পশ্চিমা বিশ্বের প্রাচীনতম রাষ্ট্রগুলোর একটি ফ্রান্স। দেশটিতে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হলেও মুসলিম ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীও সেখানে একেবারে কম নয়। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে আদমশুমারির ভিত্তিতে কার কী ধর্ম সেটি নির্ণয় করা যায় না। কারণ, এই দুটি দেশে আদমশুমারিতে ব্যক্তির ধর্মীয় বিশ্বাস সংক্রান্ত তথ্য দেয়া বাধ্যতামূলক নয়।
শিল্পকলা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, দর্শন ও সমাজবিজ্ঞানের উন্নয়নে ও প্রসারে ফ্রান্সের সংস্কৃতি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। মধ্যযুগ থেকেই প্যারিস পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। এক কথায় ফরাসি সংস্কৃতিকে জগদ্বিখ্যাত বলা চলে।
৭টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশ নেয়। প্রতিটিই বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিদায় নেয় এই টুর্নামেন্ট থেকে। বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্স মুখোমুখি হয় ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। তবে মজার তথ্য হলো- ফরাসি শিবিরে দিদিয়ের দেশমের একাদশে ছিলেন ৭ জন মুসলিম ফুটবলার। মুসলিম বিশ্বের জন্য যা সত্যিই খুশির খবর। এই ৭ ফুটবলার রবিবার জ্বলে উঠেছিল বলেই দ্বিতীয় বিশ্বকাপের স্বাদ পেল ফ্রান্স।
ফ্রান্সের মুসলিম ফুটবলারদের মধ্যে- আদিল রমি, দজিব্রিল সিদেবে, বেঞ্জামিন মেন্ডি, পল পগবা, গল কান্তে, নাবিল ফকির, উসমানী ডেম্বেলে।
বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্সের এ দলটিকে নিয়ে আসর শুরুর আগেই পশ্চিমা গণমাধ্যম লিখেছে। ২৩ জনের দলটির ১৫ জনই যে অভিবাসী। কে জানত এই অভিবাসীরাই জিতে নেবে বিশ্বকাপ!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লেখক খালেদ বেদাউন টুইটারে ফ্রান্সের উদ্দেশে একটি মন্তব্য করেন। রবিবার ফাইনাল শেষ হওয়ার পরই মন্তব্যটি করেন তিনি। সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ওই টুইটটি ‘রিটুইট’ হয়েছে এক লাখ ৬৩ হাজারেরও বেশিবার। ওই মন্তব্যে ‘লাইক’ পড়েছে তিন লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি।
কী লিখেছেন খালেদ বেদাউন?
তিনি লেখেন, ‘প্রিয় ফ্রান্স, বিশ্বকাপ জেতায় অভিনন্দন। তোমার দলের ৮০ শতাংশ আফ্রিকান। ফেলে দাও বর্ণবৈষম্য এবং অভিবাসীবিদ্বেষ।
তোমার দলের ৫০ শতাংশই মুসলিম। ফেলে দাও ইসলামবিদ্বেষ।
‘আফ্রিকান ও মুসলিমরা তোমাকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ দিয়েছে, এখন তুমি তাদের ন্যায়বিচার দাও।’
বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী দলটির অভিবাসীরা দেশটির সাবেক উপনিবেশভুক্ত দেশগুলো থেকেই এসেছে।
তবে খালেদের ওই মন্তব্যের সমালোচনাও করছেন অনেকে। অনেকে বলছেন, খালেদ ফুটবল আর রাজনীতিকে এক করে ফেলেছেন। অনেকে মনে করছেন, সাম্প্রতিক অভিবাসী বিতর্ক ও সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে খালেদের টুইটটি আরো বিতর্কিত।
ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী দলটিতে পগবা, এমবাপ্পে, কান্তেসহ গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলাররা আফ্রিকান বংশোদ্ভূত।
ফ্রান্স দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয় করল। এর আগে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ জয় করে ফ্রান্স। ওই বিশ্বকাপে দলটির মূলনায়ক ছিলেন জিনেদিন জিদান। তিনি আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত। ফ্রান্সের ডানপন্থী নেতা জ্যঁ মরে লঁ পঁ জাতীয় দলে জিদানের অন্তভুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন! তার অভিযোগ ছিল ‘এসব বহিরাগতরা ম্যাচের আগে ঠিকমতো জাতীয় সঙ্গীতও গায় না।’ তবে চলতি বছর এ ধরনের কোনো দাবির কথা শোনা যায়নি।
ফ্রান্স একাদশে ৭ মুসলিম ফুটবলার
আসুন এক নজরে দেখে নিই তাদের অবস্থান ও ক্যারিয়ারঃ
১. আদিল রমি
ফ্রান্সের জাতীয় ফুটবল দলে ডিফেন্ডার হিসেবে খেলেন আদিল। ফ্রান্সের মারসেইলি ক্লাবের হয়ে খেলা আদিল ২০১৫-১৬ তে 'ইউইএফএ' ইউরোপ ট্রফি জিতেন। তার পরিবার মরক্কোর বংশোদ্ভুত।
২. পল পগবা
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফরাসি তারকা পল পগবাও মুসলিম। তিনি একজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করা পগবা সম্প্রতি সৌদিতে ওমরা পালন করেছেন। ২০১৩ সালে পগবা 'গ্লোল্ডেন বয়' পুরস্কার পান পগবা। পল পগবার পরিবার আফ্রিকান দেশ গিনি’র বংশোদ্ভূত।
৩. দজিব্রিল সিদেবে
মনেপ্রাণে ফরাসি হলেও সেনেগালের অর্থাৎ আফ্রিকান বংশোদ্ভুত দজিব্রিল সিদেবে মোনাকোর ডিফেন্ডার হিসেবে খেলেন। তার জন্মও ফ্রান্সের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে।
৪. নাবিল ফকির
আলজেরিয়ার বংশোদ্ভুত নাবিল ফকির ফ্রান্স একাদশের অন্যতম ভরসা। ফান্সের অলিম্পিক লিওনাইসে খেলা এই তারকা দেশের জার্সি গায়ে বরাবরই উজ্জ্বল।
৫. উসমান ডেম্বেলে
ফ্রান্সের উদীয়মান ফরোয়ার্ড উসমান ডেম্বেলের জন্ম ফ্রান্সের ভারনোনে। বছর দুই আগে স্পানিস জায়ান্ট বার্সেলোনয় যোগ দেন তিনি। ফরাসি ফুটবলের সম্ভাবনাময় সম্পদ ভাবা হচ্ছে তাকে।
এছাড়া আলজেরিয়ান বংশোদ্ভুত বেঞ্জামিন মেন্ডি ও আফ্রিকান বংশোদ্ভুত গল কান্তেও মুসলিম পরিবারের সন্তান। এ দুজনকেও ফাইনালে ফ্রান্সের জার্সি গায়ে মাঠে নামতে দেখা যায়। এই বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করে নজর কেড়েছেন কান্তে।
অন্যদিকে ব্লেইস মাতুইদি (এঙ্গোলা), স্যামুয়েল উমতিতি (ক্যামেরুন), থমাস লেমার (নাইজেরিয়া), করেনটিন টলিসো (টোগো) বংশোদ্ভুত। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী এই তিন ফুটবলারও নিজ দেশে হয়ে বিশ্বকাপে খেলতে পারতেন। কিন্তু তারা এখন ফ্রান্সের নাগরিক। ফরাসিদের বিজয়েই তারা এখন সমর্পিত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন