দুই লেগে রোনালদো একাই করেন ৩ গোল।
কোয়ার্টার ফাইনাল
কোয়াটার ফাইনালে এসে এবার রিয়াল মাদ্রিদকে মুখোমুখি হতে হয় ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্টাসের। গত সিজনের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে শেষবার এ দু’দল লড়েছিল। রিয়াল মাদ্রিদ গ্রুপপর্বে যে টটেনহামের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছে তাদেরই হারিয়ে মাদ্রিদের সামনে আসে জুভরা। প্রথম লেগে ৩-০ গোলে জুভেন্টাসকে হারায় রিয়াল মাদ্রিদ। যার মধ্যে দুটি গোল এবং একটি এ্যাসিস্ট রোনালদোর। দ্বিতীয় লেগে মাদ্রিদকে চাপে ফেলেও ম্যাচের শেষ মুহুর্তে পেনাল্টি থেকে করা রোনালদোর গোলের বাদ পড়ে তুরিনের বুড়ি আর নিশ্চিত হয় রিয়ালের সেমিফাইনাল খেলা। শেষ আটের দুই ম্যাচেও ৩ গেল করেন রোনালদো।
সেমিফাইনাল
পিএসজি, জুভেন্তাসের বাঁধা পেরিয়ে সেমিফাইনালে আসার পর দেখা হয়ে হয়ে যায় জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের সাথে। তবে তাদের পেরিয়ে কিয়েভের টিকেট নিশ্চিত করতে তেমন বেগ পেতে হয়নি লস মেরেঙ্গুয়েজদের। যদিও সেমির দুই লেগেই গোল করতে ব্যর্থ রোনালদো। প্রথম লেগে মার্সেলো ও অ্যাসেন্সিওর গোলে ২-১ ব্যবধানে জয় পায় রিয়াল মাদ্রিদ। দ্বিতীয় লেগে কেইলর নাভাসের দূর্দান্ত গোলকিপিং এবং বেঞ্জেমার দুই গোল বায়ার্নের সাথে ২-২ গোলে ড্র করে রিয়াল মাদ্রিদের ফাইনাল নিশ্চিত করেন।
লিভারপুলের কিয়েভ যাত্রা
প্লেঅফ
লিগ টেবিলের পাঁচ নাম্বারে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ালিফাই করায় প্লে অফ খেলে টুর্নামেন্টে আসতে হয় লিভারপুলকে। প্লেঅফে প্রতিপক্ষ জার্মান ক্লাব হফেনহেইম। প্রথম লেগে ২-১ গোলে জয় পেলেও দ্বিতীয় লেগে ৪-২ গোলে বড় জয়ের পাশাপাশি দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৩ গোলের জয় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে লিভারপুল।
গ্রুপ পর্ব
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বের খেলায় গ্রুপ ই তে লিভারপুল প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় সেভিয়া, স্পার্তাক মস্কো ও মারিবোরকে। প্রথম দুই খেলায় জয়ের মুখ না দেখা লিভারপুল তৃতীয় ম্যাচে মারিবোরকে ৭-০ গোলে হারানোর মধ্য দিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথম জয় পায়। গ্রুপ পর্বের আরেক ম্যাচে স্পার্তাক মস্কো কেও ৭-০ গোলে হারায় অল রেডরা। সবমিলিয়ে গ্রুপ পর্বের ৬ ম্যাচ শেষে ৩ টি জয় ও ৩ টি ড্র নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলতে জায়গা করে নেয় লিভারপুল।
রাউন্ড অব সিক্সটিন
রাউন্ড অব সিক্সটিনে লিভারপুলের খেলা পড়ে পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তোর বিপক্ষে। পোর্তো খুব শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না হলেও তখন দলের অন্যতম সেরা ফুটবলার কৌতিনহো লিভারপুল ছেড়ে বার্সেলোনায় পাড়ি জমালে লিভারপুল ফ্যানরা কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিন্তু সালাহ, মানে, ফিরমিনহোরা কৌতিনহোর অভাব অনুভব করতে দেয়নি। বরং কৌতিনহো চলে যাওয়ার পর লিভারপুল আরও আগ্রাসী ফুটবল খেলতে শুরু করে। দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম লেগে পোর্তোকে ৫-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে লিভারপুল। দ্বিতীয় লেগে পোর্তোর সাথে গোল শূন্য ড্র করলেও প্রথম লেগের ৫-০ গোলের জয়ের উপর ভর করে কোয়ার্টারে পৌঁছে ইংলিশ ক্লাবটি।
কোয়ার্টার ফাইনাল
গ্রুপ পর্ব থেকে প্রতিপক্ষদের গোল বন্যায় ভাসিয়ে কোয়ার্টারে ফাইনালে উঠা লিভারপুল এবার পায় আরেক ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিকে। ফর্মের তুঙ্গে থাকা ম্যানসিটি লিভারপুলের সামনে টিকতে পারেনি। প্রথম লেগেই সিটিকে ৩-০ গোলে হারায় লিভারপুল। দ্বিতীয় লেগেও আর ঘুরে দাড়াতে পারেনি ম্যানসিটি। ২-১ গোলে জয় তুলে নেয় লিভারপুল।
সেমিফাইনাল
বেশ লম্বা সময় পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি ফাইনালে খেলার সুযোগ পায় লিভারপুল। সেমিতে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় রোমাকে। রোমা তেমন ভয়ঙ্কর না হলেও কোয়ার্টার ফাইনালে কঠিন সমীকরণ মিলিয়ে বার্সেলোনার মত তারকা খচিত দলকে হারিয়ে আসায় তাদের হালকাভাবে নেয়ার উপায় ছিল না। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে রোমাকে ৫-২ গোলে হারিয়ে প্রায় ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলে সালাহ ফিরমিনহোরা। তবে দ্বিতীয় লেগের শেষ মিনিটের নাটকীয়তায় ৪-২ গোলে হারলেও দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ গোলের ব্যবধানে জয় পেয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে লিভারপুল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন