গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা আবাসিক এলাকার অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করতে গেলেই সংশ্লিষ্টরা আদালতে মামলা করছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের এক হিসাবে দেখা যায়, অবৈধ হওয়ায় উচ্ছেদ করা হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় হাজার মামলা করেছেন। ফলে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংস্থা মিলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
এই উচ্ছেদ অভিযানের শুরুতে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, অ্যাট অ্যানি কষ্ট আবাসিক এলাকা থেকে অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। তাই প্রথমে এসব বাড়ির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্নের নোটিশ পাঠানো হয়। এরপরই শুরু হয় মামলা। ফলে দেড় বছরেও সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি। ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরার আবাসিক শ্রেণিতে নির্মিত স্থাপনা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বেশি।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত ১৮ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি, গুলশান ও উত্তরায় একযোগে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছিল রাজউক। যেসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল, তদারকির অভাবে সেগুলোতে আবার বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে।
তবে উদ্যোগ পুরোপুরি বিফলে গেছে তা মানতে রাজি নন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উচ্ছেদ করতে গেলেই তারা মামলা করে। মামলা করলে তখনই কিছু করার থাকে না, এটা ঠিক। তবে আমরাও বসে থাকব না। আমরা তা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছি। উচ্ছেদ করার পর তারা যদি আবার নতুন স্থাপনা দাঁড় করায়, আমরা সেটা আবার ভেঙে দেব।’
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, রাজধানীর আবাসিক এলাকায় বর্তমানে অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আছে ৩৭ হাজার ৫৮৬। এর মধ্যে ২০ হাজারের বেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে সরিয়ে নিতে নোটিশ দিয়েছিল রাজউক।
স্থানীয় সরকারসচিব আবদুল মালেক মামলার কারণে উচ্ছেদ অভিযানের ধীরগতির কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সব মামলা একসঙ্গে শুনানি করতে। এর আগে একসঙ্গে ২৩৭টি রিট পিটিশনের শুনানি হয়েছিল। তখন রিটকারীদের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে ১০ মাস সময় দেওয়া হয়। তবে এটা ঠিক, মামলা করলে গতি কিছুটা শ্লথ তো হয়ই।’
ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনুমোদন নেই এমন ১১২টি হোটেল ও ৬৪টি রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নতুন করে আর নবায়ন করা হচ্ছে না।
আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ছয়টি অননুমোদিত বার উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা নোটিশ পেয়েই হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলম বলেন, কোরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব, ক্যাডেট কলেজ ক্লাব, লেক শোর সার্ভিসেস লিমিটেড, কোরিয়া বাংলাদেশ লিমিটেড এবং অল কমিউনিটি ক্লাব—এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা মামলা করে। আর বেলজিত নামে একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
গণপূর্ত ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, অনেক ক্ষেত্রে আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত। রাজউকের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এর সঠিক বাস্তবায়ন। কিন্তু তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক কেন্দ্র, শপিং কমপ্লেক্স ইত্যাদি গড়ে ওঠায় শহরজুড়ে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন