গুলিস্তানে হকার উচ্ছেদ নিয়ে কত কিছুই না ঘটেছে। কিন্তু কোনো কিছুই শেষ পর্যন্ত হকারদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। এক ইঞ্চি জায়গা ছাড় না দিতে মেয়র সাঈদ খোকনের হুঁশিয়ারিও শেষ পর্যন্ত টিকল না। গুলিস্তানে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে হকারদের পসরা সাজিয়ে বসার সেই চিত্র আবার ফিরে এসেছে। হাতছাড়া হলো মেয়রের গুলিস্তান বিজয়।
২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে উচ্ছেদের পর হকারদের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবিলা করে বেশ কয়েক মাস গুলিস্তান দখলমুক্ত রাখতে পেরেছিলেন মেয়র। এরই মধ্যে মেয়র হিসেবে সাঈদ খোকন দায়িত্বের দুই বছর পূর্ণ হয়। তবে তার আগেই পুনর্দখল হয়ে যায় গুলিস্তান। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র সাঈদ খোকনের দুই বছর পূর্তিতে সাফল্যের বর্ণনা নিয়ে যে পুস্তিকা বের করা হয়, তাতে গুলিস্তান হকারমুক্ত করার সফলতার কথা আছে সবিস্তারে।
তাতে বলা হয়, মেয়র তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গুলিস্তান, মতিঝিল ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোসহ নিউ মার্কেটের ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করে দিলকুশা, নবাবপুর রোড, মতিঝিল আইডিয়ার স্কুল সংলগ্ন, সেগুনবাগিচা ও বায়তুর মোকাররম মসজিদ এলাকায় পাঁচটি হলিডে মার্কেট চালু করেছেন। এ ছাড়া পুনর্বাসনের লক্ষ্যে হকারদের তালিকা করে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য পরিচয়পত্র প্রবর্তনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন।
কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে গুলিস্তান, মতিঝিল ও নিউ মার্কেটের হকার উচ্ছেদ কার্যক্রম সেটা দেখার জন্য বৃহস্পতিবার মধ্যদুপুরে এই প্রতিনিধি প্রথমে যান রাজধানীর নিউমার্কেটে। ঠা ঠা রোদে দেখাই মেলেনি কোনো হকারের। এই চিত্র দেখার পর মনে হয়েছিল ডিএসসিসির পুস্তিকার সাফল্যের ছবি ঠিকই আছে।
গুলিস্তানের অবস্থা দেখার জন্য নিউমার্কেট থেকে চড়ে বসি গুলিস্তানের বাসে। বাস থেকে নেমে সরেজমিনে দেখা যায় গুলিস্তানের মোড় থেকে গোলাপশাহ্ মাজার রোড পর্যন্ত হকাররা সড়কে বসে তাদের পণ্য বিক্রির জন্য ডাকাডাকি করছেন। পুরো গুলিস্তানের ফুটপাত ও সড়কের অর্ধেকের বেশি দখল করে বসানো হয়েছে কাপড়, জুতা, ফলসহ নানা পণ্যের বাজার। রাস্তার দুই পাশসহ ফুটপাতের অংশ পর্যন্ত দখল হয়ে গেছে। আগের মতোই গুলিস্তানে দখল বজায় রেখেছেন ভ্রাম্যমাণ হকাররা।
বারবার উচ্ছেদের পরও কেন সড়কে বসে আছেন- জানতে চাইলে জুতা ব্যবসায়ী আক্কাস আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাগো বসার জায়গা দেক, তাইলেই আমরা উইঠ্যা যামু। যতদিন না এইডা দিতে পারবেন ততদিন এইখানেই বমু। এইখানে বই অনেক বছর থেকে, হুট কইরা কইলেই উইঠা যাইতে হইব। এইখানে বইয়া পেট চালাই, বাড়িতে পোলা-মাইয়ে খাওনের কয়ডা টাকা পাঠাইতে পারি।’
আরেক ব্যবসায়ী মুন্সি তরফদারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে একটু রেগেই যান তিনি। বিড়বিড় করেন নিজের মনে। খানিকটা সময় পর বলেন, ‘সবাই মিল্লা আমাগো পেটে লাথি মারতে চান। সরকার আমাগো কার্ড নিছে বিদেশ পাডাইবো, অমুক দিব তমুক দিব। সবই মিচা কতা।’
গুলিস্তানে উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে একাধিকবার। সবশেষ অভিযান হয় গত বছরের ২৭ অক্টোবর। এত অভিযান আর মেয়রের হুঁশিয়ারির পরও কেন দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না-এমন প্রশ্নের জবাবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সরকার থেকে পুলিশকে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সড়কের দখল উচ্ছেদ করার দায়িত্ব পুলিশের, তারা যদি উচ্ছেদ না করে আমরা আর কী করব? আমরা তো আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। সরকার থেকে উচ্ছেদের ব্যাপারে আন্তরিকতা পাওয়া যাচ্ছে না।’
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন