বছর কয়েক আগের ঘটনা। তখন ভারতে আইপিএলের মৌসুম। এমন সময় কারওয়ান বাজারে বিএসইসি ভবনের নিচে একদিন দেখা গেল এক অদ্ভূত দৃশ্য। এক চা দোকানির মাথায় পানি ঢালছে কয়েকজন ব্যক্তি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দোকানি আইপিএল উপলক্ষে ধার-কর্জ করে বাজি ধরেছিল। কিন্তু বাজিতে না জেতায় ধারের টাকা ফেরত দিতে পারেনি বলে তাকে অপদস্থ করছে ধার দেওয়া ব্যক্তিরা। এই দোকানির কিন্তু ক্রিকেট জ্ঞান একেবারে শূন্যের কোঠায়। আইপিএলে কয়টি দল আছে বা খেলোয়াড় কারা কিছুই সে ভালোভাবে জানে না। কিন্তু আইপিএল সূচনার প্রথম দিকে একবার বাজি ধরে জিতে যাওয়ায় তিনি বাজিতে আসক্ত হয়ে পড়েন। আইপিএলের শেষ দিকে এসে বাজির জন্য করা ধার কীভাবে শেষ করবেন তা নিয়ে মহাবিপদে পড়েন ওেই চা দোকানি।
বছর খানেক আগের ঘটনা। মিরপুরের এক কিশোর দুই বন্ধুর হাতে খুন হয়েছে। ছবিতে এমনভাবে রক্ত ও ক্ষত দেখা যাচ্ছিল, যে কেউই বিশ্বাস করবে ঘটনাটি সত্যি। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল এইসব ছবি ও হত্যার ঘটনা মিথ্যা। স্কুল পড়ুয়া ঐ কিশোর খেলা নিয়ে বাজি ধরে কয়েক লাখ টাকা ঋণ করে ফেলেছিল। ঋণ ফেরতে অসমর্থ হওয়ায় ধারদাতাদের হাত থেকে বাঁচতে নিজের মৃত্যুর নাটক সাজিয়েছিল সেই কিশোর।
খেলা নিয়ে বাজির এমনই রমরমা অবস্থা এখনো চলছে সারা দেশে। একই সঙ্গে বাজির ফেরে টাকা-পয়সা, অর্থ-সম্পদ হারিয়ে পথে বসছেন অনেক ব্যক্তি ও তাদের পরিবার। বাংলাদেশের আইনে অপরাধ হলেও রাশিয়া বিশ্বকাপ উপলক্ষে আবারও নিষিদ্ধ নেশায় মেতে উঠেছে দেছের অনেকেই।
বিশ্ব্বকাপ শুরুর পরপরই রাজধানীর নিকুঞ্জের একটি পাঁচতারকা গিয়ে দেখা যায় সেখানে ফুটবল ম্যাচ দেখা উপলক্ষে জড়ো হয়েছে অসংখ্য মানুষ। ম্যাচের ফলাফল নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে, সেই সঙ্গে চলছে খাওয়া-দাওয়া। দেখলে মনে হয় ফুটবলকে কেন্দ্র করে এ যেন নির্ভেজাল আনন্দের পসরা। কিন্তু ভালোমতো লক্ষ্য করে দেখা গেল, এই আপাত নিরীহ আনন্দের ফাঁকে ফাঁকেই চলছে বেটিং বা খেলা উপলক্ষে বাজি ধরা। মোটামুটি আর্থিক অবস্থাপন্ন বিভিন্ন বয়সী মানুষ বিপুল অংকের টাকা বাজি ধরছে ম্যাচের ফলাফল ও বিভিন্ন খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সের ওপর।
নিকুঞ্জের এই রেস্তোরায় তো কেবল মোটামুটি অবস্থাপন্নরাই বাজি ধরছেন। কিন্তু সারা দেশে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষই এ বাজির নেশায় জড়িয়ে পড়েছে। গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে গেলে দেখা যায়, যেসব দোকানে টিভি আছে সেখানে মানুষের কী তীব্র ভিড়! এই ভিড়ের মধ্যেই ধরা হচ্ছে হাজার হাজার টাকার বাজি।
খেলা উপলক্ষে ধরা বাজি থেকে মাঝে মাঝে জুয়ারিরা লাভবান হন ঠিকই কিন্তু ক্ষতির পরিমাণটাই বেশি। এই জুয়ার কারণে নিঃস্ব হয়েছে দেশের শতশত পরিবার। অনেকে আবার ধার ফেরত দিতে ছিনতাই, রাহাজানি, চুরিসহ বিভিন্ন অপমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।
রাশিয়া বিশ্বকাপ উপলক্ষে বাজি ধরা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো দূর্ঘটনার সংবাদ আসেনি। কিন্তু অবৈধ এ নেশা কখনোই ভালো ফলাফল বয়ে আনেনি। পরিস্থিতি লাগামছাড়া হওয়ার আগেই যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারে তবে এবারও জুয়া নিয়ে বিভিন্ন অপরাধ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন