জাপানি স্টাইলে ব্লকভিত্তিক পুরান ঢাকা গড়ার পাইলট প্রকল্পে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। পুরান ঢাকার বংশালে এই পাইলট প্রকল্প শুরু হওয়ার কথা ছিল।
এ লক্ষ্যে শনিবার নগর ভবনে বংশাল পাইলট প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে সম্ভাবতা যাচাই নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
এতে প্রায় ৫০ জন জামির মালিক ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত জমির মালিকরা পাইলট এ প্রকল্পে অনাস্থা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা অন্য কোথাও করেন। ভালো হলে আমরা তখন আগ্রহ দেখাব। তারা বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে রাজউক অনেক খরচের সম্মুখীন হবে। এছাড়া পুরান ঢাকা অনেক উন্নত।
এসময় মেয়র মেয়র বংশালের পাইলট এ প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ডিএসসিসির ৭ একর খাস জমি রয়েছে নয়াবাজার ও ইংলিশ রোড এলাকায়। যা বেদখলে আছে। ডিএসসিসির ওই জমিতে রাজউকের আরবান রিডেভলপমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে রাজউক।
মতবিনিময় সভায় বংশাল এলাকার পঞ্চায়েত সভাপতি হাজী আওলাদ হোসেন, স্থানীয় বাসিন্দা হাজী রহমত উল্লাহ, হাজী নাসির উদ্দিন ও হাজী মোস্তফাসহ জমির মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভার শুরুতে আরবান রিডেভলপমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রজেক্টরের মাধ্যমে জানান, বিশ্বের অন্য সকল পুরানো ও ঘিঞ্জি এলাকা কিভাবে বদলে গেছে। এছাড়া পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় পাইলট প্রকল্পে কি ধরনের নাগরিক সুবিধা দেওয়া হবে।
তিনি জানান, প্রথমে ১০ দশমিক ২৭ একর জমির উপরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সেখানে একটি স্কুল, শিশু এবং বয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত স্থান, একটি মসজিদ স্থাপন করা হবে। এছাড়া মূল সড়ক ৪০ ফিট প্রস্থ এবং অভ্যন্তরীণ সড়ক ২০ ফিট প্রস্থ করা হবে।
বংশাল এলাকায় রাজউকের সার্ভের তথ্য তুলে ধরে এই প্রকৌশলী স্থানীয়দের জানান, প্রকল্প এলাকায় ৩০৯টি বিল্ডিংয়ের স্থানে ২৯টি উচু বিল্ডিং নির্মাণ করা হবে। ৩১৬টি দোকানের স্থানে ৭৬৮টি দোকান হবে।
প্রকল্পের পরিকল্পনা জানানোর পর স্থানীয়রা একের পর এক প্রশ্ন রাখেন রাজউক কর্তৃপক্ষের কাছে।
কেউ জানতে চেয়েছেন এক কাঠা জমির উপর ৫তলা বাড়ি। তারা ৫ ভাই ও ৫ বোন। এক্ষেত্রে অংশীদার কিভাবে দেবে রাজউক?
কেউ জানতে চান, যতদিন প্রকল্প চলবে ততদিন তার বাসা ভাড়া পাবে না, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এ সময় কি রাজউক তাদের খরচ চালাবে?
তবে এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি রাজউক কর্তৃপক্ষ।
মূলত স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় যখন রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, পাইলট এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রায় ২৫ বছর সময় লাগবে।
এর পর প্রকল্প পরিচালক বলেন, ৬ মাসের মধ্যে স্থানীয়দের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর করা হবে। ২ বছরের মধ্যে ফ্লাট হস্তান্তর করা হবে।
রাজউকের তরফ থেকে একই স্থানে দুই ধরনের তথ্য প্রকাশ করার পরেই স্থানীয়রা আস্থার সঙ্কটের প্রশ্ন তোলেন।
এদিকে সভার শুরুতে মেয়র বলেন, যে কোনো শহর বদলে যাওয়ার জন্য কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ বছর সময় দরকার। ঢাকা শহর দীর্ঘদিন ধরে আস্তে আস্তে পরিবর্তন হচ্ছে। তবে গ্রামীণ জীবন যাপনের থেকে রাজধানীতে জীবন যাপন অনেক খারাপ অবস্থায় রয়েছে। তবে আরবান প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কিছুটা চিত্র বদলে যাবে।
মতবিনিময় সভায় রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান, স্থানীয় ৩৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু সাঈদসহ প্রায় ৫০জন জমির মালিক উপস্থিত ছিলেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন