ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, ‘আমার মা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। বৃদ্ধা বয়সে মায়ের অসহনীয় কষ্ট, যন্ত্রণা আর বিভৎস চেহারা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। তাই এই রোগে আক্রান্ত নগরবাসীর দুঃখ-কষ্টের ব্যাথা বুঝি।’
শনিবার দুপুরে ডিএসসিসি নগর ভবন চত্বরে চিকুনগুনিয়া নিয়ে সচেতনতামূলক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধনকালে মেয়র এসব কথা বলেন।
চিকুনগুনিয়া রোগ ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে মেয়র খোকন বলেন, ‘চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের দুঃখ আমি অনুভব করি। যে চিকুনগুনিয়া আমার মা এবং নগরবাসীকে কষ্ট দিচ্ছে, তাকে নির্মূল করেই ছাড়ব। তাই ঘোষণা দিচ্ছি আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ আনা হবে। কিন্তু এরপরও এই রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা রয়েছে। যার ফলে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে চলমান কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে।’
মেয়র বলেন, ডিএসসিসির প্রতিটি আঞ্চলে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। জনগণের স্বার্থে ডিএসসিসির সকল কর্মচারীর সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সবার আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করা হচ্ছে। জনগণকে পাশে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।
খোকন বলেন, গত ২১ মে’র আগেও চিকুনগুনিয়া রোগ সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম চিকুনগুনিয়া রোগের ভয়াবহতা। গত ২১ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে চিকুনগুনিয়া রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আরোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, এবার পবিত্র রমজান মাসেও চিকুনগুনিয়ার বিরুদ্ধে ডিএসসিসির কর্মসূচি ছিল। এই রোগের মোকাবেলায় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। নাগরিকদের সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। ডিএসসিসির কর্মীবাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নগরবাসীর বাড়ির ভেতরে গিয়েও মশা মারতে হবে।
মেয়র বলেন, ১৪ জুলাই ৩/৪ সপ্তাহের মধ্যেই ডিএসসিসি এলাকায় চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে ডিএসসিসির হট লাইন চালু করা হয়েছে। ২১ জুলাই রাত ১০টা পর্যন্ত ৩১ হাজার ৮৫৬টি ফোন এসেছে নাগরিকদের কাছ থেকে। এরমধ্যে ২২ হাজার ১১২ জন নাগরিক পরামর্শ ও ওষুধের জন্য ফোন করেছেন। ডিএসসিসি এলাকার এক হাজার ৪৩০ জন নাগরিক ফোন করেছেন, তথ্য, চিকিৎসা সেবা ও ওষুধের জন্য। দেশের বিভিন্ন এলাকা ও দেশের বাইরে থেকেও এই ফোন কল এসেছে, তারা রোগটি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেন, ৩৩৬ জনের কাছ থেকে সরাসরি চিকিৎসার জন্য ফোন এসেছে। এর মধ্যে ১৬৬ জন রোগীকে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরামর্শ চেয়েছেন ১২৮ জন। এছাড়া ৩৭ জনকে কল ব্যাক করে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মেয়র বলেন, মিডিয়ার গঠনমূলক সমালোচনা আমাদেরকে চাপে রেখেছে। আমরা মিডিয়ার সমালোচনা গ্রহণ করে নতুন করে উদ্যোগ গ্রহণ করি।
আমি আবার বলছি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশা মারা হবে। এই কাজে দুর্বলতা কিংবা ঘাটতি থাকলে তুলে ধরুন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালে আমি এই শহরের প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের হাত ধরে ভোট ভিক্ষা করেছি। এখন তাদের সেবা দেয়া আমার নৈতিক দায়িত্ব।
উদ্বোধন শেষে মেয়রের নেতৃত্বে বের হয় এক বিশাল র্যালি। এতে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের কিভাবে মশারীর ভেতরে রাখতে হবে সেটাও দেখানো হয়েছে। অর্ধশত ট্রাক চিকুনগুনিয়ার ব্যানার, পোস্টার, চিকুনগুনিয়ার প্রতিছবি, কাটুন, বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি গাড়িতে মশা মারার জন্য ফগিং মেশিনও স্থাপন করা হয়েছিল।
র্যালিটি নগর ভবন থেকে শুরু করে গুলিস্তান, জিপিও, পুরানা পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব, শিক্ষা ও প্রকৌশল ভবনের সামন দিয়ে সোজা বঙ্গবাজার মোড় হয়ে পুনরায় নগর ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
jamunanews24
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন