কিছুদিন আগেও ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিন চোখে পড়েছে। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেল ডাস্টবিন নেই। সিপাহিবাগ সড়কের পাশের ফুটপাতে লোহার লাঠি আছে, কিন্তু ডাস্টবিন নেই। কাঁঠালবাগান ঢালে ময়লার স্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে ডাস্টবিন। উল্টো দিকে ঘোরানো আছে ডাস্টবিন। হোটেল সোনারগাঁওয়ের উল্টো দিকের সড়কের ডাস্টবিনে ময়লার স্তূপ। সরানোর নাম নেই।
রাজধানীজুড়ে এমন নানা স্থানে ডাস্টবিনের অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ে। কোথাও ডাস্টবিন ছিল, এখন নেই। ফুটপাত সংস্কারের সময় ডাস্টবিন তুলে ফেলা হয়েছে, পরে আর বসানো হয়নি। কোথাও নেশাখোরেরা ডাস্টবিন তুলে নিয়ে গেছে। কোথাও ডাস্টবিন আছে, কিন্তু ময়লা রাস্তায় ফেলছে পথচারীরা। আবার কোথাও ময়লা জমে আছে, কিন্তু সিটি করপোরেশন সঠিক সময় অপসারণ করছে না।
লোহার দণ্ড আছে, ময়লার পাত্র নেই। ছবিটি মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচ থেকে তোলা। ছবি: আবদুস সালামগত কয়েক দিনে রাজধানীর ফার্মগেট, গ্রিন রোড, সিপাহিবাগ, কাঁঠালবাগান, আজিমপুর, মহাখালী, মিরপুর, কারওয়ান বাজার, জনসন রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে। কাঁঠালবাগান এলাকায় দেখা গেল, এক পথচারী চিপস খেয়ে রাস্তায়ই প্যাকেট ফেলছেন। কিন্তু এক হাত দূরেই রয়েছে একটি ডাস্টবিন। জানতে চাইলে কিছুটা লজ্জা পেয়ে ওই পথচারী বললেন, ‘ভাই, ডাস্টবিন চোখে পড়েনি।’ আবার কারওয়ান বাজারের পাশের এক ডাস্টবিনে ময়লার স্তূপ জমেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তা অনেক দিন অপসারণ করা হয়নি। স্থানীয় এক চায়ের দোকানদার বললেন, ‘কাউকে তো ময়লা নিতে দেখি না। অনেক দিন হলো ময়লা জমে আছে।’
সিপাহিবাগে উল্টে গেছে ময়লার পাত্র। ছবি: আবদুস সালামখোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় চার কোটি টাকা খরচ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৫ হাজার ৭০০টি ও ৬৮ লাখ টাকা খরচ করে উত্তর সিটি করপোরেশন নগরের ফুটপাতে এক হাজার ডাস্টবিন বসায়। যেসব স্থানে মানুষের ভিড় বেশি, সেসব স্থানে ১৫০ মিটার পরপর ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। আর যেসব স্থানে জনসমাগম তুলনামূলক কম, সেসব স্থানে আপাতত ডাস্টবিন বসানো হয়েছে ৩০০ মিটার পরপর।
কাঁঠালবাগান এলাকায় উল্টে গিয়ে ভাগাড়ের নিচে পড়েছে ময়লার পাত্র। ছবি: মোছাব্বের হোসেনদুই মেয়রের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়তে এসব ডাস্টবিন বসানোর উদ্যোগটি ছিল প্রশংসনীয়। কিন্তু কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হলেও রয়েছে অব্যবস্থাপনা। ফলে দুই সিটির রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনার ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।
আবার রাস্তার পাশে যেসব ডাস্টবিন আছে, সেগুলোয় লোকজনকে খুব একটা ময়লা ফেলতে দেখা যায় না। হাতের নাগালেই ডাস্টবিন থাকলেও লোকজন যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। নগরবিদেরা বলছেন, পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়তে সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগ সফল করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতার।
উল্টে পড়ে আছে ময়লার পাত্র। জনসন রোড থেকে ছবিটি তুলেছেন আবদুস সালামনগরজুড়ে ময়লার পাত্রের নানা অব্যবস্থাপনা কথা স্বীকার করলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মাদ বিলাল। পাশাপাশি নগরবাসীর অসচেতনতাকেও দায়ী করলেন তিনি।
তবে অনেক স্থানে ময়লা ফেলার পাত্র চুরি ও নষ্ট হওয়ার পর সিটি করপোরেশনের কী করণীয়, তা জানতে চাইলে খান মোহাম্মাদ বিলাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন ডাস্টবিনগুলো রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগ দিচ্ছি। এগুলো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ ডক ইয়ার্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। যেসব ময়লার পাত্র নষ্ট বা চুরি হয়ে গেছে, সেখানে তারা বিনা মূল্যে ময়লার পাত্র বসিয়ে দেবে।’ এগুলোর সঠিক ব্যবহারে নগরবাসীকে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন