রাজধানীতে অবাধে চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, শুধু ঢাকাতেই ৩০০ টি বড় এবং ৭০০ টি ছোট মাদকের স্পট রয়েছে। এসব বন্ধে যাদের কাজ করার কথা সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যকে মাদক কিনতেও দেখা গেছে। কিছুক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পৃষ্ঠপোষকতাও পায় মাদক ব্যবসায়ীরা।
কারওয়ান বাজার বস্তি। অনেকেই জানেন এখানে চাইলেই মাদক কেনা যায়। কিন্তু সময় সংবাদের কাছে খবর ছিলো এখানে নাকি সকাল হলেই 'মাদকের হাট' বসে। পরিচয় গোপন করে শুধু রেল লাইন ধরে হেঁটেই এমন কথার সত্যতা মিললো।
এখান থেকে মাদক কিনে নামার পথে মাঝে মাঝে পুলিশ তল্লাশি করলেও বিক্রেতারা বিক্রি করছে অবাধে।
অভিযোগ আছে, পুলিশের কিছু সদস্যের যোগসাজগেই চলে মাদক কেনাবেচা। প্রায় ঘণ্টা তিনেক নজর রাখার পর দেখা গেলো গাঁজা কিনছেন পুলিশেরই সদস্য।
অবশ্য তার ব্যাখ্যা ভিন্ন, তার দাবি নজরদারি করতেই তিনি এখানে এসেছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও জড়িও এমন অবৈধ কাজে।
এমনকি বড় আকারের ইয়াবার দাম নিয়ে ছোট আকারের ইয়াবা গছিয়ে দিয়ে বোকা বানাতেও শিখে গেছে এসব শিশু।
রাজধানীর যেসব পথ দিয়ে মাদক ঢুকছে তার অন্যতম টঙ্গী। টঙ্গী বাজারের নাজিম প্লাজা। দিনে দুপুরেই মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় দেখা যাবে ফেন্সিডিলের বোতল পড়ে আছে যেখানে সেখানে। এখানেও শিশুরা জড়িত খুচরা বিক্রিতে।
উত্তরা ও গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় দামি গাড়িতে করে বিক্রি হয় মাদক দ্রব্য। মাঝে মাঝে এসব বন্ধে অভিযান চলে তবে চুনোপুঁটিরা ধরা পড়লেও রাঘব বোয়ালেরা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০১১ সালে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে মাদক আইনে মামলা হয় প্রায় ৩৮ হাজার। সেখানে গত বছর মামলা সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৭০ হাজারে। অর্থাৎ দিনদিনই বাড়ছে মরণ নেশার ব্যবহার এবং এর সঙ্গে জড়িতদের সংখ্যা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বলেন, 'আমরা অভিযান পরিচালনা করলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত মানুষেরা অনুরোধ করে ছেড়ে দেয়ার জন্যে।কিন্তু বড় পর্যায় থেকে এখন পর্যন্ত তদবির আসেনি। বড় মাদকের স্পট ২০০ থেকে ৩০০ টি। আর সমগ্র ঢাকা শহরে মোট ৬০০ থেকে ৭০০ মাদকের স্পট রয়েছে।'
আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বলছে, ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশে মাদকের ঝুঁকি সব সময়ই ছিলো, তবে তারা তৎপর রয়েছেন। এক্ষেত্রে বাহিনীর কোনো সদস্যের গাফিলতি সহ্য করা হবে না বলে জানান তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, 'আমরা চাইনা মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবীদের সঙ্গে পুলিশের কোন সংশ্লিষ্টতা থাকুক। যদি এমন তথ্য পায় আমরা তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।'
তার মতো অনেকেরই মত, মাদকের গ্রাস থেকে সমাজকে বাঁচাতে হলে শুধু পুলিশি তৎপরতা নয় প্রয়োজন পারিবারিক ও নৈতিক শিক্ষা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন