‘খুনির চিঠি’! একটি স্ট্যাটাসের শিরোনাম। নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জগলু চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে জগলু চৌধুরী এই স্ট্যাটাস দেন। দুই ঘণ্টার মধ্যে ৪১ জন এটি শেয়ার করেছেন। সরাসরি মন্তব্য করেছেন ৯৭ জন।
গত সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন ওমর মিয়াদ (২২)। সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিয়াদ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। টিলাগড়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা বালুচরে একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন মিয়াদ। তাঁদের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। এ ঘটনার পর গত বুধবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মিয়াদের বাবা মো. আকলু মিয়া। তোফায়েলসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই রাতে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
একজন সাবেক নেতা হিসেবে ছাত্রলীগে কোন্দল, খুন, কমিটি বিলোপ—এসব ঘটনা আপ্লুত করেছে জগলু চৌধুরীকে। সর্বশেষ মিয়াদ খুনের দায় নিজের কাঁধে নিয়ে ‘খুনির চিঠি’তে তিনি উল্লেখ করেছেন, ছাত্ররাজনীতি তথা ছাত্রলীগের নেতৃত্বের পর্যায়ে আদর্শহীন হয়ে পড়ার কথা। ওমর মিয়াদের উদ্দেশে জগলু লিখেছেন, ‘তোমাদের নির্মল নিখাদ আদর্শের কাছে আমরা বড়ই অসহায়, মিয়াদ। তোমাদের উদ্বেগহীন সুতীক্ষ্ণ চিত্ত আমাদের জং ধরা পিত্ত পুড়িয়ে ছাইভস্ম করে দেয়। তাই আমরা তোমাদের ক্ষুরধার আদর্শের কাছে পরাজিত হই, খুনের নেশায় হই প্রমত্ত।’
ছাত্রলীগের একটি পক্ষের হাতে ২০১০ সালে এমসি কলেজের মণিপুরি ছাত্র উদয়েন্দু সিংহ ওরফে পলাশ ও গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুম হত্যার বিষয়ে জগলু লিখেছেন, ‘মিয়াদ, আপাতত তুমি আমাদের শেষ টার্গেট ছিলে। অতীতে যেমনটি ছিল জাকারিয়া মাছুম, উদয় সিং এরা। হয়তো আগামী কোনো অঘ্রানে, নবান্নে কিংবা শীত-বসন্তে নতুন টার্গেট নিয়ে ফিরব আমরা। আবারও রক্তাক্ত হবে পিচঢালা গলিপথ, অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মল সবুজ ক্যাম্পাস! ফের খালি হবে আরেক অসহায় মায়ের কোল! জনমভর বিলাপ হবে নতুন পরিবারে!’
জগলু চৌধুরী সিলেট জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রায় এক দশক ছিলেন। ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পর ২০১০ সালের দিকে বিদায় নেন ছাত্ররাজনীতি থেকে। পরে জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক পদে ছিলেন। গত ৬ মার্চ সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর থেকে জগলু চৌধুরীর অবস্থান এখন অনেকটা রাজনীতির পর্যবেক্ষক হিসেবে।
গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ফেসবুকে দেখা গেছে, ‘খুনির চিঠি’ স্ট্যাটাস অসংখ্য শেয়ার ও মন্তব্যগুলোতে জগলু চৌধুরীর প্রতি সহমত প্রকাশ পেয়েছে। মন্তব্যে রয়েছে নানা রকম পরামর্শমূলক কথা ও ছাত্রলীগের রাজনীতির অতীত স্মৃতিচারণা। এক মন্তব্যে বলা আছে, জগলু চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন সময়ের কথা। মাহবুবুর রহমান চৌধুরী নামের একজন মন্তব্যে লিখেছেন, ‘ভাই! এর একমাত্র কারণ আমরা রাজনীতির মূল স্রোত থেকে হারিয়ে যাচ্ছি দিন দিন, আপনাদের আমলই ছিল ছাত্ররাজনীতির শেষ অধ্যায়।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন