বনানীর ১১ নম্বর সড়কে পাউবো অফিসার্স কোয়ার্টার্স মসজিদে বাইরের মুসল্লিদের গাড়ি প্রবেশ নিষেধ; ইনসেটে গেটে ঝুলানো কর্তৃপক্ষের নোটিশ :নয়া দিগন্তবনানীর ১১ নম্বর সড়কে পাউবো অফিসার্স কোয়ার্টার্স মসজিদে বাইরের মুসল্লিদের গাড়ি প্রবেশ নিষেধ; ইনসেটে গেটে ঝুলানো কর্তৃপক্ষের নোটিশ :নয়া দিগন্ত
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বনানী অফিসার্স কোয়ার্টার জামে মসজিদে নামাজিদের গাড়ি প্রবেশে বাধা দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এতে চরম অসুবিধায় পড়েছেন মসজিদে আসা অসুস্থ ও বয়স্ক মুসল্লিরা। তারা অভিযোগ করেছেন, প্রবেশ গেট থেকে মসজিদ বেশ দূরে হওয়ায় অসুস্থ ও বয়স্কদের হেঁটে যেতে অসুবিধায় পড়তে হয়। এতে অনেকে নিয়মিত মসজিদে আসতে পারছেন না। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি এটি তাদের নিজস্ব মসজিদ এবং আবাসিক এলাকা হওয়ায় মুসল্লিদের গাড়ি নিয়ে ঢুকতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
বনানী-১১ নম্বর রোডের গুলশান-বনানী লেক পাড়ে সুবিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বনানী অফিসার্স কোয়ার্টার। এখানে আবাসিক এলাকার পাশাপাশি রয়েছে একটি খেলার মাঠ ও টেনিস কোর্ট। এ ছাড়া মহিলা সমিতি অফিসও রয়েছে এর মধ্যে। এর পাশাপাশি বনানী-১১ নম্বর রোড ঘেঁষে রয়েছে একটি দ্বিতল জামে মসজিদ। আশপাশের এলাকাবাসীর নামাজ আদায়ের একমাত্র মসজিদ এটি। মসজিদের বনানী-১১ নম্বর রোড-সংলগ্ন সীমানায় একটি গেট বেশ কিছু দিন ধরে নির্মাণাধীন রয়েছে। এ কারণে পেছনের দূরবর্তী একটি গেট দিয়ে প্রবেশ করতে হয় মুসল্লিদের। গেট পার হয়ে বেশ খানিকটা পথ পার হয়ে যেতে হয় মসজিদে। অভিজাত এলাকার এ জামে মসজিদে দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি, স্বনামধন্য কোম্পানির মালিক, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ নামাজ আদায় করেন। কিন্তু মুসল্লিরা অভিযোগ করেছেন এটি জামে মসজিদ হলেও এখানে নামাজিদের আসায় কৌশলে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিশেষ করে মসজিদ এলাকায় কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এতে দীর্ঘ দিন থেকে গাড়িতে যাতায়াত করে অভ্যস্ত বিশিষ্ট ব্যক্তি, অসুস্থ ও বয়স্করা বেশ অসুবিধার শিকার হচ্ছেন। গেট থেকে মসজিদ বেশ খানিক দূরে হওয়ায় গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যেতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। অনেক প্রবীণ ব্যক্তি রয়েছেন যাদের পায়ে ও কোমরে ব্যথা রয়েছে তারা বেশি সমস্যায় পড়ছেন। অনেক কষ্ট করে লাঠি অথবা অন্য লোকের কাঁধে ভর দিয়ে তাদের মসজিদে যেতে হচ্ছে। এ কারণে অনেকে নিয়মিত মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারছেন না। সরেজমিনে দেখা যায়, কোয়ার্টারের প্রবেশ গেটে বাঁশ বাঁধা রয়েছে। দুই-তিনজন আনসার সদস্য এটির তদারক করছেন। গেটের এক পাশে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়েছে, কোয়ার্টারের বাইরের নামাজিরা গাড়ি নিয়ে গেটের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। এ ছাড়া আজানের আগে প্রবেশ না করতে এবং নামাজের পরপরই বের হয়ে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মসজিদ এলাকার বাসিন্দা ডা: কবির আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এরা অসুস্থ মানুষকেও গাড়ি নিয়ে ঢুকতে দেয় না। অনেক বয়স্ক লোক আছেন যাদের পায়ে ব্যথা তারা কিভাবে হেঁটে যাবেন তারা তা বঝুতে চায় না। বরং গেটের আনসাররা মুসল্লিদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। এত বড় একটি মাঠ থাকার পরও তারা এখানে জানাজার নামাজও পড়তে দেয় না।
নর্থ বেঙ্গল সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আর এম ফজলে হাসানের বয়স ৭২ বছর। তিনি বলেন, আমি বয়স্ক মানুষ, গাড়ি নিয়ে চলতে অভ্যস্ত। কিন্তু পাউবো কর্তৃপক্ষ আমাদের গাড়ি নিয়ে ঢুকতে দেয় না। এতে অনেকখানি হেঁটে আসতে সমস্যা হয়।
মসজিদের মুসল্লি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, এটি একটি জামে মসজিদ। আর জামে মসজিদ হলে তাতে জনগণের অধিকার জন্মে। এখানে নামাজও পড়েন এলাকার বাসিন্দারাই বেশি। কিন্তু পাউবো কর্তৃপক্ষ এলাকার নামাজিদের কোনো মূল্যই দিতে চায় না। এ মসজিদে এলাকার মানুষ দান খয়রাত করে। কিন্তু এ টাকা কোথায় যায় তা আমরা জানি না। মসজিদের কমিটিতে এলাকার মানুষকে রাখা হয় না।
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, জুমার নামাজের সময় কোয়ার্টারের বাইরে থেকে আসা মুসল্লিদের গাড়ি বাইরে রেখে তারপর মসজিদে যেতে হচ্ছে। অসুস্থ ও বয়স্ক লোকও এ হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। বাইরে ৩০টির মতো গাড়ি থাকতে দেখা যায়। তবে রফিকুল ইসলাম নামে একজন কৌশলে মসজিদ এলাকায় প্রাইভেট কার নিয়ে ঢুকে পড়েন। পরে নামাজ শেষে বের হওয়ার পর কর্তব্যরত আনসাররা তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচারণ করেন। এ সময় রফিকুল ইসলামের সঙ্গীরা তাদের কিছু টাকা দেয়ার চেষ্টা করলেও তারা তা নেননি।
মুসল্লিরা বলেন, কোয়ার্টারের মধ্যে একটি খেলার মাঠ রয়েছে। এটি প্রতিদিন ১৫-২৫ হাজার টাকা ভাড়া দেয়া হয়। তখন তাদের গাড়ি ঢুকতে দেয়া হয়। কিন্তু মুসল্লিদের গাড়ি ঢুকতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।
গত শুক্রবার মাঠটি ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়া হয় সুবাস্তু ডেভেলপার লিমিটেডকে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক রেজাউল করিম সিরাজীর গাড়িচালক আলমগীর হোসেন কোয়ার্টারের মধ্যেই গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করেন। তিনি জুমার নামাজের সময় মসজিদের সামনের রাস্তায় গাড়ি রাখেন। আলমগীর হোসেন জানান, মাঠটিতে আমরা প্রায়ই খেলতে আসি। বিশেষ করে জানুয়ারি মাসে কোম্পানির লিগ চলে এখানে। তখন প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হয়।
মুসল্লিরা বলেন, মসজিদ আল্লাহর ঘর। এটি ইবাদত-বন্দেগির জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি কোয়ার্টারের মধ্যে হলেও ৯৫ ভাগের বেশি মুসল্লি বনানী এলাকার। এ জন্য এটি স্থানীয় মুসল্লিদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া উচিত। তারা আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোয়ার্টার আছে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু আমাদের দাবি খেলার মাঠটি সিটি করপোরেশনের অধীনে দিয়ে এটিকে একটি উন্নত পার্ক করা। তাহলে সকাল-বিকেল এলাকার বয়স্করা যেমন পার্কটিতে হাঁটতে পারবেন তেমনি শিশুরাও এখানে বিনোদনের উপযুক্ত পরিবেশ পাবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) মহাপরিচালক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী মো: মাহফুজুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, এটি আবাসিক এলাকা হওয়ায় সব মুসল্লিকে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। প্রায় ৫০-৬০টি গাড়ি আসে, ভেতরে সব গাড়ি ধরার মতো জায়গাও নেই। তবে অসুস্থদের গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়া হয় বলে তিনি জানান। মাহফুজুর রহমান বলেন, নামাজ পড়তে কোনো বাধা নেই, তবে গাড়ি প্রবেশের বিধিনিষেধ সওজ, টিঅ্যান্ডটি, ক্যান্টনমেন্টসহ সব আবাসিক এলাকাতেই রয়েছে। আমরা সে কারণে বিধিনিষেধ দিয়েছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন