চোখে লেগে থাকার মতো ম্যাচ। এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতীয় নারী দলকে হারাল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। প্রথমবারের মতো এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেই জিতে নিল শিরোপা। এ আবেগ কেবল ক্রিকেটারদের ছুঁয়ে যায়নি, ছুঁয়েছে পুরো জাতিকে। তাদের সাফল্যে গলা ফাটিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা-তামিম ইকবালরাও। শেষ ১ বলে ২ রানের ‘এডভেঞ্চার’ যেন টাইম মেশিনে চড়িয়ে বারবার নিয়ে যেতে চাইবে সমর্থকদের। কিন্তু যার ব্যাটে এসেছিল সেই মহাকাব্যিক ২ রান, তিনি জাতীয় দলের পেসার জাহানারা আলম। ওই ম্যাচের পর থেকে এখনো যেন স্বপ্নের মেঘে উড়ছেন তিনি।
এশিয়া কাপের শিরোপা জয়ের সেই ম্যাচে নিয়ে জাহানারা আলম মুখোমুখি হয়েছেন প্রিয়.কমের। কথা বলতে গিয়ে কখনো আপন মনে হেসেছেন, কখনো বা গলা ভারী হয়ে এসেছে আবেগে। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের প্রতি যে অবহেলা এখনো চলমান, তার জবাব খানিকটা হলেও বোধ হয় দিতে পেরেছে এই জয়, এই শিরোপা।
প্রিয়.কম: স্বপ্নের জয়টা আপনার হাত ধরে, ভাবতে কেমন লাগছে?
জাহানারা: আমি আসলে এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। আই রিপিট, আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছিল, সেটা আমি শতভাগ পূরণ করতে পেরেছি; তা ভেবে আল্লাহর রহমতে আমার খুবই ভালো লাগছে; আমার জীবনের সেরা ম্যাচ ছিল। আমি খুবই খুশি।
প্রিয়.কম: ভারতের বিপক্ষে আগে আপনাদের কেবলই হার ছিল। এবার পরপর দুই ম্যাচে জয়। আসলে তারা কোনদিক থেকে আগে এগিয়ে ছিল, শেষ দুই ম্যাচে হারল; এবার তাদের দুর্বলতা কী পেলেন?
জাহানারা: দুর্বলতা বা শক্তি বলতে আমরা পিছিয়ে ছিলাম ব্যাটিংয়ে। শুরু থেকেই। কখনো আমাদের টপ অর্ডার ক্লিক করেছে তো মিডল অর্ডার ফল করেছে। কখনো বা দুটোর কোনোটাই ক্লিক করেনি, লোয়ার অর্ডারে গিয়ে লড়াই করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা ব্যাটিং সমস্যা নিয়ে খুব ভুগতাম।
কিন্তু সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের অনেক কিছু চেঞ্জ এসেছে। যদিও আমরা কোনো ম্যাচ জিততে পারিনি, তারপরও আমরা টি-টোয়েন্টিতে খুব ভালো লড়েছি। ব্যাটিং নিয়েও সেখানে অনেক কাজ হয়েছে। আমাদের আসলে সাহসের অভাব ছিল, সেই সাহসটা আমরা ফিরে পেয়েছি। সবাই মিলে পেরেছি, তাই সফল হয়েছি।
এশিয়া কাপজয়ী নারী ক্রিকেট দল। ছবি: প্রিয়.কম
প্রিয়.কম: আপনি দলের স্ট্রাইক পেসার। সেখান থেকে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্যাট হাতে সামলাতে খানিকটা কি ভয়ে ছিলেন?
জাহানারা: একেবারেই ভয় করেনি। কারণ আমাকে মূলত ৭-৯ (ব্যাটিং অর্ডার) এই সময়েই ব্যাট করা লাগে, যখন এমনই পরিস্থিতি থাকে। তা ছাড়া এশিয়া কাপের ফাইনালে এই ম্যাচের আগে আমার সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা দিয়েছিল প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ। আমি রুপালী ব্যাংকের হয়ে খেলেছিলাম। আবাহনীর বিপক্ষে একটি ম্যাচে আমাদের দলের সবচেয়ে ভালো বোলার রুমানা আহমেদকে ব্যাক টু ব্যাক দুটি ছক্কা মেরেছিলাম। সেটা আমার এখানেও কাজে দিয়েছে।
তা ছাড়া আমি ২০১৪ সালের দুঃস্মৃতি একেবারেই ভুলতে পারিনি। সেবার এশিয়ান গেমসে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুব কাছ থেকের স্বর্ণ জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেছিলাম। তাই এবার যতকিছুই হোক, ফাইনালে হারতে চাইনি আমি। হয়তো ব্যাটিংয়ে সেই ব্যাপারটাও অনেক কাজে দিয়েছে।
প্রিয়.কম: দক্ষিণ আফ্রিকায় হার, সেখান থেকে এশিয়া কাপে এসে চ্যাম্পিয়ন; মুদ্রার ওপিঠ দেখানো কতটা কঠিন ছিল?
জাহানার: আমরা কিন্তু এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খুব বাজেভাবে হেরেছি। কিন্তু পাকিস্তানকে হারানোর পর আমরা বুঝেছিলাম, আমাদের মধ্যে চেঞ্জ এসেছে। সেই ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখতে চেয়েছি। সবাই যার যার কাজটা ঠিকঠাকভাবে করেছি। যে ভারতকে আমরা হারিয়েছি, তারা কিন্তু এই টুর্নামেন্টের ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন দল। তাদেরকে আমরা হেরেছি। সংবাদ সম্মেলনে ভারতের অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমরা টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু বাংলাদেশ আমাদেরকে শুধু ইন্ডিয়ার মতো করে হারিয়েছে।’
প্রিয়.কম: আপনি উইকেটে ছিলেন, সালমা খাতুনও উইকেটে ছিলেন। তিনি বর্তমান অধিনায়ক। আপনিও আগে অধিনায়ক ছিলেন। শেষ ১ বলে যখন ২ রান দরকার হয়, তখন উইকেটে কী কথা হয়েছিল আপনাদের?
জাহানারা: যখন ১ বলে ২ রান দরকার, তখন দ্বাদশ খেলোয়াড় এসে আমাকে বলল, আপু আপনার জন্য ইনফরমেশন আছে। আমি বললাম, তুমি যাও আমি দেখছি। তারপর আমাকে আবার বলল, আপু শুনেন না, আপনাকে ব্যাটে বল লাগাতে বলেছে। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি আর সালমা আপু যখন আলাপ করছিলাম, তখন সালমা আপু বলেছিলেন, ‘জাহান তুমি শুধু বলটা ব্যাটে লাগাও।’ আমি বলেছি আপু বল ব্যাটে লাগবে আপনি শুধু দৌড়াবেন। যা হয়, যেদিকে হয়, দেখবেন না- কেবল দৌড়াবেন।
আমি ২ রানের জন্যই দৌড়েছিলাম। ডাইভ দিতে হবে এটা আগেই ভেবে রেখেছিলাম। সেটাই করেছি। আল্লাহর রহমতে পেরেছি। আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।
প্রিয়.কম: আপনাদের পরবর্তী লক্ষ্য কী?
জাহানারা: প্রথমবারের মতো বলতে পারছি, আমাদের সামনে অনেক খেলা আছে। ওখানে সবগুলোতে ভালো করার চেষ্টা করব। সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হলো নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন