দেশের ৭টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটের লড়াই হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে জনমত যাচাইয়ের এসিড টেস্ট। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত ৫ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনমত যাচাইয়ে বিএনপি ছক্কা হাঁকিয়েছিল। বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের জাঁদরেল সব প্রার্থীদের বিএনপির অপেক্ষাকৃত আনকোরা প্রার্থীরা পরাজিত করেছিলেন। পরবর্তীতে বিএনপির নির্বাচিত মেয়ররা দলের হটকারী লাগাতর হরতাল অবরোধের সহিংসতা ও সংগঠিত আগুন সন্ত্রাসের মামলায় পরে নগরভবনে আর বসতে পারেননি। কখনো বরখাস্ত হয়েছেন, কখনো উচ্চ আদালতের রায়ে পুর্নবহাল হয়েছেন। কিন্তু নগরবাসীর নির্বাচিত নেতা হিসাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ আর কপালে জুটেনি। এই সুযোগে সিটি কর্পোরেশনগুলোতে কোথাও প্যানেল মেয়র, কোথাও বা প্রধান নির্বাহী একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগ করেছেন।
এবার অতীতের বিপর্যয় থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জয়ের আশায় শক্তিশালী প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছে। অনেককে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে। মাঠে নেমে গেছেন তারা। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই জানেন, আগামীতে জাতীয় নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ। এক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী ফলাফল সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। যে দল জয় লাভ করবে, জনমত তাদের অনুকূলেই যাবে। আগামী বছরের শুরুতে অথবা এ বছরের শেষদিকে ৭টি সিটিতে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সিলেটে সাবেক মেয়র বদরুদ্দীন আহমদ কামরানকেই সবুজ সংকেত দিয়ে মাঠে নামিয়েছে। মেয়র পদে তিনি হেভিওয়েট প্রার্থীও। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকেই মনোনয়ন দেবে। আরিফ বিপুল ভোটে জিতলে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি, মাঝখানে জেল খেটেছেন অনেকদিন।
রাজশাহীতে সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা খায়রুজ্জামান চৌধুরী লিটনকেই দল মনোনয়ন দিচ্ছে। লিটন রাজশাহীকে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে এক আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন নগরীতে পরিণত করেছিলেন। জাতীয় রাজনীতির প্রভাবে ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের শিথিলতায় পরাজিত হলেও তার বিকল্প নেতৃত্বও সেখানে সেই। বিএনপি এখানে বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকেই মনোনয়ন দিচ্ছে। বুলবুল জনপ্রিয়ই নন, মেয়র হবার পর কখনো জেল, কখনো পলাতক, কখনো বা বরখাস্ত হয়েছেন। আদালতের রায়ে তিনিও পুর্নবহাল হয়েছেন।
খুলনায় আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক মেয়র ও প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক এখন সংসদ সদস্য। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয়ও হলেও সংসদ সদস্য পদ ছাড়িয়ে তাকে মনোনয়ন দিতে নারাজ দলের হাই কমান্ড। এখানে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলকে মনোনয়ন দেয়ার কথা ভাবছে। দলের ভিতরে-বাইরে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিএনপি এখানেও বিগত নির্বাচন বিজয়ী মনিরুজ্জামান মনিকেই মনোনয়ন দিচ্ছে। তিনিও মামলার জালে আটকা পরে নগরভবন থেকে নির্বাসিত ছিলেন।
বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন এবং তারপুত্র সাদেক আবদুল্লার মধ্যে একজনকে মনোনয়ন দেয়ার কথা ভাবছে। এক্ষেত্রে বয়স, অভিজ্ঞতা এবং দীর্ঘদিন রাজনীতিতে পুর খাওয়া আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন। বিএনপি বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামালকেই মনোনয়ন দিতে যাচ্ছে। নিয়তির খড়গ তার ওপর নেমেছিল।
গাজীপুরে বিগত নির্বাচনে বিএনিপর অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের সঙ্গে বিপুল ভোটে হেরেছিলেন এ্যাড. আজমত উল্লাহ। সেই সময় নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থী এ্যাড. জাহাঙ্গীর আলমের প্রতি সমর্থন দিলেও দলের হাইকমান্ডের হস্তক্ষেপে জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ্যাড. জাহাঙ্গীর আলমকেই মনোনয়ন দিচ্ছে। রাজনীতির বাইরে বিভিন্ন মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম দলের বাইরেও নিজের একটি বিশাল ভোটব্যাংক তৈরি করেছেন, ঈর্ষনীয় ইমেজ দাঁড় করিয়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে কাজ করে যাচ্ছেন। বিএনপি বর্তমান মেয়র অধ্যাপক আব্দুল মান্নানকেই মনোনয়ন দিচ্ছে। দীর্ঘসময় তিনিও কারাদহন ভোগ করেছেন, বরখাস্ত হয়েছিলেন।
রংপুরে শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর মেয়র রয়েছেন। তবে এখানে মনোনোয়ন নিতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা রাশেক রহমান। তবে জাতীয় পার্টি শেষপর্যন্ত যাকে মনোনয়ন দিবে তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের লড়াই হবে। এখানে এরশাদই প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।
ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র রয়েছেন তরুণ নেতা ইকরামুল হক টিটু। অনেকে তাকে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানালেও আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড নতুন সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচনে তাকেই মনোনয়ন দিচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইমরান সালেহ প্রিন্স।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন